Skip to content

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর চিহ্ন ১: দোয়া

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)! তিনি আব্রাহাম ও ইব্রাম (আঃ) নামেও পরিচিত৷ ইহুদি, খ্রীষ্টান ও ইসলাম এই তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্ম সকল তাকে অনুসরণ করণার্থে আদর্শ রূপে দেখে৷ আরবগণ ও ইহুদিরা তাদের শারীরিক বংশ উৎপত্তিটিকে তার ছেলে ইসমাইল ও ইসহাকের মাধ্যমে খুঁজে বের করে৷  তিনি নবীদের মধ্যেও অতি গুরুত্বপূর্ণ নবী কারণ পরবর্তী নবীগণ তার অনুকরণ করেন৷ তাই আমরা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর চিহ্নটিকে বিভিন্ন অংশে দেখব৷ পাক কুরআনে ও তৌরাত শরীফে তার চিহ্নটিকে প্রথমে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন৷

আমরা পাক কুরআনের আয়াতটিতে দেখি যে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর থেকে লোকেদের ‘জাতিগুলো’ এসেছে৷ পরে এই লোকগুলো একটি ‘মহান রাজ্যে’ পরিণত হয়েছিল৷ কিন্তু একটি পুরুষের জন্য ‘জাতি’ উৎপাদনের জন্য অন্তত একটি ছেলে থাকতে হবে, এবং একটি ‘মহান রাজ্যে’ পরিণত হওয়ার আগে একটি দেশও থাকতে হবে৷

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর জন্য ওয়াদা

তৌরাত শরীফের অংশটি (পয়াদেশ ১২:১-৭) দেখায় যে কিভাবে আল্লাহ্ ‘জাতি’ এবং একটি ‘মহান রাজ্যের’ ওয়াদাটিকে পূর্ণ করবেন যা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর থেকে আসবে৷ আল্লাহ্ তাকে একটি ওয়াদা করেছিলেন যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বুনিয়াদ ছিল৷ আসুন এটিকে আমরা আরো বিশদভাবে দেখি৷  আমরা দেখি যে আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে বলেন:

2 “আমি তোমাকে একটি মহান জাতি হিসাবে পরিণত করব,
আমি তোমাকে আশীর্বাদ করব;
আমি আপনার নাম মহান করব,
এবং আপনি একটি আশীর্বাদ হবে।
3 যারা তোমাকে আশীর্বাদ করে আমি তাদের আশীর্বাদ করব,
আর যে তোমাকে অভিশাপ দেয় আমি অভিশাপ দেব;
এবং পৃথিবীর সমস্ত লোক
আপনার মাধ্যমে ধন্য হবে। “

পয়দায়েশ ১২:২-৩

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর মহানতা

আজকের দিনে আমি যেখানে বসবাস করি সেখানকার বহু লোকেরা আশ্চর্যান্বিত হয় ও বলে আল্লাহ্ আছেন কি না ও কিভাবে একজন জানবে যে তিনি সত্যিই তৌরাত শরীফের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশিত করেছিলেন?  আমাদের সম্মুখে একটি ওয়াদা রয়েছে, যার কিছু অংশকে আমরা যাচাই করতে পারি৷  এই প্রকাশটির অন্তিমে উল্লেখ করা হয়েছে যে আল্লাহ্ প্রতক্ষ্যভাবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে ওয়াদা করেছিলেন যে ‘আমি তোমার নামটিকে মহান করব৷’ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে রয়েছি এবং হযরত ইব্রাহিম/আব্রাহাম/আব্রাম (আঃ)-এর নামটি  দুনিয়াতে সবচাইতে পরিচিত নাম৷ এই ওয়াদাটি আক্ষরিকভাবে ঐতিহাসিকভাবে সত্য হয়েছে৷ তৌরাত শরীফের আরম্ভের প্রতিলিপির দস্তাবেজটি যা আজও রয়েছে যা ডেড সি স্ক্রল থেকে এসেছে যার লেখার তারিখটি ছিল ২০০-১০০ খ্রিস্টপূর্ব৷ এর অর্থটি হল যে এই ওয়াদাটিকে সেকেলেই লেখা হয়ে গিয়েছিল৷ সেই সময়টিতে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর নামটি তেমন প্রচলিত ছিল না-কেবল ইহুদিদের কিছু লোক জানত যারা তৌরাত শরীফটিকে অনুসরণ করত৷ কিন্তু বর্তমানে তার নামটি মহান, তাই আমরা এই পূর্ণতাটিকে যাচাই করতে পারি যা কেবল এটিকে লেখার পরে এসেছিল, আগে নয়৷

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর প্রতি করা ওয়াদাটির এই অংশটি নিশ্চয়ই ঘটেছে, যা অ-ঈমানদারদের কাছেও স্পষ্ট, এবং এটি আমাদেরকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর প্রতি করা আল্লাহ্‌র ওয়াদাটির বাকি অংশটিকে বুঝতে আরো বেশি আত্মবিশ্বাস প্রদান করে৷ আসুন এটিকে পর্যবেক্ষণ করা বহাল রাখি৷

আমাদের জন্য দোয়া

এছাড়া, আমরা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর থেকে আগত একটি ‘মহান জাতিটিকে’ ও হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে দেওয়া ‘দোয়াটির’ প্রতিজ্ঞাটিকে দেখতে পারি৷ কিন্তু আরো অন্য কিছুও রয়েছে, দোয়াটি কেবল হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর জন্যই ছিল না কারণ এটি বলে যে “দুনিয়ার সকল লোকেরা তোমার মাধ্যমে দোয়া পাবে” (অর্থাৎ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর মাধ্যমে)৷ এটি আমাকে ও আপনাকে লক্ষ্য করতে সজাগ করে৷ কারণ আপনি ও আমি ‘দুনিয়ার সকল লোকেদের’ অংশ- সেক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম, জাতি, নিবাস স্থান, আমাদের সামাজিক স্তর অথবা আমাদের ভাষা যাই হোক না কেন৷ এই ওয়াদাটি আজকের দিনে জীবিত সকল লোকেদের জন্য৷ এটি আপনার জন্যও একটি ওয়াদা৷  আমাদের ভিন্ন ধর্ম, জাতি ও ভাষা প্রায়ই লোকেদেরকে আলাদা করে এবং সংঘর্ষের কারণ হয়, এটি এমন একটি ওয়াদা যা এই সকল বিষয়কে উপেক্ষা করে যা সাধারণত আমাদেরকে ভাগ করে৷ কিভাবে? কখন? কি ধরনের দোয়া? এই পর্যায়ে এটি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত করা হয়নি, কিন্তু এই চিহ্নটি একটি ওয়াদার জন্ম দিয়েছিল যা হল হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর মাধ্যমে আপনার ও আমার জন্য৷ যেহেতু আমরা জানি যে এই ওয়াদাটির একটি অংশ সত্য হয়েছে, তাই আমরা সুনিশ্চিত হতে পারি যে এই অন্য অংশটি যা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাও স্পষ্ট ও আক্ষরিকভাবে পূর্ণ হবে- আমাদের কেবল এটিকে খোলার একটি চাবি খুঁজতে হবে৷

আমরা লক্ষ্য করতে পারি যে যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এই ওয়াদাটিকে পেয়েছিলেন তখন তিনি আল্লাহ্‌র হুকুম পালন করেছিলেন এবং…

“তাই মাবুদের কথামতই তিনি বেরিয়ে পড়লেন”

আয়াত ৪
Capture 1.PNG

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর উর থেকে কেনান দেশে যাওয়ার মানচিত্র

ওয়াদার দেশে যেতে কত সময় লেগেছিল? তার যাত্রাটিকে এখানে দেওয়া মানচিত্রটি দেখায়৷ তিনি বাস্তবে উর শহরে (বর্তমানে দক্ষিণ ইরাক) বসবাস করতেন এবং হারণ শহরে (বর্তমানে উত্তর ইরাক) গিয়েছিলেন৷  Ibহযরত ইব্রাহিম (আঃ) তারপর কেনান দেশে (তার সময়ে সেই দেশটি কেনান নামে পরিচিত ছিল) যাত্রা করেছিলেন৷ আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন যে এটি একটি লম্বা যাত্রা ছিল৷ Hতিনি হয়ত উঠ, ঘোড়া অথবা গাধার পিঠে চড়ে যাত্রা করেছিলেন তাই বহু মাস লেগে গিয়েছিল৷ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার পরিবার ত্যাগ করেছিলেন, তার আরামের জীবনটিকে ত্যাগ করেছিলেন (মেসোপটেমিয়া এই সময়ে সভ্যতার কেন্দ্র ছিল), তার সুরক্ষা এবং তার চেনা সকল কিছুকে ত্যাগ করে এমন একটি জাগয়ায় গিয়েছিলেন যা তার জন্য অজানা ছিল৷ তৌরাত শরীফ আমাদেরকে বলে যে তখন তিনি ৭৫ বছরের ছিলেন!

পূর্ববর্তী নবীদের ন্যায় পশুদের কোরবানী দেওয়া হয়

তৌরাত শরীফ আরও বলে যে যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কেনান দেশে সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে গিয়েছিলেন:

 “তাই তিনি মাবুদের জন্য একটি কোরবানগাহ্ নির্মাণ করেছিলেন”

আয়াত ৭

তার পূর্বে হাবিল ও হজরত নূহ্ (আঃ)-এর মত, সেই কোরবানগাহে্ তিনিও আল্লাহ্‌র জন্য পশুদের কোরবানী দিলেন৷  

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার বার্ধক্যের সময়ে এই নতুন দেশে যাত্রা করার জন্য তার জীবনটিকে বহু কিছু ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন৷ কিন্তু এমনটি করার মাধ্যমে তিনি আল্লাহ্‌র ওয়াদাটির প্রতি নিজেকে সমর্পিত করেছিলেন৷ এই কারণে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা আগামীতে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর চিহ্ন ২ দেখা জারি রাখব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *