আমার অনেক মুসলমান বন্ধু আছেন। এবং যেহেতু আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, এবং ইঞ্জিলের একজন অনুসারী, আমি আমার মুসলমান বন্ধুদের সাথে বিশ্বাস এবং আস্থা সম্পর্কে নিয়মিত আলোচনা করি। প্রকৃত অর্থে আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে প্রচুর মিল রয়েছে, যা ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা লোকদের যারা আল্লাহ্ কে বিশ্বাস করেন না, অথবা তাদের নিজেদের জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এমন বিশ্বাসকে খুজে থাকেন তাদের চেয়েও বেশি। তবুও প্রায়ই আমার আলোচনায় একটি ব্যতিক্রম দাবি শুনা যায় যে ইঞ্জিল(এবং যাবুর এবং তাওরাত যা পরিপূরণ করে আল কিতাব=বাইবেল) বিকৃত হয়েছে, বা পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে আমরা আজ যে বার্তাটি পড়ি তা হলো অধঃপতিত এবং ত্রুটিপূর্ণ, যা প্রথমে অনুপ্রানিত এবং লিখিত হয়েছিল নবীদের এবং আল্লাহর সাহাবীদের দ্বারা। এখন এটি আর কোনো ছোট দাবি নয়, কারণ এর অর্থ হলো আল্লাহর সত্য প্রকাশ করতে আমরা বাইবেল যেভাবে পড়ি সেভাবে বিশ্বাস করতে পারি না। আমি বাইবেল (আল কিতাব)এবং পবিত্র কুরআন উভয়ই পড়ি এবং চর্চা করি এবং সুন্নাহ অধ্যায়ন শুরু করেছি। আমি যেটি চমকপ্রদ মনে করি তা হ’ল বাইবেল সম্পর্কে সন্দেহের এই আত্মা যদিও আজ খুব সাধারণ, তবুও আমি এটি আল কুরআনে কোথাও পাই না। আসলে, পবিত্র কুরআন বাইবেলকে কতটা বেশী গুরুত্ব দেয় তা আমাকে সবচেয়ে বেশী চমকে দিয়েছে। আমি কী বলতে চাইছি তা সংক্ষেপে দেখাতে চাই।
কুরআন বাইবেল (আল কিতাব) সম্পর্কে কি বলে:
বলেদিন হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা কোন পথেই নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যে গ্রন্থ তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাও পুরোপুরি পালন না কর। আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে আপনার প্রতি যা অবর্তীণ হয়েছে, তার কারণে তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফর বৃদ্ধি পাবে।
সূরা আল মায়েদা ৫:৬৮ (মেজ) (আরো দেখুন ৪:১৩৬)
সুতরাং তুমি যদি সে বস্তু সম্পর্কে কোন সন্দেহের সম্মুখীন হয়ে থাক যা তোমার প্রতি আমি নাযিল করেছি, তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো যারা তোমার পূর্ব থেকে কিতাব পাঠ করছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট থেকে তোমার নিকট সত্য বিষয় এসেছে। কাজেই তুমি কস্মিনকালেও সন্দেহকারী হয়ো না।
সূরা ইউনুস ১০:৯৪ (যোনাহ)
আমি এটি লক্ষ্য করেছি, এটি ঘোষণা করে যে প্রত্যাদেশ যা দেওয়া হয়েছিল “কিতাবের লোকদের” (খ্রীষ্টিয়ান ও ইহুদী) তা আল্লাহ প্রদত্ত। এখন আমার মুসলিম বন্ধুরা বলছেন যে এটি আসল প্রত্যাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে যেহেতু আসলটি বিকৃত হয়েছে তাই এটি আজকের ধর্মগ্রন্থে প্রযোজ্য নয়। তবে ২য় অনুচ্ছেদ নিশ্চিত করে যে, যারা ইহুদী ধর্মগ্রন্থ পড়ছেন (বর্তমান কাল অতীত কাল নয়, যেমন “পড়েছিলেন”)। এটি আসল প্রত্যাদেশ সম্পর্কে বলছে না, কিন্তু এই গ্রন্থগুলি সেই সময়ের যখন আল কুরআন নাযিল হয়েছিল। এটি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে প্রায় ৬০০ খ্রীষ্টাব্দ পরবর্তি সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল। তাহলে এই অনুচ্ছেদ প্রমান করে ইহুদী ধর্মগ্রন্থ ৬০০ খ্রীষ্টাব্দে যেমন ছিল এখন তেমই আছে। অনান্য অনুচ্ছেদগুলিও একই রকম। বিবেচনা করুণঃ
আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে;
সূরা আন-নাহল ১৬:৪৩ (মেীমাছি )
আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।
সূরা আল আম্বিয়া ২১:৭ (নবীগন)
এগুলি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্ববর্তী প্রেরিতদের কথা বলে। তবে, গুরুতরভাবে তারা নিশ্চিত করে যে এই প্রেরিতদের/নবীদের দেওয়া আল্লাহর বার্তগুলি তাদের অনুসারীদের (৬০০ খ্রীষ্টাব্দে) কাছে এখনও বর্তমান। প্রত্যাদেশ সমূহ আদিতে যেভাবে নাজিল হয়েছিল নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়কালে তা বিকৃত হয়নি।
পবিত্র কুরআন বলে যে আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করা যায় না
তবে আরও শক্তিশালী অর্থে, এমনকি আল কিতাবের বিকৃতি/পরিবর্তন সম্ভাবনা পবিত্র কুরআন দ্বারা সমর্থিত নয়। স্মরণে রাখুন আল-মায়েদা ৫:৬৮ (শরীয়ত…সুসমাচার … আল্লাহর নিকট থেকে আগত প্রত্যাদেশ), এবং নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করুনঃ
আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।
সূরা আল আন-আম ৬:৩৪ (গবাদি পশু )
আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
সূরা আল আন-আম ৬:১১৫ (গবাদি পশু )
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
সূরা ইউনুস ১০:৬৪ (যোনা )
আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।
সূরা কাহফ ১৮:২৭ (গুহা )
সুতরাং, আমরা যদি একমত হই যে মুহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্ববর্তী নবীগনের উপর আল্লাহর প্রত্যাদেশ নাযিল হয়েছিল (যেমন মায়েদাহ্ ৫:৬৮-৬৯ এ বলেছেন), এবং পরবর্তিতে এই আয়াতগুলি যেহেতু বার বার খুব স্পষ্ট করে বলে যে কেউ আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে পারে না, তাহলে কীভাবে কেউ বিশ্বাস করতে পারেন যে তাওরাত, জাবুর এবং ইঞ্জিল (অর্থাৎ আল কিতাব = বাইবেল)মানুষের দ্বারা বিকৃত বা পরিবর্তন করা হয়েছিল? বাইবেল বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়েছে তা বিশ্বাস করার জন্য খোদ কুরআনকেই অস্বীকার করা হবে।
প্রকৃত পক্ষে, আল্লাহর নিকট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্যাদেশ বিচারের এই ধারণাটি অন্যেদের থেকে ভালো বা খারাপ যদিও বাপকভাবে বিশ্বা্স করা হয়, তবে এটি কুরআনে সমর্থিত নয়।
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।”
সূরা ২:১৩৬ আল-বাকারা (গরু) (আরো দেখুন ২:২৮৫ )
সুতরাং প্রত্যাদেশ সমূহকে বিচারের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য থাকা উচিত নয়। এটি আমাদের অধ্যয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্য কথায়, আমাদের উচিত সকল কিতাব সমূহ অধ্যয়ন করা। আসলে আমি মুসলমানদের বাইবেল অধ্যয়নের সাথে সাথে খ্রীষ্টিয়ানদের কুরআন অধ্যয়ন করার আহ্বান জানাই।
এই বইগুলি অধ্যয়ন করতে সময় এবং সাহস লাগে। অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। নবীগন যে সমস্ত কিতাব প্রকাশ করেছেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহন করার জন্য – নিশ্চয়ই পৃথিবীতে এটি আমাদের সময়ের সার্থক ব্যবহার হবে । আমি জানি যে আমার পক্ষে, যদিও পবিত্র কিতাব সমূহ অধ্যয়ন করতে আমার অনেক সময় এবং সাহস লেগেছে, এবং এটি আমার মনে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তবুও এটি একটি ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা এবং এতে আমার উপর আল্লাহর নেয়ামত অনুভব করেছি। আমি আশা করি আপনি এই ওয়েবসাইটটির কিছু নিবন্ধ এবং শিক্ষাসমূহ জানতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবেন । বোধ হয় শুরু করার জন্য ভাল হবে, যদি হাদীস সমূহ এবং হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) তাওরাত, জবুর এবং ইঞ্জিল সম্পর্কে কি ভাবেন এবং ব্যবহার করেন সে সম্পর্কিত নিবন্ধটি থেকে শুরু করা যায় (যে বইগুলি কিতাব পরিপূরণ করে = বাইবেল)। এই নিবন্ধটির লিংক এখানে। সমস্ত প্রাচীন কিতাব সমূহের নির্ভরযোগ্যতা কীভাবে নিরূপিত করা হয়েছে, বিজ্ঞানসম্মত এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাইবেলকে বিশ্বাসযোগ্য বা বিকৃত বলে বিবেচনা করা হয় কিনা সে বিষয়ে আপনার যদি বৈজ্ঞানিক আগ্রহ থাকে তবে এই নিবন্ধটি দেখুন।