Skip to content

যাবুরের পরিচিতি

দায়ূদ বা দায়ুদ (আবারও ডেভিড – পিবিইউএইচ) ভাববাদীদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ I ভাববাদী ইব্রাহিম বংশধর সমূহ এবং এক মহান জাতির প্রতিশ্রুতি সহকারে একটি নতুন প্রয়োগ আরম্ভ করলেন (অর্থাৎ এমন উপায় যাতে আল্লাহ লোকেদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়) – এবং তারপরে তিনি মহান বলিদান দিলেন I ভাববাদী মশি (পিবিইউএইচ) নিস্তারপর্বের বলিদানের মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের দাসত্ব থেকে মুক্ত করলেন –– এবং তারপরে তাদের একটি ব্যবস্থা দিলেন যাতে তারা একটি জাতিতে পরিণত হতে পারে I কিন্তু যার অভাব ছিল তা হ’ল একজন রাজার যিনি এমনভাবে শাসন করবেন যাতে তারা আল্লাহর থেকে অভিশাপের বদলে আশীর্বাদ পাবে I তিনি আর একটি প্রয়োগ আরম্ভ করলেন – যিরূশালেম থেকে রাজার শাসন I    

রাজা দায়ূদ (ডেভিড – পিবিইউএইচ) কে ছিলেন?

ইস্রায়েলীয়দের ইতিহাসের কালপঞ্জি থেকে আপনি দেখতে পারেন যে ইব্রাহিমের (পিবিইউএইচ) থেকে 1000 বছর পরে এবং মশির (পিবিইউএইচ) থেকে 500 বছর পরে 1000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দের আশেপাশে দায়ূদ (পিবিইউএইচ) বসবাস করতেন I দায়ূদ (পিবিইউএইচ) একজন মেষ পালক হিসাবে তার পরিবারের মেষ সমূহ চরিয়ে জীবন যাত্রা শুরু করলেন I গলিয়াৎ – এক দানব এবং ইস্রায়েলের প্রবল শত্রু – ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করতে এক সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিলেন I ইস্রায়েলীয়রা নিরুৎসাহ এবং পরাজিত হ’ল I দায়ূদ (পিবিইউএইচ) যদিও তাকে চ্যালেঞ্জ করল এবং যুদ্ধে নিহত করল I এটা এতটা উল্লেখযোগ্য ছিল যে একজন কমবয়সী মেষ পালক বালক এক দানব সৈন্যকে হত্যা করতে পারল যাতে করে দায়ূদ (পিবিইউএইচ) বিখ্যাত হয়ে  গেল I তারপরে ইস্রায়েলীয়রা তাদের শত্রুদের পরাজিত করতে অগ্রসর হ’ল I দায়ূদ (পিবিইউএইচ) এবং গলিয়াতের এই যুদ্ধ সম্বন্ধে কোরান আমাদেরকে নিম্নলিখিত আয়াতের মধ্যে জানায়:      

 তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।

সুরাহ 2:251

এই যুদ্ধের পরে এক বীর হিসাবে দায়ূদের খ্যাতি বৃদ্ধি পেল I যদিও, একমাত্র সুদীর্ঘ এবং কঠিন অভিজ্ঞতার পরেই তিনি রাজা হলেন কারণ পরদেশে এবং ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তার অনেক শত্রু ছিল, যারা তার বিরোধিতা করেছিল I বাইবেলের (আল কিতাব) 1 এবং 2 শমূয়েলের বইগুলো এই লড়াই এবং দায়ূদের (পিবিইউএইচ) বিজয় সমূহের বর্ণনা দেয় I শমূয়েল (পিবিইউএইচ) সেই ভাববাদী ছিলেন যিনি রাজা রূপে দায়ূদকে (পিবিইউএইচ) অভিষিক্ত করেছিলেন I  

এছাড়াও দায়ূদ (পিবিইউএইচ) একজন সঙ্গীতকার ছিলেন যিনি আল্লাহর প্রতি সুন্দর গীত এবং কবিতা সমূহ রচনা করেছিলেন I এটি সুরাহ সাদের (সুরাহ 38 – সাদের চিঠি) নিম্নলিখিত আয়াতের মধ্যে উল্লিখিত রয়েছে 

 তারা যা বলে তাতে আপনি সবর করুন এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদকে স্মরণ করুন। সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত;আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।আমি তাঁর সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাঁকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী বাগ্নীতা।

সুরাহ সাদ 38:17-20

এই আয়াতগুলো দায়ূদের (পিবিইউএইচ) বীরত্বের শক্তিকে অনুমোদন করে, কিন্তু এছাড়াও ‘প্রশংসাগুলো’ ততটাই সুন্দর ছিল যতটা পক্ষীদের দ্বারা তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি গীত সমূহ I এবং একজন রাজা হিসাবে তাকে স্বয়ং আল্লাহর দ্বারা ‘বাক্যের’ মধ্যে জ্ঞান ‘প্রদত্ত’ হয়েছিল I দায়ূদের (পিবিইউএইচ) এই গীত এবং কবিতাগুলো নথিভুক্ত হয়েছিল এবং যাবুরের (বা যাবোর) – বইটি রচিত হয়েছিল – যাকে গীতসংহিতা রূপেও জানা যায় I কারণ তার বাক্যের জ্ঞান আল্লাহর দ্বারা তাকে দেওয়া হয়েছিল, এছাড়াও দায়ূদের (পিবিইউএইচ) এই নথিগুলো পবিত্র ছিল এবং তৌরাতের ন্যায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল I কোরান এটিকে এইভাবে ব্যাখ্যা করে:       

আপনার পালনকর্তা তাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন, যারা আকাশসমূহে ও ভুপৃষ্ঠে রয়েছে। আমি তো কতক পয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং দাউদকে যবুর দান করেছি। 

সুরাহ 17:55

সুলেমান – যাবুরকে চালিয়ে নিয়ে  যায়

কিন্তু এই অনুপ্রাণিত রচনাগুলো দায়ূদের (পিবিইউএইচ) সাথে শেষ হয়ে যায় নি যিনি রাজা রূপে বৃদ্ধ বয়সে মারা যান I তার পুত্র এবং উত্তরাধিকারী সুলেমানও (বা শলোমন – পিবিইউএইচ), তার জ্ঞানের জন্য আল্লাহর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন I সুরাহ সাদ এটিকে এইভাবে বর্ণনা করে:      

 আমি দাউদকে সোলায়মান দান করেছি। সে একজন উত্তম বান্দা। সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল।

সুরাহ সাদ 38:30

এবং

 এবং স্মরণ করুন দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল।অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম।

সুরাহ 21:78-79

 আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তাঁরা বলে ছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তাঁর অনেক মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

সুরাহ 27:15

তাই সুলেমান (পিবিইউএইচ), অনুপ্রাণিত বইগুলোকে বাইবেলের সঙ্গে যুক্ত করে চলতে থাকলেন I তার বইগুলোকে হিতোপদেশ, উপদেশক, এবং পরমগীত বলা হয় I 

আরও ভাববাদীগণ

কিন্তু সুলেমানের (পিবিইউএইচ) চলে যাওয়ার সাথে সাথে, উত্তরাধিকারী রাজারা তৌরাতকে অনুসরণ করে নি এবং এই পরবর্তী রাজাদের মধ্যে কাউকেও অনুপ্রাণিত বার্তাগুলো দেওয়া হয় নি I ইস্রায়েলের রাজাদের মধ্যে কেবলমাত্র দায়ূদ এবং সুলেমানের (পিবিইউটি) কাছে আল্লাহর দ্বারা অনুপ্রাণিত রচনাগুলো ছিল – তারা রাজা তথা ভাববাদী ছিলেন I তবুও সুলেমানের পরবর্তী রাজাদের কাছে আল্লাহ সাবধানের বার্তার সাথে ভাববাদীদের পাঠিয়েছিলেন I যুনুস (বা যোনাহ) ভাববাদী এই ভাববাদীদের মধ্যে অন্যতম  ছিলেন যাকে এক বৃহৎ মৎস্যর দ্বারা গলাধঃকরণ করা হয়েছিল I এটি প্রায় 300 বছর ধরে চলতে থাকল – বহু ভাববাদীদের পাঠানো হয়েছিল I যেমনটি এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, বাবিলের ব্যাবিলনিয়দের দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের অবশেষে পরাজিত করা হল এবং নির্বাসনে পাঠানো হল, এবং তারা পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কোরসের অধীনে যিরূশালেমে প্রত্যাবর্তন করল I এই সময় জুড়ে ভাববাদীদের অবিরত পাঠান এবং বার্তা দেওয়া হতে থাকল – আর এই বার্তাগুলোকে বাইবেলের পুরনো নিয়মে লেখা হয়েছিল I       

