সুরা আল-রা’দ (সুরা ১৩ – বজ্র) অবিশ্বাসীদের থেকে একটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ বা সমালোচনা বর্ণনা করে
সুরা আর-রা’দ ১৩:৫,৭তুমি যদি বিস্ময়বোধ কর তবে বিস্ময়কর হল তাদের কথাঃ ‘আমরা যখন মাটিতে পরিণত হব তখন কি আমাদেরকে নতুনভাবে আবার সৃষ্টি করা হবে?’ তারা হল সেই লোক যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, এদের গলায় আছে লোহার শিকল, আর এরা জাহান্নামের অধিবাসী, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। কল্যাণের আগে আগে অকল্যাণ নিয়ে আসার জন্য তোমার নিকট তারা তাড়াহুড়া করছে, এদের পূর্বে এর বহু দৃষ্টান্ত অতীত হয়েছে। মানুষ সীমালঙ্ঘন করলেও তোমার প্রতিপালক তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল আর তোমার প্রতিপালক অবশ্যই শাস্তিদানেও কঠোর। যারা কুফুরী করেছে তারা বলে, ‘তার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ তুমি তো শুধু সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে একজন সঠিক পথ প্রদর্শনকারী।
এটি দুটি খন্ডে আসে I সুরা আর-রা’দ ৫ আয়াতের মধ্যে অবিশ্বাসীরা জিজ্ঞাসা করে পুনরুত্থান কি কখনও ঘটবে I তদের দৃষ্টিকোণ থেকে, যেহেতু এটি আগে কখনও ঘটেনি, এটি ভবিষ্যতে ঘটবে না I তারপরে তারা জিজ্ঞাসা করে কেন কোনো আশ্চর্যজনক চিহ্ন দেওয়া হল না বৈধ করতে যে একটি পুনরুত্থান ঘটবে I এক প্রকৃত অর্থে তারা বলে, “এটিকে প্রমাণ কর!”
সুরা আল-ফুরকান (সুরা ২৫ – মাপদণ্ড) এই একই চ্যালেঞ্জকে একটু অল্প ভিন্নভাবে দেখায় I
তারা (অর্থাৎ কাফিররা) তো সে জনপদ দিয়েই অতিক্রম করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তারা কি তা দেখে না? আসলে তারা পুনরুত্থানের কথা চিন্তা করে না। তারা যখন তোমাকে দেখে, তারা তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র ছাড়া অন্য কিছু গণ্য করে না, আর বলে : এটা কি সেই লোক আল্লাহ যাকে রসূল করে পাঠিয়েছেন?
সুরা আল-ফুরকান ২৫:৪০-৪১
আসন্ন পুনরুত্থানের ভয় নেই, নবীজিরও নেই। তারা কেয়ামত দেখতে চায়।
সুরা আল-ফুকরানও প্রকাশিত করে কিভাবে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের দেখেন I
আর তারা তাঁকে বাদ দিয়ে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে অন্য কিছুকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে। তারা ক্ষমতা রাখে না নিজেদের ক্ষতি বা উপকার করার আর ক্ষমতা রাখে না মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থানের উপর।
সুরা আল-ফুরকান ২৫:৩
তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনের ও তারা মালিক নয়।
সুরা আল-ফুরকান প্রকাশ করে যে লোকেরা প্রায়শই মিথ্যা ঈশ্বরদের গ্রহণ করে I কিভাবে কেউ জানে সত্যের চেয়ে মিথ্যা ঈশ্বর কি? আয়াত উত্তরটি দেয় I মিথ্যা ঈশ্বরেরা ‘মৃত্যু, নাতো জীবন আর নাতো পুনরুত্থানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে’ I একটি পুনরুত্থানকে নিয়ন্ত্রণ করা = যা মিথ্যাকে সত্যের থেকে আলাদা করে I
বিশ্বাসীদের থেকে আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিতদের কি চ্যালেঞ্জ দেওয়া হ’ল প্রমাণ করতে উপেক্ষা করতে পারার থেকে কিসে ভয় করা উচিত, বা আল্লার থেকে অবিশ্বাসীদের প্রতি সতর্কতা দেওয়া উচিত কিনা যাতে মিথ্যা নয় সত্যের আরাধনা করা যায়, পরিমাপের মানদণ্ড একই – পুনরুত্থান I
পুনরুত্থানের জন্য প্রয়োজন চূড়ান্ত কর্ত্তৃত্ব এবং ক্ষমতা I নবী সকল আব্রাহাম আঃ,মুসা আঃ, দাউদ আঃ এবং মোহম্মদ সাঃ – যদিও তারা মহান ছিলেন – মৃত্যুর উপরে পুনরুত্থিত হননি I মানুষদের মধ্যে সবথেকে জ্ঞানী – সক্রেটিস, আইনস্টাইন, নিউটন, এবং শলোমন – কেউই হননি I গ্রীক, রোমীয়, বাইজেন্টাইন, উমাইয়াদ, অব্বিসাদ, মামলুক এবং অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে রাজত্বকারী কোনো সম্রাটরা মৃত্যুকে পরাস্ত করে পুনরুত্থিত হননি I এটি চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ I এটি এমন চ্যালেঞ্জ যার মুখোমুখি হতে ঈসা আল মসীহ পছন্দ করেছিলেন I
তিনি রবিবারের ভোরের আগে বিজয় অর্জন করেছিলেন I ভোর বেলায় মৃত্যুর উপরে তাঁর বিজয় আপনার এবং আমার জন্যও একটি বিজয় ছিল I এই জগতের দুষ্টতার দ্বারা আমাদের বন্দী হওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই I যেমন সূরা ফালাক্ব (সূরা ১১৩ – দিবসভঙ্গ) অনুরোধ করে:
বল, ‘আমি আশ্রয় চাচ্ছি সকাল বেলার রব-এর, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, আর অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
সুরা আল-ফালাক ১১৩:১-৩
এখানে আমরা পর্যালোচনা করব কিভাবে এই নির্দিষ্ট ভোরকে কয়েকশ বছর আগে তাওরাতের প্রথম ফলের উৎসবের পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, এবং কিভাবে ভোরের প্রভু এই জগতের দুষ্টতা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করে I
ঈসা আল মসীহ এবং তাওরাতের পর্ব সমূহ
ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ ঈসা আল মসীহর শেষ সপ্তাহের দৈনন্দিন ঘটনাবলীকে আমরা সতর্কভাবে অনুসরণ করেছিলাম I সপ্তাহের শেষে তাঁকে একটি পবিত্র ইহূদি উৎসব নিস্তারপর্বের দিনে ক্রুশারোপিত করা হয়েছিল I তারপরে তিনি সপ্তাহের পবিত্র সপ্তম দিনে বিশ্রাম বারের মাধ্যমে মৃত্যুর মধ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন I এই পবিত্র দিনগুলো বহু পূর্বে আল্লাহ এবং তাওরাতে নবী মুসা (আঃ) দ্বারা গঠিত হয়েছিল I আমরা সেই নির্দেশগুলোকে এখানে পড়ি:
লেবীয় পুস্তক 231সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, 2“ইস্রায়েলীদের সঙ্গে তুমি কথা বলো এবং তাদের বলো, ‘এগুলি আমার নির্দিষ্ট উৎসব, সদাপ্রভুর নির্দিষ্ট উৎসব, পবিত্র সমাবেশরূপে সেগুলি তোমরা ঘোষণা করবে।
বিশ্রামদিন
3“ ‘তোমরা ছয় দিন কাজ করতে পারবে, কিন্তু সপ্তম দিন বিশ্রামের জন্য বিশ্রামদিন, পবিত্র সমাবেশ দিবস। এই দিনে তোমরা কোনো কাজ করবে না; তোমরা যেখানেই থাকো, দিনটি সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন।
নিস্তারপর্ব ও খামিরবিহীন রুটির উৎসব
4“ ‘এগুলি সদাপ্রভুর নির্দিষ্ট উৎসব, এগুলি নির্দিষ্ট সময়ে তোমরা বিভিন্ন পবিত্র সমাবেশে ঘোষণা করবে। 5প্রথম মাসের চতুর্দশ দিনে গোধূলি লগ্নে সদাপ্রভুর নিস্তারপর্ব শুরু হয়।
এটি কি অদ্ভূত নয় যে ক্রুশারোপন এবং নবী ঈসা আল মসীহর বিশ্রাম উভয়ই ১৫০০ বছর পূর্বে নির্ধারিত পবিত্র উৎসব দুটির সঙ্গে হুবহু মিলে যায় যেমন কালপঞ্জির মধ্যে দেখানো হয়েছে? কেন এটি? উত্তরটি আমাদের সকলের কাছে পৌঁছয়, এমনকি যেভাবে আমরা প্রত্যেক দিন একে অপরকে এখন শুভেচ্ছা জানাই I
নবী ঈসা আল মসীহ এবং তাওরাতের উৎসবগুলোর মধ্যে এই সমন্বয় চলতে থাকে I উপরের তাওরাত থেকে ফিরিস্তি কেবল প্রথম দুটি উৎসব নিয়ে আলোচনা করেছিল I পরের উৎসবটিকে ‘প্রথম ফল’ বলা হত এবং তাওরাত এটির সম্পর্কে এই নির্দেশ দিয়েছিল I
9সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, 10“ইস্রায়েলীদের সঙ্গে তুমি কথা বলো এবং তাদের বলো, ‘তোমরা যে দেশে প্রবেশ করবে, যা আমি তোমাদের দিতে যাচ্ছি, সেখানে তোমরা ফসল সংগ্রহ করবে এবং সংগৃহীত শস্যের প্রথম আঁটি যাজকের কাছে আনবে। 11সদাপ্রভুর সামনে যাজক সেই আঁটি দোলাবে, যেন তোমাদের পক্ষে তা গৃহীত হয়; বিশ্রামদিনের পরবর্তী দিনে যাজক সেই আঁটি দোলাবে। 14যতদিন না নির্দিষ্ট দিনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা এই উপহার আনছ, ততদিন পর্যন্ত কোনো রুটি বা সেঁকা খাদ্য অথবা নবান্ন ভোজন করবে না। তোমরা যেখানেই বসবাস করো, আগামী প্রজন্মগুলির পক্ষে এ এক চিরস্থায়ী বিধি।
লেবীয় ২৩:৯-১১,১৪
অতএব নিস্তারপর্বের ‘বিশ্রামবারের পরের দিন’ একটি তৃতীয় পবিত্র দিন ছিল I প্রত্যেক বছর এই দিনে মহা যাজক পবিত্র মন্দিরে প্রবেশ করতেন এবং বসন্ত কালের বিশেষ প্রথম পণ্য শস্যকে সদাপ্রভুর সামনে উত্তোলিত করতেন I এটি শীত কালের মৃত্যুর পরে নতুন জীবনের সুচনাকে তাত্পর্যপূর্ণ করত, সামনের প্রাচুর্যপূর্ণ ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকত যাতে লোকেরা খেয়েপরে তৃপ্ত হতে পারে I
বিশ্রাম বারের পরে ঈসা আল মসীহর মৃত্যুতে বিশ্রামের সময়ে, এটি ঠিক সেই একই দিন ছিল নীসন ১৬ তারিখের এক নতুন সপ্তাহের রবিবার I ইঞ্জিল এই একই দিনে চমকপ্রদ ঘটনাগুলোর বর্ণনা করে যে মহাযাজক নতুন জীবনের ‘প্রথম ফসল’ উপহার দিতে মন্দিরে গেলেন I এখানে নথিটি রয়েছে:
মৃত্যু থেকে ঈসা আল মসীহর উত্থান
1সপ্তাহের প্রথম দিনে খুব ভোরবেলায়, সেই মহিলারা তাঁদের প্রস্তুত করা মশলা নিয়ে সমাধিস্থানে গেলেন। 2তাঁরা দেখলেন, সমাধির মুখ থেকে পাথরখানি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 3কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করে তাঁরা প্রভু যীশুর দেহটি দেখতে পেলেন না। 4তাঁরা এ বিষয়ে যখন অবাক বিস্ময়ে ভাবছিলেন, তখন বিদ্যুতের মতো উজ্জ্বল পোশাক পরা দুজন পুরুষ হঠাৎ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। 5আতঙ্কে মহিলারা মাটির দিকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু পুরুষ দুজন তাঁদের বললেন, “তোমরা মৃতদের মধ্যে জীবিতের সন্ধান করছ কেন? 6তিনি এখানে নেই, কিন্তু উত্থাপিত হয়েছেন। তোমাদের সঙ্গে গালীলে থাকার সময়ে তিনি কী বলেছিলেন, মনে করে দেখো। 7তিনি বলেছিলেন, ‘মনুষ্যপুত্রকে পাপী মানুষদের হাতে অবশ্যই সমর্পিত হতে হবে, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ ও তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হতে হবে।’ ” 8তখন তাঁর কথাগুলি তাঁদের মনে পড়ে গেল।
9সমাধিস্থান থেকে ফিরে এসে তাঁরা এ সমস্ত বিষয় সেই এগারোজন ও অন্য সবাইকে বললেন। 10এরা হলেন মাগ্দালাবাসী মরিয়ম, যোহান্না ও যাকোবের মা মরিয়ম। তাঁদের সঙ্গে আরও অনেকে এই ঘটনার কথা প্রেরিতশিষ্যদের জানালেন। 11কিন্তু তাঁরা মহিলাদের কথা বিশ্বাস করলেন না। কারণ তাঁদের এই সমস্ত কথা তাঁরা আজগুবি বলে মনে করলেন। 12কিন্তু পিতর উঠে সমাধিস্থানের দিকে দৌড়ে গেলেন। তিনি নিচু হয়ে দেখলেন, লিনেন কাপড়ের খণ্ডগুলি পড়ে রয়েছে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে কী ঘটেছে ভাবতে ভাবতে তিনি ফিরে গেলেন।
ইম্মায়ুসের পথে
13সেদিন, তাঁদের মধ্যে দুজন জেরুশালেম থেকে এগারো কিলোমিটার দূরের ইম্মায়ুস নামে একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। 14তাঁরা পরস্পর বিগত ঘটনাবলি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। 15তাঁরা যখন পরস্পরের মধ্যে এ সমস্ত আলোচনা করছিলেন, তখন যীশু স্বয়ং উপস্থিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে পথ চলতে লাগলেন; 16কিন্তু দৃষ্টি রুদ্ধ থাকায় তাঁরা তাঁকে চিনতে পারলেন না।
17তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “পথ চলতে চলতে তোমরা পরস্পর কী আলোচনা করছিলে?”
তাঁরা বিষণ্ণ মুখে থমকে দাঁড়ালেন। 18তাঁদের মধ্যে যাঁর নাম ক্লিয়োপা তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি জেরুশালেমে একমাত্র প্রবাসী যে, এই কয় দিনে সেখানে যা ঘটেছে তার কিছুই আপনি জানেন না?”
19তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কী সব ঘটেছে?”
তাঁরা উত্তর দিলেন, “নাসরতের যীশু সম্পর্কিত ঘটনা। তিনি ছিলেন একজন ভাববাদী, ঈশ্বর ও সব মানুষের সাক্ষাতে বাক্যে ও কাজে এক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। 20প্রধান যাজকেরা ও আমাদের সমাজভবনের অধ্যক্ষরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশে সমর্পিত করল এবং তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করল। 21কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম যে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করতে চলেছেন। আর তিন দিন হল এই সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। 22এছাড়াও, আমাদের কয়েকজন মহিলা আমাদের হতবাক করে দিয়েছেন। তাঁরা আজ খুব ভোরবেলা সমাধিস্থলে গিয়েছিলেন, 23কিন্তু তাঁর দেহের সন্ধান পাননি। তাঁরা এসে আমাদের বললেন যে, তাঁরা স্বর্গদূতদের দর্শন লাভ করেছেন। তাঁরা আরও বললেন যে, যীশু জীবিত আছেন। 24তারপর আমাদের কয়েকজন সঙ্গী সমাধিস্থলে গিয়ে মহিলারা যেমন বলেছিলেন, ঠিক সেইমতো দেখলেন, কিন্তু তাঁকে তাঁরা দেখতে পাননি।”
25যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কত অবোধ! আর ভাববাদীরা যেসব কথা বলে গেছেন, সেগুলি বিশ্বাস করতে তোমাদের মন কেমন শিথিল! 26এই প্রকার দুঃখ বরণ করার পরই কি খ্রীষ্ট স্বমহিমায় প্রবেশ করতেন না?” 27এরপর মোশি ও সমস্ত ভাববাদী গ্রন্থ থেকে শুরু করে সমগ্র শাস্ত্রে তাঁর সম্পর্কে যা লেখা আছে, সে সমস্তই তিনি তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করলেন।
28যে গ্রামে তারা যাচ্ছিলেন, সেখানে উপস্থিত হলে যীশু আরও দূরে এগিয়ে যাওয়ার ভাব দেখালেন। 29কিন্তু তাঁরা তাঁকে সাধাসাধি করে বললেন, “সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, দিনও প্রায় শেষ হয়ে এল, আপনি আমাদের সঙ্গে থাকুন।” তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকার জন্য ভিতরে গেলেন।
30তাঁদের সঙ্গে আহারে বসে তিনি রুটি নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন এবং তা ভেঙে তাঁদের হাতে দিলেন। 31সেই মুহূর্তে তাঁদের চোখ খুলে গেল, আর তাঁরা তাঁকে চিনতে পারলেন। কিন্তু যীশু তাঁদের চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। 32তাঁরা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাদের সঙ্গে পথ চলতে চলতে তিনি যখন আমাদের কাছে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন কি আমাদের অন্তরে এক আবেগের উত্তাপ অনুভব হচ্ছিল না?”
33সেই মুহূর্তে তাঁরা উঠে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। সেখানে সেই এগারোজন এবং তাঁদের সঙ্গীদের তাঁরা দেখতে পেলেন। 34তাঁরা এক স্থানে মিলিত হয়ে বলাবলি করছিলেন, “সত্যিই, প্রভু পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং শিমোনকে দর্শন দিয়েছেন।” 35তখন সেই দুজন, পথে কী ঘটেছিল এবং যীশু রুটি ভেঙে দেওয়ার পর তাঁরা কেমনভাবে তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন, সেইসব কথা জানালেন।
শিষ্যদের সামনে যীশুর আবির্ভাব
36তাঁরা তখনও এ বিষয়ে আলোচনা করছিলেন, সেই সময় যীশু তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়ালেন এবং তাঁদের বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক।”
37কোনও ভূত দেখছেন ভেবে তাঁরা ভয়ভীত হলেন ও বিহ্বল হয়ে পড়লেন। 38তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছো কেন? তোমাদের মনে সংশয়ই বা জাগছে কেন? 39আমার হাত ও পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখো! এ স্বয়ং আমি! আমাকে স্পর্শ করো, দেখো! ভূতের এরকম হাড় মাংস নেই; তোমরা দেখতে পাচ্ছ, আমার তা আছে।”
40এই কথা বলার পর তিনি তাঁর দু-হাত ও পা তাঁদের দেখালেন। 41আনন্দে ও বিস্ময়ে তাঁরা তখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না দেখে, যীশু তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে?” 42তাঁরা তাঁকে আগুনে ঝলসানো এক টুকরো মাছ দিলেন। 43তিনি সেটি নিয়ে তাঁদের সামনেই আহার করলেন।
44তিনি তাঁদের বললেন, “তোমাদের সঙ্গে থাকার সময়েই আমি এই কথা বলেছিলাম, মোশির বিধানে, ভাববাদীদের গ্রন্থে ও গীতসংহিতায় আমার সম্পর্কে যা লেখা আছে, তার সবকিছুই পূর্ণ হবে।”
45তারপর তিনি তাঁদের মনের দ্বার খুলে দিলেন, যেন তাঁরা শাস্ত্র বুঝতে পারেন। 46তিনি তাঁদের বললেন, “একথা লেখা আছে, খ্রীষ্ট কষ্টভোগ করবেন ও তৃতীয় দিনে মৃতলোক থেকে পুনরুত্থিত হবেন 47এবং জেরুশালেম থেকে শুরু করে সমস্ত জাতির কাছে তাঁরই নামে মন পরিবর্তন ও পাপক্ষমার কথা প্রচার করা হবে। 48আর তোমরাই এ সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী।
লূক 24
ঈসা আল মসীহর বিজয়
‘প্রথম ফসলের’ সেই পবিত্র দিনে নবী ঈসা আল মসীহ (আঃ) এক মহান বিজয়কে অর্জন করলেন যা তাঁর শত্রু এবং সঙ্গীরা সম্ভব বলে বিশ্বাস করল না – মৃত্যুর উপরে বিজয়ী জীবনে তিনি ফিরে এলেন I যেমন ইঞ্জিল ব্যাখ্যা করে:
55“মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?” 56মৃত্যুর হুল পাপ ও পাপের পরাক্রম হল বিধান। 57কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক! তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমাদের বিজয় দান করেন।
1 করিন্থীয় 15
তবে এটি নবীর জন্য কেবল একটি বিজয় ছিল না I এটি আপনার এবং আমার জন্যেও একটি বিজয় ছিল, যাকে প্রথম ফসলের সময়ের সাথে গারান্টি দেওয়া হয়েছিল I ইঞ্জিল এটিকে এইভাবে ব্যাখ্যা করে:
20কিন্তু খ্রীষ্ট সত্যিই মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয়েছেন, যারা নিদ্রাগত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম ফলস্বরূপ। 21কারণ মৃত্যু যেহেতু একজন মানুষের মাধ্যমে এসেছিল, মৃতদের পুনরুত্থানও তেমনই একজন মানুষের মাধ্যমেই আসে। 22কারণ আদমে যেমন সকলের মৃত্যু হয়, তেমনই খ্রীষ্টে সকলেই পুনর্জীবিত হবে। 23কিন্তু প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ পর্যায়ক্রমে: প্রথম ফসল খ্রীষ্ট, পরে যখন তিনি আসবেন, তাঁর আপনজনেরা। 24তারপর সবকিছুর শেষ সময় উপস্থিত হবে যখন তিনি সমস্ত শাসনভার, কর্তৃত্ব ও পরাক্রম ধ্বংস করার পর, পিতা ঈশ্বরের হাতে রাজ্যের ভার হস্তান্তর করবেন। 25কারণ যতক্ষণ না তিনি তাঁর সমস্ত শত্রুকে তাঁর পদানত করেন, তাঁকে রাজত্ব করতেই হবে। 26সর্বশেষ শত্রু যে মৃত্যু, তাও ধ্বংস করা হবে।
1 করিন্থীয় 15
প্রথম ফসলের উৎসব হিসাবে সেই একই দিনে নবীকে জীবনে উত্থাপিত করা হ’ল যাতে আমরা জানতে পারি যে আমরা মৃত্যু থেকে এই একই পুনরুত্থানে অংশগ্রহণ করতে পারি I ঠিক প্রথম ফসলের উৎসবের ন্যায় নতুন জীবনের একটি উপহার ছিল সাথে পরবর্তী সময়ের বসন্তকালের প্রচুর ফসলের আশা ছিল, ইঞ্জিল আমাদের বলে যে ঈসা আল মসীহর উত্থান পুনরুত্থানের ‘প্রথম ফসল’ ছিল সাথে পরে সকলের জন্য এক বৃহত্তর পুনরুত্থানের আশা ছিল যারা ‘তাঁর মধ্যে থাকে’ I তাওরাত এবং কোরআন ব্যাখ্যা করে সেই মৃত্যু আদমের কারণে এসেছিল I ইঞ্জিল আমাদের বলে যে এক সমান্তরাল উপায়ে পুনরুত্থানের জীবন ঈসা আল মসীহর মাধ্যমে আসে I তিনি নতুন জীবনের প্রথম ফল যাতে অংশগ্রহণ করতে আমাদের সকলকে আমন্ত্রণ করা হয় I
ইস্টার: সেই রবিবারের পুনরুত্থানের উৎসব পালন করা
আজ ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থানকে প্রায়শই ইস্টার রূপে উল্লেখ করা হয়, এবং যে রবিবারে তিনি উঠেছিলেন তাকে ইস্টার রবিবার বলে প্রায়শই উল্লেখ করা হয় I তবে এই কথাগুলো কয়েকশত বছর পরে ব্যবহারে এসেছিল I নির্দিষ্ট কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় I যেটা গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হ’ল প্রথম ফসলের পরিপূর্ণতা হিসাবে নবীর পুনরুত্থান যার সূচনা কয়েক শত বছর পূর্বে মশির সময়ে শুরু হয়েছিল, এবং এটি আপনার এবং আমার জন্য কি বোঝায় I
কালপঞ্জির মধ্যে নতুন সপ্তাহের রবিবারের জন্য এটিকে দেখা যায়:
‘শুভ শুক্রবার’ এর উত্তর
এছাড়াও এটি ‘শুভ শুক্রবার’ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেয় I যেমন ইঞ্জিল ব্যাখ্যা করে:
ইব্রীয় 29আমরা সেই যীশুকে দেখতে পাচ্ছি, যাঁকে স্বর্গদূতদের সামান্য নিচে স্থান দেওয়া হয়েছিল, তিনি মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগের কারণে মহিমা ও সমাদরের মুকুটে ভূষিত হয়েছেন, যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহে তিনি সব মানুষের জন্য মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করেন।
যখন তিনি শুক্রবারে ‘মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করলেন’ তিনি তা আপনার, আমার এবং ‘প্রত্যেকের’ জন্য করলেন I যেহেতু এটি আমাদের জন্য শুভ ছিল তাই এর নাম শুভ শুক্রবারI প্রথম ফসল উৎসবের দিনে যখন তিনি উঠলেন তখন তিনি প্রত্যেককে নতুন জীবন উপহার দিলেন I
কোরআনের মধ্যে ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থান এবং শান্তি
যদিও সংক্ষিপ্ত বিবরণে দেওয়া হয়েছে, কোরআন ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থানকে তিনটি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ দিনগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছে I সুরা মারইয়ম এটির এইভাবে ফিরিস্তি দেয়:
আমার উপর আছে শান্তি যেদিন আমি জন্মেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে আর আমি যেদিন জীবিত হয়ে উত্থিত হব।’
সুরা মারইয়ম ১৯:৩৩
ইঞ্জিল এছাড়াও ঈসা আল মসীহর জন্ম, তাঁর মৃত্যু এবং এখন তাঁর পুনরুত্থানের উপরে জোর দেয় I যেহেতু তাঁর পুনরুত্থান ‘প্রথম ফল’, সেইহেতু শান্তি যা তাঁর পুনরুত্থানের মধ্যে নবীর উপরে ছিল তা এখন আপনার এবং আমার কাছেও উপলব্ধ আছে I ঈসা আল মসীহ এটিকে দেখিয়েছিলেন যখন তিনি পরে তাঁর পুনরুত্থানের দিনে তাঁর শিষ্যদের শভেচ্ছা জানিয়েছিলেন:
19সপ্তাহের প্রথম দিন, সন্ধ্যা হলে, শিষ্যেরা ইহুদিদের ভয়ে দরজা বন্ধ করে একত্র হয়েছিলেন। সেই সময় যীশু তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক।” 20একথা বলার পর তিনি তাঁর দু-হাত ও বুকের পাঁজর তাঁদের দেখালেন। প্রভুকে দেখে শিষ্যেরা আনন্দিত হয়ে উঠলেন।
21যীশু আবার বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক! পিতা যেমন আমাকে পাঠিয়েছেন, আমিও তেমন তোমাদের পাঠাচ্ছি।” 22একথা বলে তিনি তাদের উপর ফুঁ দিয়ে বললেন, “পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করো।
যোহন 20
প্রথাগত শুভেচ্ছা যাকে মুসলমানরা এখন একে অপরের প্রতি প্রসারিত করে (সালাম আলেক্যুম – আপনার উপরে শান্তি হোক) তা তাঁর পুনরুত্থানকে শান্তির সঙ্গে সংযুক্ত করতে ঈসা আল মসীহর দ্বারা বহু পূর্বে ব্যবহৃত হত, যে শান্তিকে এখন আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে I আমাদের নবীর এই প্রতিশ্রুতিটিকে যখন আমরা শুনি বা এই শুভেচ্ছাকে বলি প্রত্যেক সময় মনে রাখা উচিত, এবং পবিত্র আত্মার বরদানের সম্বন্ধে চিন্তা করা উচিত, যা এখন আমাদের কাছেও উপলব্ধ রয়েছে I
ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থানের বিবেচনা
ঈসা আল মসীহ তাঁর সঙ্গীদের কাছে মৃত্যুর থেকে জীবিত হয়ে অনেক দিন ধরে নিজেকে দেখালেন I এই ঘটনাগুলোকে ইঞ্জিল থেকে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে I তবে এমনকি তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রথম উপস্থিতিতে আমাদের তা লক্ষ্য করা উচিত I
11কিন্তু তাঁরা মহিলাদের কথা বিশ্বাস করলেন না। কারণ তাঁদের এই সমস্ত কথা তাঁরা আজগুবি বলে মনে করলেন।
লূক 24নবীকে নিজেই করতে হয়েছিল:
27এরপর মোশি ও সমস্ত ভাববাদী গ্রন্থ থেকে শুরু করে সমগ্র শাস্ত্রে তাঁর সম্পর্কে যা লেখা আছে, সে সমস্তই তিনি তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করলেন।
লূক 24এবং আবার তার পরে:
লূক 2444তিনি তাঁদের বললেন, “তোমাদের সঙ্গে থাকার সময়েই আমি এই কথা বলেছিলাম, মোশির বিধানে, ভাববাদীদের গ্রন্থে ও গীতসংহিতায় আমার সম্পর্কে যা লেখা আছে, তার সবকিছুই পূর্ণ হবে।”
আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে এটি সত্যিই আল্লাহর পরিকল্পনা এবং মৃত্যু থেকে জীবন দেওয়ার একটি সরল পথ? শুধুমাত্র ঈশ্বরই ভবিষ্যৎ জানতে পারেন, তাই শত শত বছর আগে তৌরাত ও জাবুরে নবীদের মাধ্যমে প্রকাশ করা নিদর্শনগুলো এবং ঈসা আল মাসীহ দ্বারা পরিপূর্ণতা আমাদের নিশ্চিত করার জন্য লেখা হয়েছিল:
4যেন আপনি যে শিক্ষা লাভ করেছেন, সে বিষয়ে আপনার জ্ঞান সুনিশ্চিত হয়।
লূক 1যার দ্বারা ঈসা আল মসীহর বলিদান এবং পুনরুত্থানের এই অত্যাবশক প্রশ্নটির উপরে আমরা অবহিত হতে পারি, তা উপলব্ধ চারটি বিভিন্ন নিবন্ধকে সংযুক্ত করে:
১. এটি ঈসা আল মসীহর প্রতি ইঙ্গিতকারী মশির তাওরাতে দেওয়া চিহ্নগুলোকে পর্যালোচনা করে I
২. এটি ‘নবী সমূহ এবং গীতসংহিতার মধ্যে চিহ্নগুলোকে পর্যালোচনা করে I এই নিবন্ধ দুটি আমাদের নিজেদের জন্য বিচার করতে অনুমতি দেয় এটি কি বাস্তবিকই লেখা হয়েছিল যে “মসীহ কষ্টভোগ করবেন এবং তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে উঠবেন” (লুক 24:46 )
৩. এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কিভাবে ঈসা আল মসীহর থেকে পুনরুত্থিত জীবনের এই উপহারটিকে পাওয়া যায় I
৪.এটি পবিত্র কোরআন এ সম্পর্কে যা বলেছে তার পর্যালোচনা করার দ্বারা, ঈসা আল মসীহর ক্রুশারোপন সম্পর্কে কিছু বিভ্রান্তির সমাধান করে I