Skip to content
Home » কোরআন ও ইতিহাস: ঈসা মসীহ কি ক্রুশে মারা গেছেন?

কোরআন ও ইতিহাস: ঈসা মসীহ কি ক্রুশে মারা গেছেন?

  • by


আমরা কাবার (৩১৮ হিজরার মধ্যে) কালো পাথরের অন্তর্হিত হওয়ার ঘটনাকে ব্যবহার করে এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই প্রশ্নটিকে বিস্তারিত ভাবে পরীক্ষা করব I

যারা ঈসা আল মসীহর (আঃ) ক্রুশের উপরে মৃত্যুকে অস্বীকার করে তারা সাধারণত আন-নিসা ১৫৭ আয়াতটি উল্লেখ করে I

আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। কিন্তু তারা না তাকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কেবলমাত্র তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল, আর যারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছিল তারাও এ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছিল। শুধু অমূলক ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত সত্য যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।

নিসা ৪:১৫৭

ঈসা আল মসীহকে কি হত্যা করা হয়েছিল?

লক্ষ্য করুন এটি বলে না যে ঈসা আল মসীহ মারা যাননি I এটি বলে ইহূদিরা ‘তাকে হত্যা করে নি…’ যা আলাদা I ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ করে ইহূদিরা নবীকে গ্রেফতার করে, এবং প্রধান যাজক কাফায়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন  তবে  

২৮ পরে ইহুদি নেতারা যীশুকে কায়াফার কাছ থেকে নিয়ে রোমীয় প্রদেশপালের প্রাসাদে গেল। তখন ভোর হয়ে আসছিল। ইহুদি নেতারা নিজেদের কলুষিত করতে চায়নি। তারা যেন নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করতে পারে, এজন্য তারা প্রাসাদে প্রবেশ করল না।

যোহন ১৮

পীলাত রোমের দেশাধ্যক্ষ্য ছিলেন I রোমের দখলে থাকাতে, ইহূদিদের প্রাণদণ্ড দেওয়ার কর্ত্তৃত্ব ছিল না I পীলাত তখন নবীকে তার রোমীয় সৈন্যদের কাছে সমর্পণ করলেন I

১৬ অবশেষে পীলাত যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য তাদের হাতে সমর্পণ করলেন।

যোহন ১৯

অতএব রোম সরকার এবং রোমীয় সৈন্যরা তাকেই ক্রুশে দিয়েছিল –ইহূদিরা নয় I ইহূদি নেতাদের কাছে নবীর শিষ্যদের অভিযোগ এই ছিল যে 

১৩ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, তাঁর সেবক সেই যীশুকে গৌরবান্বিত করেছেন। তোমরা তাঁকে হত্যা করার জন্য সমর্পণ করেছিলে এবং পীলাতের বিচারালয়ের সামনে তাঁকে অস্বীকার করেছিলে, যদিও তিনি তাঁকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।

প্রেরিত ৩

ইহূদিরা তাকে রোমীয়দের কাছে সমর্পণ করল এবং তারা তাকে ক্রুশবিদ্ধ  করল I ক্রুশে তার মৃত্যুর পরে, তার দেহকে একটি সমাধিতে রাখা হল

41যীশু যেখানে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন, সেখানে একটি বাগান ছিল। সেই বাগানে ছিল একটি নতুন সমাধি, কাউকে কখনও তার মধ্যে কবর দেওয়া হয়নি। 42সেদিন ছিল ইহুদিদের প্রস্তুতির দিন এবং সমাধিটি কাছেই ছিল বলে তারা সেখানেই যীশুর দেহ শুইয়ে রাখলেন।

আন-নিসা ১৫৭ ব্যক্ত করে যে যিহূদিরা ঈসা আল মসীহকে ক্রুশবিদ্ধ করে নি I সেটি সত্য I রোমীয়রা করেছিল I   

সুরা মারইয়াম এবং নবীর মৃত্যু

ঈসা আল মসীহ মারা গেছেন কিনা তা সুরা মারইয়াম পরিস্কার করে  দিয়েছেন I   

আমার উপর আছে শান্তি যেদিন আমি জন্মেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে আর আমি যেদিন জীবিত হয়ে উত্থিত হব।’ এই হচ্ছে মারইয়াম-পুত্র ঈসা, (এটাই) সত্য কথা যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করে।

সুরা মারইয়াম ১৯:৩৩-৩৪

এটি পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করে যে ঈসা আল মসীহ তার মৃত্যু সম্পর্কে আগে থেকেই দেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, যেমন ইঞ্জিল লিপিবদ্ধ করে I  

‘পরিবর্তে জুডাস হত্যা’ তত্ত্ব

একটি বহু প্রচারিত তত্ত্ব আছে যে জুডাসকে ঈসা আল মসীহর মতন দেখতে রূপান্তর করা হয়েছিল I তখন ইহূদিরা জুডাসকে (যাকে এখন ঈসা আল মসীহর মতন দেখতে) গ্রেফতার করল, রোমীয়রা জুডাসকে (তখনও ঈসার সাদৃশ্য) ক্রুশবিদ্ধ করল, এবং জুডাসকে (তখনও ঈসার মতন দেখতে) কবর দেওয়া হল I এই তত্বের মধ্যে ঈসা আল মসীহ না মারা গিয়ে সরাসরিভাবে স্বর্গে গিয়েছিলেন I যদিও না কোরআন আর নাতো ইঞ্জিলের কোথাও এই ধরণের বিস্তৃত  ছকের কোনো বর্ণনা আছে, এটিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে I তাই এই তত্ত্বটিকে আমাদের পরীক্ষা করা যাক I      

ঐতিহাসিক নথির মধ্যে ঈসা আল মসীহ

ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস ঈসা আল মসীহ এবং তার মৃত্যুর প্রতি বিভিন্ন উল্লেখ সমূহকে লিপিবদ্ধ করে I আমাদের দুটির প্রতি দেখা যাক I রোমীয় ঐতিহাসিক তাসিতাস ঈসা আল মসীহর প্রতি উল্লেখ করেছিলেন যখন লিপিবদ্ধ করছিলেন কিভাবে রোম সম্রাট নীরো ৬৫ খ্রীষ্টাব্দে নবী ঈসা আল মসীহর প্রথম অনুগামীদের উপরে অত্যাচার করেছিলেন I তাসিতাস লিখলেন:   

 ‘নীরো.. সাধারণত খ্রীষ্টান নামে অভিহিত ব্যক্তিদের উপরে অত্যন্ত তীব্র অত্যাচারের সাহায্যে শাস্তি দিলেন, যাদেরকে তাদের বিশালতার জন্য ঘৃণা করা হত I খ্রীষ্টাস নামটির প্রতিষ্ঠাতাকে, পন্তিয়াস পীলাতের দ্বারা মৃত্যু দেওয়া হয়েছিল, যিনি তিবিরিযাস অঞ্চলের যিহূদিয়া প্রদেশের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনধি ছিলেন; তবে অনিষ্টকর কুসংস্কার, এক সময়ের জন্য অবদমিত হয়ে আবার সহসা প্রাদুর্ভূত হয়েছিল, না কেবল যিহূদিয়া জুড়ে, যেখান থেকে অপকর্মটির উৎপত্তি হয়েছিল, বরং রোমের শহর জুড়েও’ তাসিতাস.  

আন্নালস XV. ৪৪

তাসিতাস সুনিশ্চিত করেন যে ঈসা আল মসীহ ছিলেন:

  • ১) একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি;
  • ২) পন্তিয়াস পীলাতের দ্বারা প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত;
  • ৩) নবী ঈসা আল মসীহর মৃত্যুর পরে তার অনুগামীরা যিহূদিয়াতে (যিরূশালেম) তাদের আন্দোলন আরম্ভ করেছিল।
  • 4) ৬৫ খ্রীষ্টাব্দের (নীরোর সময়কাল) মধ্যে তারা ইহূদিয়া থেকে রোমে ছড়িয়ে পড়েছিল যার জন্য রোম সম্রাট অনুভব করল এদেরকে থামাতে হবে I 

প্রথম শতাব্দীর ইহূদি ইতিহাস সম্বন্ধে যোসেফাস একজন ইহূদি সামরিক নেতা/ইতিহাসবিদ লেখক ছিলেন I এইরকম করতে গিয়ে তিনি এই বাক্যগুলো দিয়ে ঈসা আল মসীহর জীবনকে আবৃত করেছিলেন: 

‘এই সময়ে সেখানে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন … যীশু … উত্তম, এবং গুণী I আর যিহূদিদের মধ্য থেকে এবং অন্য জাতিদের থেকে অনেক লোকেরা তার শিষ্য হয়েছিল I পীলাত তাকে ক্রুশে ও মারা যাবার জন্য  দোষী করেছিলেন I এবং যারা তার শিষ্য হয়েছিল তারা তার শিষ্যত্ব পরিত্যাগ করে নি I তারা সংবাদ দিয়েছিল যে তিনি তার ক্রুশবিদ্ধের পরে তৃতীয় দিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং যে তিনি জীবিত ছিলেন’

যোসেফাস ৯০ খ্রীষ্টাব্দ আন্তিকুইটিস XViii ৩৩

যোসেফাস সুনিশ্চিত করেন যে:

  • ১) ঈসা আল মসীহর অস্তিত্ব ছিল,
  • ২) তিনি একজন ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন,
  • ৩) রোমীয় দেশাধ্যক্ষ্য পীলাত তার প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন.
  • ৪) তার শিষ্যরা ঠিক তার পরে ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থান সম্পর্কে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন I  

এই ঐতিহাসিক নথি সমূহ থেকে এটি মনে হয় যে তার শিষ্যদের দ্বারা রোমীয় জগতের কাছে ঘোষিত তার পুনরুত্থান সহ নবীর মৃত্যু একটি সুপরিচিত, অবিতর্কিত ঘটনা ছিল I  

ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি – বাইবেল থেকে

এখানে বাইবেলের মধ্যে প্রেরিতের বইটিতে এইভাবে ঘটনাটিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যখন শিষ্যরা জেরুজালেমে, মন্দিরে, তার ক্রুশবিদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থান সম্বন্ধে ঘোষণা করল।

১ পিতর ও যোহন যখন জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময় যাজকেরা, মন্দিরের রক্ষী-প্রধান ও সদ্দূকীরা তাদের কাছে এল। 
২ তারা অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিল, কারণ প্রেরিতশিষ্যেরা লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং যীশুর মাধ্যমেই মৃতলোক থেকে পুনরুত্থানের কথা প্রচার করছিলেন। 
৩ তারা পিতর ও যোহনকে গ্রেপ্তার করল, আর সন্ধ্যা হয়েছিল বলে তারা পরদিন পর্যন্ত তাঁদের কারাগার বন্দি করে রাখল। 
৪ কিন্তু যারা বাক্য শুনেছিল, তাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করল এবং পুরুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল প্রায় পাঁচ হাজার।
৫ পরের দিন শাসকেরা, প্রাচীনবর্গ ও শাস্ত্রবিদরা জেরুশালেমে মিলিত হল। 
৬ মহাযাজক হানন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, আর ছিলেন কায়াফা, যোহন, আলেকজান্ডার ও মহাযাজকের পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিরাও। 
৭ তাঁরা পিতর ও যোহনকে তাঁদের কাছে তলব করে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন, “কোন শক্তিতে বা কী নামে তোমরা এই কাজ করেছ?”
৮ তখন পিতর, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন, “শাসকেরা ও সমাজের প্রাচীনবর্গ!
৯ একজন পঙ্গু মানুষের প্রতি করুণা দেখানোর জন্য যদি আজ আমাদের জবাবদিহি করতে বলা হচ্ছে এবং জিজ্ঞেস করা হচ্ছে যে, সে কীভাবে সুস্থ হল, 
১০ তাহলে আপনারা ও ইস্রায়েলের সব মানুষ একথা জেনে নিন: যাঁকে আপনারা ক্রুশার্পিত করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত করেছেন, নাসরতের সেই যীশু খ্রীষ্টের নামে এই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 
১১ তিনিই“ ‘সেই পাথর যাঁকে গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করেছিলেন, তিনিই হয়ে উঠেছেন কোণের প্রধান পাথর।
১২ আর অন্য কারও কাছে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না, কারণ আকাশের নিচে, মানুষের মধ্যে এমন আর কোনো নাম দেওয়া হয়নি, যার দ্বারা আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।”
১৩ তাঁরা যখন পিতর ও যোহনের সাহসিকতা দেখলেন ও উপলব্ধি করলেন যে তাঁরা ছিলেন অশিক্ষিত, সাধারণ মানুষ, তখন তাঁরা বিস্মিত হলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন যে এঁরা যীশুর সঙ্গে ছিলেন। 
১৪ কিন্তু যে ব্যক্তি সুস্থ করেছিল, তাকে তাঁদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তাঁদের বলার মতো আর কিছুই ছিল না। 
১৫ সেই কারণে তাঁরা তাঁদের মহাসভা থেকে বাইরে যেতে বললেন এবং তারপর একত্রে শলাপরামর্শ করতে লাগলেন। 
১৬ তাঁরা বলাবলি করলেন, “এই লোকগুলিকে নিয়ে আমরা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করব? জেরুশালেমে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই জানে যে, তাঁরা এক নজিরবিহীন অলৌকিক চিহ্নকাজ সম্পন্ন করেছে, আর আমরা তা অস্বীকার করতে পারি না। 
১৭কিন্তু এই বিষয় লোকদের মধ্যে যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা অবশ্যই তাঁদের সতর্ক করে দেব, যেন তাঁরা এই নামে আর কারও কাছে আর কোনো কথা না বলে।” প্রেরিত ৪

১৭ এরপর মহাযাজক ও তাঁর সমস্ত সহযোগী, যারা সদ্দূকী সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন, তাঁরা ঈর্ষায় পূর্ণ হয়ে উঠলেন। 
১৮ তাঁরা প্রেরিতশিষ্যদের গ্রেপ্তার করে সরকারি কারাগারে রেখে দিলেন। 
১৯ কিন্তু রাত্রিবেলা প্রভুর এক দূত কারাগারের দরজাগুলি খুলে দিয়ে তাঁদের বাইরে নিয়ে এলেন। 
২০ তিনি বললেন, “তোমরা যাও, গিয়ে মন্দির-প্রাঙ্গণে দাঁড়াও এবং জনসাধারণের কাছে এই নতুন জীবনের পূর্ণ বার্তা প্রকাশ করো।”
২১ তাঁদের যেমন বলা হয়েছিল, ভোরবেলা তাঁরা মন্দির-প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলেন এবং লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।মহাযাজক ও তাঁর সহযোগীরা যখন উপস্থিত হলেন, তাঁরা ইস্রায়েলীদের প্রাচীনবর্গের সমন্বয়ে গঠিত পূর্ণ জমায়েত বা মহাসভাকে একত্র করলেন ও প্রেরিতশিষ্যদের নিয়ে আসার জন্য কারাগারে লোক পাঠালেন।
২২ কিন্তু কারাগারে উপস্থিত হয়ে কর্মচারীরা তাঁদের সেখানে খুঁজে পেল না। তাই তারা ফেরত গিয়ে সংবাদ দিল, 
২৩ “আমরা গিয়ে দেখলাম, কারাগার সুদৃঢ়রূপে তালাবন্ধ, রক্ষীরাও দরজায় দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমরা সেগুলি খুলে ভিতরে কাউকে দেখতে পেলাম না।” 
২৪ এই সংবাদ শুনে মন্দিরের রক্ষী-প্রধান ও মহাযাজক বিস্ময়বিমূঢ় হলেন। তাঁরা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন যে, এর পরিণাম কী হতে পারে।
২৫ তখন একজন ব্যক্তি এসে বলল, “দেখুন! যাঁদের আপনারা কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁরা মন্দির-প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছে।” 
২৬ এতে রক্ষী-প্রধান তাঁর কর্মচারীদের সঙ্গে গিয়ে প্রেরিতশিষ্যদের নিয়ে এলেন। তাঁরা বলপ্রয়োগ করলেন না, কারণ লোকেরা তাঁদের উপর পাথর মারতে পারে ভেবে তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন।
২৭ প্রেরিতশিষ্যদের নিয়ে এসে, তাঁরা তাঁদের মহাসভার সামনে উপস্থিত করলেন, যেন মহাযাজক তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। 
২৮ তিনি বললেন, “আমরা তোমাদের এই নামে শিক্ষা না দেওয়ার জন্য কঠোর আদেশ দিয়েছিলাম, তবুও তোমরা তোমাদের উপদেশে জেরুশালেম পূর্ণ করেছ এবং সেই ব্যক্তির রক্তের জন্য আমাদেরই অপরাধী সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্যে দৃঢ়সংকল্প হয়েছ।”
২৯ পিতর ও অন্য প্রেরিতশিষ্যেরা উত্তর দিলেন, “মানুষের চেয়ে আমরা বরং ঈশ্বরের আদেশই পালন করব! 
৩০ আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই যীশুকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন—যাঁকে আপনারা একটি গাছের উপরে টাঙিয়ে হত্যা করেছিলেন। 
৩১ ঈশ্বর তাঁকে অধিপতি ও উদ্ধারকর্তা করে তাঁর ডানদিকে উন্নীত করেছেন, যেন তিনি ইস্রায়েলকে মন পরিবর্তনের পথে চালনা করতে ও পাপের ক্ষমা দিতে পারেন। 
৩২ আমরা এই সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী, আর পবিত্র আত্মাও সাক্ষী, যাঁকে ঈশ্বর, যারা তাঁর আজ্ঞা পালন করে, তাদের দান করেছেন।”
৩৩ একথা শুনে তাঁরা ক্রোধে উন্মত্ত হলেন এবং তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দিতে চাইলেন। 
৩৪ কিন্তু গমলীয়েল নামে একজন ফরিশী, যিনি শাস্ত্রবিদ ও সর্বসাধারণের কাছে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন, তিনি উঠে দাঁড়ালেন ও আদেশ দিলেন, যেন কিছুক্ষণের জন্য ওদেরকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
৩৫ এরপর তিনি মহাসভাকে সম্বোধন করে বললেন, “হে ইস্রায়েলী জনগণ, এই লোকেদের নিয়ে আপনারা যা করতে চলেছেন, সে সম্পর্কে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। 
৩৬ কিছুদিন আগে, থুদা উপস্থিত হয়ে নিজেকে এক মহাপুরুষ বলে দাবি করেছিল এবং প্রায় চারশো মানুষ তার পাশে জড়ো হয়েছিল। সে নিহত হল ও তার অনুগামীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ায় সবকিছুই ব্যর্থ হয়েছিল; কারো আর অস্তিত্ব রইল না। 
৩৭ তারপরে গালীলীয় যিহূদা জনগণনার সময়ে উপস্থিত হয়ে কিছু মানুষকে বিদ্রোহের পথে চালিত করল। সেও নিহত হল ও তার সমস্ত অনুগামী ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ল। 
৩৮ সেই কারণে, বর্তমান বিষয়টি সম্পর্কে আমি তোমাদের পরামর্শ দিই, এই লোকেরা যেমন আছে, থাকতে দাও! ওদের চলে যেতে দাও! কারণ ওদের অভিপ্রায় বা কাজকর্ম যদি মানুষ থেকে হয়, তবে তা ব্যর্থ হবে। 
৩৯ কিন্তু তা যদি ঈশ্বর থেকে হয়, তোমরা এদের আটকাতে পারবে না; তোমরা কেবলমাত্র দেখতে পাবে যে, তোমরা নিজেরাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছ।”
৪০ তাঁরা তখন তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করল। তাঁরা প্রেরিতশিষ্যদের ভিতরে ডেকে এনে চাবুক মারলেন। তাঁরা তাঁদের আদেশ দিলেন, তাঁরা যেন যীশুর নামে কোনো কথা না বলেন। তারপর তাঁরা তাঁদের চলে যেতে দিলেন।
৪১ প্রেরিতশিষ্যেরা আনন্দ করতে করতে মহাসভা ত্যাগ করলেন, কারণ তাঁরা সেই নামের কারণে অপমান ভোগ করার জন্য যোগ্য বলে গণ্য হয়েছিলেন। প্রেরিত ৫

লক্ষ্য করুন কিভাবে ইহূদি নেতারা তাদের বার্তাকে থামাতে বিরাট প্রচেষ্টা করল I আজকের সরকারের মতন যারা নতুন আন্দোলন সম্পকে ভীত তারা  গ্রেফতার করলো, ভয় দেখালো, প্রহার করল এবং অবশেষে তাদের থামাতে চেষ্টা করতে শিষ্যদের হত্যা করল (কতিপয়কে) I এই শিষ্যরা তাদের বার্তাকে জেরুজালেমে ঘোষণা করল – সেই একই নগর যেখনে অল্প কয়েক সপ্তাহ পূর্বে ঈসা আল মসীহর চেহারায় কাউকে প্রকাশ্যে প্রাণদণ্ড দিয়ে কবর দেওয়া  হয়েছিল I কিন্তু কাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল? নবীকে? বা তার মতন দেখতে তৈরী করা যুজাসকে? 

এখন আমাদের বিকল্পগুলোকে দেখা যাক এবং দেখি কি অর্থ হয় I 

ঈসা আল মসীহর দেহ এবং সমাধিটি

সমাধিটির সম্বন্ধে দুটি বিকল্প আছে I হয় সমাধিটি খালি ছিল বা তখনও এটিতে নবীর মতন দেখতে একটি দেহ রয়েছিল I আর কোনো বিকল্প নেই I

আমরা তত্বটিকে মেনে নি যে যুদাসকে নবীর মতন দেখতে তৈরী করা হয়েছিল, তার বদলে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তারপরে তার দেহকে (নবীর  সাদৃশ্যে) কবরে রাখা হয়েছিল I এখন পরবর্তী ঘটনাগুলোর সম্বন্ধে ভাবুন যাকে  আমরা ইতিহাসের ঘটনা থেকে জানি I যোসেফাস, তাসিতাস, এবং প্রেরিতের কার্য সকল আমাদের বলে যে শিষ্যরা তাদের বার্তাকে জেরুজালেমে আরম্ভ করেছিল এবং কর্ত্তৃপক্ষরা সেখানে ক্রুশবিদ্ধের (যুদাসের যাকে নবীর মত দেখতে ছিল – যেহেতু আমরা তত্ত্বটিকে মেনে নিয়েছি) পরে শিষ্যদের বার্তার বিরধিতায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল I তবে এই তত্বটি স্বীকার করে যে যুদাস মৃত থেকেছিল I এই তত্বের মধ্যে, দেহ কবরে (তবে তখনও নবীর চেহারায় রুপান্তর করা হয়েছিল) থেকেছিল I শিষ্যরা, সরকার, তাসিতাস, যোসেফাস – প্রত্যেকে ভুলকরে ভাববে দেহটি নবীর ছিল তবে আসলে এটি যুদাসের (যীশুর মতন দেখতে) মৃত দেহ ছিল I     

এটি একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে I রোমীয় এবং ইহূদি নেতাদের কেন জেরুজালেমে একটি পুনরুত্থানের গল্পকে থামাতে এই ধরণের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় যদি এই দেহটি তখনও কবরের মধ্যে ছিল, নবীর মৃত্যু থেকে উত্থানের বার্তা সম্পর্কে শিষ্যদের প্রকাশ্য বার্তার ঠিক পাশে? যদি যুদাসের দেহ (ঈসা আল মসীহর মতন দেখতে) তখনও কবরের মধ্যে ছিল তবে কর্ত্তৃপক্ষদের পক্ষে এটি একটি সহজ বিষয় হোত এই দেহটিকে প্রত্যেককে দেখাতে এবং এইভাবে বন্দী, অত্যাচার এবং অবশেষে তাদের শহীদ না করে শিষ্যদের (যারা বলল যে তিনি উত্থিত হয়েছেন) খন্ডন করতে পারতো I তাদের এইরকম না করার কারণ ছিল যে সেখানে দেখাবার জন্য কোনো দেহ ছিল না – সমাধিটি খালি ছিল I    

কালো পাথর, কাবা এবং মক্কা ও মদিনার মসজিদ চিত্রণ হিসাবে  

৯৩০ খ্রিস্টাব্দে (৩১৮ হিজরী) একটি শিয়া দল তৎকালীন আব্বাসীয় শাসকদের বিরোধিতা করে কালো পাথর (আল-হাজারু আল-আসওয়াদ) চুরি করে এবং মক্কার কাবা থেকে সরিয়ে ফেলে। কাবায় ফেরত দেওয়ার আগে তারা এটি ২৩ বছর ধরে ধরে রেখেছিল। কালো পাথর নিখোঁজ হতে পারে।

এইরকম একটি পরিস্থিতির কল্পনা করুন যেখানে একটি গোষ্ঠী প্রকাশ্যে ভিড়ের সামনে ঘোষণা করে যে মক্কার মহান মসজিদে (আল-মসজিদ আল-হারাম) কাবার পূর্ব কোনের কালো পাথরটি আর নেই I তাদের বার্তাটি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে মসজিদে তীর্থযাত্রীরা বিশ্বাস করতে আরম্ভ করল যে কালো পাথরটি হারিয়ে গেছে I পবিত্র দুই মসজিদের (খাদিম আল- হার্মায়ান আস-সারিফায়্ন) প্রহরীরা এই ধরণের একটি বার্তার বিরূদ্ধে লড়তে পারত? বার্তাটি যদি মিথ্যা হত এবং কালো পাথর তখনও কাবার মধ্যে থাকত তবে প্রহরীদের পক্ষে এই বার্তাটিকে বন্ধ করার সর্বোত্তম উপায় হোত প্রকাশ্যে দেখানো যে কালো পাথরটি তখনও কাবাতে ছিল এবং এটি কয়েক শতাব্দী ধরে রয়েছে I তখন এই ধারনাটি তৎক্ষনাত অযোগ্য হয়ে পড়ত I মক্কার মসজিদে কালো পাথরটির সানিধ্য এটিকে সম্ভব করে তোলে I বিপরীত দিকে, প্রহরীরা যদি এই ধারণাকে খন্ড করতে কালো পাথরটিকে না দেখাতে পারে, তবে এটি দেখায় যে কালো পাথরটি সত্যই ৩১৮ হিজরীতে হারিয়ে গেছে I        

যাইহোক, এই গোষ্ঠী যদি মদিনার ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ মসজিদ (আল-মসজিদ আন-নবাবী) থেকে ঘোষণা করে যে কালো পাথরটিকে মক্কার কাবা (৪৫০ কিলো মিটার দুরে) থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তবে দুই পবিত্র মসজিদের প্রহরীদের পক্ষে আরও কঠিন হয় তাদের গল্পকে খণ্ডন করতে যেহেতু মদিনার লোকদের কালো পাথরটিকে দেখানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে যা বহু দুরে  রয়েছে I    

এটির সম্পর্কে বিরোধের সাথে কোনো পবিত্র বস্তুর ঘনিষ্ঠতা পরীক্ষা করা নিকটবর্তী হওয়ার ফলে এটিকে খণ্ডন করা বা এর সম্বন্ধে দাবিকে যাচাই করা সহজ করে তোলে I

ইহূদি নেতারা পুনরুত্থানের বার্তাটির বিরোধিতা করেছিলেন একটি দেহ দিয়ে এটির খণ্ডন করেন নি

এই নীতিটি জেরুজালেমের যুদাস/ঈসার দেহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য I যে সমাধিটিতে যুদাসের আপাত দেহটি (ঈসার মতন দেখতে) রাখা ছিল তা মন্দির থেকে মাত্র কয়েক মিটার দুরে ছিল যেখানে ঈসা আল মসীহর শিষ্যরা ভিড়কে উচ্চৈস্বরে সম্বোধন করছিল যে নবী মৃত থেকে উত্থাপিত হয়েছেন I ইহূদি নেতাদের পক্ষে শুধুমাত্র দেহটিকে (ঈসার মতন দেখতে) সমাধির মধ্যে দেখিয়ে তাদের পুনরুত্থানের বার্তাকে অযোগ্য প্রমানিত করা সহজ ছিল I এটি একটি ঘটনা  যে পুনরুত্থানের বার্তা (যেটিকে তখনও সমাধিতে থাকা একটি দেহের সাহায্যে খণ্ডন করা যায়) সমাধির কাছেই আরম্ভ হয়েছিল যেখানে প্রত্যেকের দ্বারা স্বাক্ষ্যপ্রমাণকে দেখান যেতে পারত I যেহেতু ইহূদি নেতারা একটি দেহ দেখিয়ে তাদের বার্তাকে খণ্ডন করেনি সেহেতু সেখানে দেখানোর জন্য কোনো দেহ ছিল না I       

জেরুজালেম পুনরুত্থানের বার্তাকে কয়েক সহস্র বিশ্বাস করেছিল

হাজার হাজার মানুষ এই সময়ে জেরুজালেমে ইসা আল মসীহের শারীরিক পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতে শুরু করে I আপনি যদি ভিড়ের মধ্যে একজন হতেন এবং পিটারকে শুনতেন, আশ্চর্য বোধ করতেন তার বার্তা সত্য কিনা, তবে আপনি কি অন্তত মধ্যাহ্নভোজের একটি বিরতি নিয়ে সমাধিতে গিয়ে নিজে একবার দেখে আসতেন না যে সেখানে তখনও কোনো দেহ ছিল কিনা? যুদাসের দেহ (নবী ঈসা আল মসীহর মতন দেখতে) যদি সমাধির মধ্যে তখনও থাকত তবে প্রেরিতদের বার্তাকে কেউ বিশ্বাস করতো না I কিন্তু ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যে তারা জেরুজালেমে শুরু করে হাজার হাজার অনুসারী অর্জন করেছিল। জেরুজালেমের চারপাশে এখনও নবীর মতো দেখতে একটি দেহের সাথে এটি অসম্ভব ছিল। জুডাসের দেহ সমাধিতে থাকা অযৌক্তিকতার দিকে নিয়ে যায়। এর কোনো অর্থ হয় না I      

যুদাসের দেহ তত্ব খালি সমাধির ব্যখ্যা করতে পারে না I   

যুদাসের এই তত্বের সমস্যা হলো ঈসা আল মসীহর ন্যায় চেহারায় রূপান্তরিত হওয়া এবং পরে ক্রুশবিদ্ধ করা এবং তার স্থানে সমাধি দেওয়া, যেটি একটি অধিকৃত সমাধি দিয়ে শেষ হয় I তবে খালি সমাধি শিষ্যদের পক্ষে একমাত্র ব্যাখ্যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে পেন্টেকোষ্টে, নবীর পুনরুত্থানের উপরে ভিত্তিশীল একটি আন্দোলন আরম্ভ করতে সক্ষম হয় সেই একই নগরে যেখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল I     

সেখানে কেবল দুটিমাত্র বিকল্প ছিল, এক নবীর মতন দেখতে যুদাসের দেহের সাহায্যে যা সমাধিতে রয়ে গেছে, আর একটি খালি সমাধির সাথে ঈসা আল মসীহর পুনরুত্থান I যেহেতু সমাধিতে থাকা দেহ অবাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়, তাহলে ঈসা আল মসীহ অবশ্যই রোমীয়দের হাতে মারা গিয়ে থাকবে এবং সমাধি থেকে পুনরুত্থিত হয়ে থাকবেন যেমন পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, তার  জীবনের উপহার আমাদেরকে দিয়েছেন I     

যাজক এবং পন্ডিতদের দ্বারা রিসার্চার কামিং রিভিউস সুন্নি লিটারেচার ব্যাখ্যা সমূহ এই প্রশ্নটিকে আরও অন্বেষণ করে I    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *