সূরা আল-মু’মিন (সুরাহ 40 – ক্ষমাদাতা) শিক্ষা দেয় যে আল্লাহ ক্ষমা করেন
যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবাহ কবূলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা, বড়ই অনুগ্রহশীল, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে। যারা ‘আরশ বহন করে আছে, আর যারা আছে তার চারপাশে, তারা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করে আর তাঁর প্রতি ঈমান পোষণ করে আর মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দিয়ে সব কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছ, কাজেই যারা তাওবাহ করে ও তোমার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা কর, আর জাহান্নামের ‘আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা কর।
সূরা আল-মু’মিন ৪০:৩,৭
সূরা আল হুজরাত (সুরা ৪৯ – ঘর সমূহ) আমাদের বলে এই করুণা পেতে একে অপরের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে
মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই, কাজেই তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি-সমঝোতা স্থাপন কর, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা দয়া প্রাপ্ত হও।
সুরাহ আল-হুজুরাত ৪৯:১০
ঈসা আল মসীহ আল্লাহর থেকে ক্ষমা সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন, এবং এছাড়া এটিকে একে অপরকে ক্ষমা করার সাথে সংযুক্ত করেছেন I
অন্যদের ক্ষমা করার উপরে ঈসা আল মসীহ
বিশ্বের খবরগুলো আমার দেখার সাথে সাথে এটি মনে হয় যে রক্তপাত এবং হিংসা চতুর্দিকে বাড়ছে I আফগানিস্তানে বম ফেলা, লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক জুড়ে লড়াই, পাকিস্তানের হত্যাকান্ড, তুর্কীতে দাঙ্গা, নাইজেরিয়াতে অপহরণ, পলেস্তিয়ান এবং ইস্রায়েলের সাথে যুদ্ধ, কেনিয়াতে শহরের নৃসংশ হত্যাকান্ড – এবং এগুলোকে আমি খারাব খবরগুলো অনুসন্ধান না করে শুনেছি I তার উপরে আমরা বহু অন্যায় ক্ষত ও অভিযোগ একে অপরের উপরে চাপিয়ে দিয়েছি যা খবরের শিরোনাম হয় না – তবে যা আমাদের তবুও আঘাত করে I প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণের এই দিনে ক্ষমার বিষয়ে ঈসা আল মসীহর শিক্ষার সর্বাধিক গুরুত্ব রয়েছে I একদিন তার শিষ্যরা জিজ্ঞাসা করল কতবার তাদের ক্ষমা করা উচিত I এখানে ইঞ্জিল থেকে বিবরণটি রয়েছে I
21তখন পিতর যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, আমার ভাই কতবার আমার বিরুদ্ধে অপরাধ করলে আমি তাকে ক্ষমা করব? সাতবার পর্যন্ত?”
22যীশু উত্তর দিলেন, “আমি তোমাকে বলছি, সাতবার নয়, কিন্তু সত্তর গুণ সাতবার পর্যন্ত।
23“এই কারণে স্বর্গরাজ্য এমন এক রাজার মতো, যিনি তাঁর দাসদের কাছে হিসেব চাইলেন। 24হিসেব নিকেশ করার সময় একজন দাস, যে তাঁর কাছে দশ হাজার তালন্তের ঋণী ছিল, তাকে নিয়ে আসা হল। 25যেহেতু সে ঋণ শোধ করতে অক্ষম ছিল, তাঁর মনিব আদেশ দিলেন যেন তাকে, তার স্ত্রী ও সন্তানদের ও তার সর্বস্ব বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হয়।
26“এতে সেই দাস তাঁর সামনে নতজানু হয়ে পড়ল, ‘আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন,’ সে মিনতি জানাল, ‘আমি সব দেনা শোধ করে দেব।’ 27সেই দাসের মনিব তাঁকে দয়া করে তার ঋণ মকুব করলেন ও তাকে চলে যেতে দিলেন।
28“কিন্তু সেই দাস বাইরে গিয়ে তার এক সহদাসকে দেখতে পেল। সে তার কাছে মাত্র একশো দিনার ঋণ করেছিল। সে তাকে ধরে তার গলা টিপে দাবি করল, ‘আমার কাছে যে ঋণ করেছিস তা শোধ কর।’
29“তার সহদাস তার পায়ে পড়ে মিনতি করল, ‘আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন, আমি আপনার ঋণ শোধ করে দেব!’
30“সে কিন্তু শুনতে চাইল না। পরিবর্তে, সে চলে গিয়ে ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখল। 31অন্য সব সহদাস যখন এসব ঘটতে দেখল, তারা অত্যন্ত রেগে গিয়ে তাদের মনিবকে যা ঘটেছিল সব বলল।
32“তখন মনিব সেই দাসকে ভিতরে ডাকলেন। তিনি বললেন, ‘দুষ্ট দাস তুমি, আমার কাছে তুমি মিনতি করায় আমি তোমার সব ঋণ মকুব করেছিলাম। 33আমি যেমন তোমাকে দয়া করেছিলাম, তোমারও কি উচিত ছিল না তোমার সহদাসকে দয়া করা?’ 34ক্রুদ্ধ হয়ে তার মনিব তাকে কারাধ্যক্ষদের হাতে নিপীড়িত হওয়ার জন্য সমর্পণ করলেন, যতদিন না পর্যন্ত সে তার সমস্ত ঋণ শোধ করে।
35“তোমরা যদি প্রত্যেকে তোমাদের ভাইকে মনেপ্রাণে ক্ষমা না করো, তাহলে আমার স্বর্গস্থ পিতাও তোমাদের প্রতি এরকমই আচরণ করবেন।”
মথি: ১৮ :২১-৩৫
তার গল্পের বিষয়টি হল যদি আমরা তার দয়াকে গ্রহণ করে থাকি, তবে আল্লাহ (রাজা) আমাদেরকে অনেক বেশি ক্ষমা করে দিয়েছেন I এটি দশ হাজার ব্যাগ সোনার প্রতীকী ছিল যা দাসের দ্বারা তার পাওনা ছিল I দাসটি ঘোষণা করেছিল যে এটিকে ফেরৎ দিতে তার আরও বেশি সময়ের দরকার ছিল I কিন্তু কখনও অর্থ পরিশোধ দেওয়ার জন্য সেটি একটি অনেক বড় পরিমাণ ছিল, তার রাজা পুরো ঋণটি কেবল বাতিল করে দিলেন I এইরকমই আল্লাহ আমাদের জন্য করেন আমরা যদি তার দয়া গ্রহণ করি I
কিন্তু তারপরে এই একই দাস আর একজন দাসকে দেখল যার কাছে তার একশত রৌপ্য মুদ্রা পাওনা ছিল I সে পুরো মূল্য দাবী করল এবং অন্য দাসটিকে আর বেশি সময় দিল না I যখন আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাপ করি সেখানে আঘাত ও ক্ষতি হয়, তবে আমাদের পাপ আল্লাহকে দুঃখী ও আহত করার তুলনায় এটি তুচ্ছ – দশ হাজার ব্যাগের তুলনায় একশত রৌপ্য টুকরোর মতন I
অতএব আল্লাহ (রাজা) তারপরে দাসটিকে সবকিছু ফেরৎ দিতে কারাগারে পাঠান I ঈসা আল মসীহর শিক্ষায়, আমাদের বিরুদ্ধে লোকেদের দ্বরা কৃত পাপ এবং অভিযোগকে ক্ষমা না করা আল্লাহর ক্ষমাকে বাজেয়াপ্ত করা এবং নরকে আমাদের দোষী করা I এর থেকে গুরুতর আর কিছু হতে পারে না I
চ্যালেঞ্জ হল ক্ষমার এই আত্মাকে বজায় রাখা I যখন কেউ আমাদের আহত করে থাকে তখন প্রতিশোধের কামনা খুব বড় হতে পারে I তাই কিভাবে আমরা এই আত্মাকে পেতে পারি যা ক্ষমা করতে পারে? ইঞ্জিলকে অন্বেষণ করে আমাদের চলতে থাকার প্রয়োজন I