যাবুর – মসীহর আগমনের প্রতীক্ষায়

এই সমস্ত ভাববাদীরা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সাবধানবাণী সমুহের মধ্যে, তারা আবারও ইঞ্জিলের জন্য ভিত স্থাপন করল I আসলে, ‘মসীহ’  শিরোনামটি যাবুরের প্রথম দিকে দায়ূদের (পিবিইউএইচ) দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল এবং পরবর্তী ভাববাদীরা আরও বিস্তৃত রূপে মসীহর আগমন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন I তৌরাত অনুসরণের ক্ষেত্রে পরবর্তী রাজাদের ব্যর্থতা, এবং ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা আজ্ঞাগুলোকে মেনে চলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রতি এটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় I সেই সময়ের লোকেদের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিশ্রুতি, আশা এবং মসীহর আগমনের আকাঙ্খার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল I ভাববাদীদের মতন তারা ভবিষ্যতের দিকে দেখছিল, ঠিক যেমন মশির  (পিবিইউএইচ) তৌরাতের মধ্যে প্রয়োজন হয়েছিল I আর এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমাদের আধুনিক দিনে আমাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের মধ্যে তাদের জন্য যারা সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে যেভাবে আমাদের উচিত আমরা জানি I আমাদের ব্যর্থতার মাঝে মসীহ আশার এক আলোক-সংকেত হওয়ার কথা ছিল I    

ঈসা আল মসীহকে কিভাবে দেখা হয় এবং যাবুরকে ব্যবহার করা হয়

আসলে, ভাববাদী ঈসা আল মসীহ তার সঙ্গী এবং অনুগামীদের সাহায্য করতে এবং ইঞ্জিলকে বুঝতে স্বয়ং যাবুরকে ব্যবহার করেছিলেন I এটি মসীহর সম্বন্ধে যা বলে তা হ’ল যে 

27 আর তিনি মোশির পুস্তক থেকে শুরু করে ভাববাদীদের পুস্তকে তাঁর বিষয়ে যা যা লেখা আছে, শাস্ত্রের সে সব কথা তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন৷

লুক 24:27

‘ও সমুদয় ভাববাদীরা’ বাক্যাংশটি পুরনো নিয়মের যাবুরের অনুগামী এই সকল ভাববাদীদের বোঝায় I ঈসা আল মসীহ (পিবিইউএইচ) তার সঙ্গীদের বোঝাতে  চেয়েছিলেন যাবুর কিভাবে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে I ঈসা আল মসীহ (পিবিউএইচ) তারপরে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন আয়াতের দ্বারা: 

44 তিনি তাঁদের বললেন, ‘আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখনই তোমাদের এসব কথা বলেছিলাম, আমার সম্বন্ধে মোশির বিধি-ব্যবস্থায়, ভাববাদীদের পুস্তকে ও গীতসংহিতায় যা কিছু লেখা হয়েছে তা পূর্ণ হতেই হবে৷’
45 এরপর তিনি তাঁদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, য়েন তাঁরা শাস্ত্রের কথা বুঝতে

পারেন৷ লুক24:44-45

যখন এটি এখানে ‘ভাববাদী এবং গীতসংহিতা’ কে বোঝায় তখন এর অর্থ হয় দায়ূদের লেখা যাবুর (গীতসংহিতা) এবং তার পরে পরবর্তী বইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল (‘ভাববাদীদের’) I ঈসা আল মসীহ (পিবিইউএইচ) ‘তাদের মন উন্মুক্ত’ করতে চেয়েছিলেন আর কেবল তখনই তারা ‘শাস্ত্রীয় বচন বুঝতে’ (অর্থাৎ তৌরাত এবং যাবুরের অনুপ্রাণিত বইগুলো) সক্ষম হত I পরবর্তী ধারাবাহিক নিবন্ধগুলোর মধ্যে আমাদের লক্ষ্য হল তাকে অনুসরণ করা যাকে ঈসা আল মসীহ (পিবইউএইচ) এই বইগুলোর মধ্য থেকে দেখিয়েছিলেন যাতে আমরাও আমাদের মন উন্মুক্ত করতে পারি এবং ইঞ্জিলকে বুঝতে পারি I    

একটি ঐতিহাসিক কালপঞ্জির মধ্যে দায়ূদ (পিবিইউএইচ) এবং যাবুরের ভাববাদীরা 

নীচের চিত্রটি এই সকল ভাববাদীদের অধিকাংশকে (কিন্তু সকলকে নয় যেহেতু সকলের জন্য সেখানে স্থান নেই) সংক্ষিপ্তসার করে I বারগুলোর বিস্তার প্রত্যেক ভাববাদীর জীবনকালকে দেখায় I কালপঞ্জির রঙিন কোড সেই একইভাবে ইস্রায়েলীয়দের অবস্থাকে দেখায় যেমনভাবে আমরা যখন মশির আশীর্বাদ ও অভিশাপের থেকে তাদের ইতিহাসকে অনুসরণ করেছিলাম I   

হযরত দাউদ (আ।) এবং জাবুরের কয়েকজন নবীর Timeতিহাসিক সময়রেখা

ভাববাদী দায়ূদ (পিবিইউএইচ) এবং যাবুরের কতিপয় অন্য ভাববাদীগনের ঐতিহাসিক কালপঞ্জি  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *