Skip to content
Home » হযরত যাহয়া (আঃ) পথ প্রস্তুত করেন

হযরত যাহয়া (আঃ) পথ প্রস্তুত করেন

  • by

সূরা আল-আন’আম (সূরা ৬ =গবাদি পশু সম্পত্তি) আমাদের বলে যে আমাদের ‘অনুতাপ’ করা দরকার I এটি বলে,

আমার আয়াতে বিশ্বাসী লোকেরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বল, ‘‘তোমাদের প্রতি সালাম’’। তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমাতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন আর তা হচ্ছে যদি তোমাদের কোন ব্যক্তি না জেনে অন্যায় পাপ করে, অতঃপর তাওবাহ করে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

সুরাহ আল-আন’আম ৬:৫৪

অনুতাপ কি? সুরাহ হুদে কয়েকটি আয়াত (সূরা ১১ -হুদ) আমাদের বলে 

(এটা শিক্ষা দেয়) যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাও, আর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দিবেন, আর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনি তাঁর অনুগ্রহ দানে ধন্য করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি তোমাদের উপর বড় এক কঠিন দিনের ‘আযাবের আশঙ্কা করছি।

সূরা হুদ ১১: ৩

হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে যাও, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের শক্তিকে আরো শক্তি দিয়ে বাড়িয়ে দিবেন, আর অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।

সূরা হুদ ১১:৫২

আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন, আর তাতেই তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কাজেই তাঁর কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তাঁর পানেই ফিরে এসো, আমার প্রতিপালক তো অতি নিকটে, আর তিনি আহবানে সাড়াদানকারী।’

সূরা হুদ ১১:৬১

তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই নিকট তাওবাহ কর। আমার প্রতিপালক তো পরম দয়ালু, বড়ই ভালবাসা পোষণকারী।’

সূরা হুদ ১১:৯০

দোষ স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে আল্লাহর ‘দিকে ফেরা’ হল অনুতাপ I হযরত যাহয়া (আঃ) ইঞ্জিলের মধ্যে অনুতাপ সম্বন্ধে অনেক কিছু বলেছেন যা আমরা এখানে দেখি I

আমরা দেখলাম যে হযরত মালাখি (আঃ) এর দ্বারা যাবুর সম্পন্ন হ’ল যিনি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে কেউ একজন ‘পথ প্রস্তুত করতে’ আসবে (মালাখি ৩:১) I তারপরে আমরা দেখলাম হযরত যাহয়া (আঃ) এবং মসীহর (এবং তিনি এক কুমারীর থেকে) জন্ম সম্বন্ধে জিব্রিলের দ্বারা ঘোষণার সাথে ইঞ্জিল কিভাবে উন্মুক্ত হ’ল I    

হযরত যাহয়া (আঃ) – ভাববাদী এলিয়র আত্মা এবং পরাক্রমে

ইঞ্জিল (সুসমাচার) তখন তার জন্মের পরে যাহয়া (এছাড়াও বাপ্তিস্মদাতা যোহন – আঃ বলে পরিচিত) সম্বন্ধে সেটিকে নথিভুক্ত করে: 

80আর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই শিশু আত্মাতে বলীয়ান হয়ে উঠলেন এবং ইস্রায়েলের জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ না করা পর্যন্ত, তিনি মরুপ্রান্তরে বসবাস করলেন।

লুক ১:৮০

যখন তিনি প্রান্তরে একাকী থাকতেন সুসমাচার সেটিকে নথিভুক্ত করে:

4যোহনের পোশাক ছিল উটের লোমে তৈরি এবং তার কোমরে এক চামড়ার বেল্ট জড়ানো থাকত। তিনি পঙ্গপাল ও বনমধু খেতেন।

মথি ৩:

যাহয়ার (আঃ) শক্তিশালী আত্মা তাকে প্রান্তরের মধ্যে অমসৃণ ধরণের পোষাক পড়তে এবং বন্য খাদ্য খেতে চালিত করল I তবে এটি কেবলমাত্র তার আত্মার কারণে নয় – বরং এটি একর্টি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নও ছিল I যাবুরের সমাপ্তিতে আমরা দেখলাম যে প্রস্তুতকারী যাকে আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ‘এলিয়র আত্মায়’ আসবেন I এলিয় যাবুরের আদি নবি ছিলেন যিনি আবারও প্রান্তরে থাকতেন এবং খেতেন এবং একটি:

8তারা উত্তর দিয়েছিল, “তাঁর গায়ে ছিল লোমের এক পোশাক এবং তাঁর কোমরে বাঁধা ছিল চামড়ার এক কোমরবন্ধ।”

রাজামশাই বললেন, “তিনি তিশবীয় এলিয় ছিলেন।”

২ রাজাবলি ১:৮

তাই যাহয়া (আঃ) যখন জীবনযাপন করতেন ও পোশাক পরতেন সেইভাবে তিনি করতেন, এটি ইঙ্গিত করত যে তিনিই ছিলেন আসন্ন প্রস্তুতকারী যার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিলে যে তিনি এলিয়র আত্মায় আসবেন I তার পোশাক, এবং তার জীবনযাপন এবং প্রান্তরের মধ্যে খাওয়া প্রদর্শিত চিহ্ন সমূহ ছিল যে তিনি আল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী করা পরিকল্পনার মধ্যে এসেছেন।  

ইঞ্জিলটি – ইতিহাসের মধ্যে সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত

তারপরে ইঞ্জিল আমাদের বলে যে:

1রোমান সম্রাট তিবিরীয় কৈসরের রাজত্বের পনেরোতম বছরে, যখন পন্তীয় পীলাত ছিলেন যিহূদিয়ার শাসনকর্তা, হেরোদ ছিলেন গালীল প্রদেশের সামন্ত-নৃপতি, তাঁর ভাই ফিলিপ ছিলেন ইতুরিয়া ও ত্রাখোনীতিয়া প্রদেশের সামন্ত-নৃপতি ও লুসানিয় ছিলেন অবিলিনীর সামন্ত-নৃপতি 2এবং হানন ও কায়াফা ছিলেন মহাযাজক, সেই সময় সখরিয়ের পুত্র যোহনের কাছে মরুপ্রান্তরে ঈশ্বরের বাক্য উপস্থিত হল।

লুক ৩:১-২

এই বিবৃতিটি যাহয়ার (আঃ) ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সেবাকার্য়ের সূচনা করে আর এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু ইতিহাসের অনেক নামী শাসকদের পাশে এটিকে স্থাপনের দ্বারা তার সেবাকার্যের সুচনাকে চিহ্নিত করে I সেই সময়ের শাসকদের এই ব্যাপক উল্লেখকে লক্ষ্য করুন I সুসমাচার গুলোর মধ্যে বিবরণের নির্ভুলতার অনেকটা ঐতিহাসিকভাবে যাচাই করতে এটি আমাদের অনুমতি দেয় I আপনি যদি তা করেন, আপনি দেখবেন যে তিবরিয় কৈসর, পন্তিয়াস পীলাত, হেরোদ ফিলিপ, লুষাণিয়, হানন এবং কায়াফা সকলে ধর্মনিরপেক্ষ রোমীয় থেকে নিয়ে ইহূদি ঐতিহাসিকদের মধ্যে পরিচিত ছিলেন I এমনকি বিভিন্ন শিরোনাম যা বিভিন্ন শাসকদের দেওয়া হয় (যেমন, পন্তিয়াস পীলাতের জন্য ‘দেশাধক্ষ্য’ হেরোদের জন্য ‘টেটাযার্চ, ইত্যাদি) ঐতিহাসিকভাবে সঠিক ও নির্ভুলভাবে যাচাই করা হয়েছে I এটি আমাদের মূল্যায়ন করতে অনুমতি দেয় যে একটি খাঁটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটিকে নির্ভরযোগ্যভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল I        

তিবরিয় কৈসর ১৪ খ্রীষ্টাব্দে রোমীয় সাম্রাজের সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন I সুতরাং এটি তার রাজত্বের পঞ্চদশ বছর হওয়ার অর্থ হ’ল যে যাহয়া ২৯ খ্রীষ্টাব্দের বছরের শুরুতে বার্তা পেলেন I  

যাহয়ার বার্তা – অনুতাপ এবং দোষ স্বীকারোক্তি 

তাহলে বার্তাটি কি? তার জীবন-শৈলী অনুযায়ী, তারা বার্তাটি সরল ছিল, তবে সরাসরি এবং ক্ষমতাশালী I ইঞ্জিল বলে যে:

1ওইসব দিনগুলিতে বাপ্তিষ্মদাতা যোহন, যিহূদিয়ার মরুপ্রান্তরে উপস্থিত হয়ে প্রচার করতে লাগলেন, 2“মন পরিবর্তন করো, কারণ স্বর্গরাজ্য এসে পড়ল।”

মথি ৩:১-২

অতএব তার বার্তার অংশটি একটি প্রকৃত ঘটনার ঘোষণা ছিল – যে স্বর্গ রাজ্য ‘সন্নিকট’ ছিল I আমরা দেখেছি কিভাবে যাবুরের ভাববাদীরা বহু পূর্বে আসন্ন ‘ঈশ্বরের রাজ্যের’ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন I যাহয়া (আঃ) এখন বলছিলেন যে এটি হাতের কাছে ‘নিকটস্থ’ ছিল I

তবে ‘অনুতাপ না করা’ পর্যন্ত লোকেদের রাজ্যের জন্য প্রস্তুত করা যাবে না I প্রকৃতপক্ষে, তারা যদি অনুতাপ না করে তবে তারা এই রাজ্যকে হারাবে I  অনুতাপ করা মানে “আপনার মনকে পরিবর্তন করুন; পুনর্বিবেচনা করুন; বা ভিন্নভাবে চিন্তা করুন I কিন্তু কিসের সম্বন্ধে তাদের ভিন্ন ভাবে চিন্তা করার  ছিল? যাহয়ার (আঃ) বার্তার প্রতি লোকেদের দুটি প্রতিক্রিয়া সমূহকে দেখে আমরা শিখতে পারি যে তিনি কি নির্দেশ দিচ্ছিলেন যে সেগুলো থেকে তাদের অনুতাপ করা উচিত I ইঞ্জিল তার বার্তার প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়া এর দ্বারা নথিভুক্ত করে: 

6তারা নিজের নিজের পাপস্বীকার করে জর্ডন নদীতে তাঁর কাছে বাপ্তিষ্ম নিতে লাগল।

মথি ৩:

আপনাদের হয়ত মনে আছে আদমের জন্য চিহ্নর বই সমূহের মধ্যে, কিভাবে তারা আদম এবং হবা নিষিদ্ধ ফল খেল:

8তখন সেই মানুষটি ও তাঁর স্ত্রী সেই সদাপ্রভু ঈশ্বরের হাঁটার আওয়াজ শুনতে পেলেন, যিনি দিনের পড়ন্ত বেলায় বাগানে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছিলেন, এবং তারা সদাপ্রভু ঈশ্বরকে এড়িয়ে বাগানের গাছগুলির আড়ালে লুকিয়ে পড়লেন।

দিপুস্তক ৩:

তখন থেকেই আমাদের পাপগুলো আড়াল করার এই ঝোঁক এবং আমরা এগুলো করিনি বলে তা ভান করার প্রবণতা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক I আমাদের পাপের স্বীকারোক্তি এবং অনুতাপ করা আমাদের জন্য প্রায়ই অসম্ভব I আমরা কুমারীর পুত্রের চিহ্নর মধ্যে দেখলাম যে দাউদ (আঃ) মোহম্মদের (সাঃ) ন্যায় ভাববাদীগণ তাদের পাপ সমূহ স্বীকার করতেন I সেটি আমাদের পক্ষে করা খুবই কঠিন কারণ এটি আমাদের অপরাধ এবং লজ্জাকে প্রকাশ করে – কিন্তু এটি ছাড়া অন্য যে কোনো কিছু করতে আমরা পছন্দ করব I তবে এটাই তাই যা যাহয়া (আঃ) প্রচার করলেন যে ঈশ্বরের আসন্ন রাজ্যের জন্য লোকেদের নিজেদের প্রস্তুত করা দরকার I

ধার্মিক নেতাদের প্রতি সতর্কবাণী যারা অনুতাপ করত না

আর কিছু বাস্তবিকই এটি করত, কিন্তু সকলে সৎভাবে স্বীকার করত না এবং তাদের পাপ সমূহের স্বীকারোক্তি করত না I ইঞ্জিল বলে যে:

7তিনি যেখানে বাপ্তিষ্ম দিচ্ছিলেন, সেখানে যখন বহু ফরিশী ও সদ্দূকীদের আসতে দেখলেন, তিনি তাদের বললেন, “তোমরা বিষধর সাপের বংশ! সন্নিকট ক্রোধ থেকে পালিয়ে যেতে কে তোমাদের চেতনা দিল? 8তোমরা এমন সব কাজ করো যেন তার দ্বারা বোঝা যায় যে তোমাদের মন পরিবর্তন হয়েছে। 9আর ভেবো না, মনে মনে নিজেদের বলতে পারবে, ‘অব্রাহাম আমাদের পিতা।’ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর এই পাথরগুলি থেকেও অব্রাহামের জন্য সন্তান সৃষ্টি করতে পারেন। 10গাছগুলির শিকড়ে ইতিমধ্যেই কুড়ুল লাগানো আছে। যে গাছে উৎকৃষ্ট ফল ধরে না, তা কেটে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।

মথি ৩:৭-১০

ফারিসী এবং সদ্দূকীগণ মশির ব্যবস্থার শিক্ষক ছিলেন I তারা অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং ব্যবস্থা দ্বারা নির্দেশিত সমস্ত ধর্মানুষ্ঠানগুলো (প্রার্থনা, উপবাস, বলিদান ইত্যাদি) পালন করতে কঠোর পরিশ্রম করতেন I প্রত্যেকে ভাবত যে এই নেতারা, তাদের সমস্ত ধার্মিক শিক্ষা এবং প্রচেষ্টার সাহায্যে এমন ব্যক্তি ছিল যারা অবশ্যই আল্লাহর দ্বারা মনোনীত হয়েছিল I কিন্তু ভাববাদী যাহয়া (আঃ) তাদেরকে এক ‘সাপের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করতেন এবং তাদেরকে আগুনের আসন্ন বিচার সম্বন্ধে সতর্ক করতেন! কেন? কারণ ‘অনুতাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফল উৎপন্ন’ না করার দ্বারা এটি দেখালো যে তারা প্রকৃতপক্ষে অনুতাপ করে নি I তারা তাদের পাপ স্বীকার করে নি বরং তাদের পাপ লুকোনোর জন্য তারা তাদের ধার্মিক অনুষ্ঠানগুলো ব্যবহার  করছিল I এবং হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) থেকে পাওয়া তাদের ধার্মিক ঐতিহ্য, যদিও এটি ভাল ছিল, তাদেরকে বরং অনুতাপ করার বদলে অহংকারী করে তুলেছিলI 

দাউদের দোষ স্বীকার আমাদের উদাহরণস্বরূপ

অতএব আমরা হযরত যাহয়ার সতর্কবাণী থেকে দেখি যে অনুতাপ এবং পাপের স্বীকারোক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ I প্রকৃতপক্ষে এটা ছাড়া আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করব না I আর সেই দিনের ফারিসী এবং সদ্দূকীদের প্রতি ওই সতর্কবাণীগুলো থেকে আমরা দেখতে পারি ধর্মের মধ্যে আমাদের পাপ্ লুকিয়ে রাখা কতটা সহজ এবং স্বভাবিক I অতএব আপনাদের এবং আমার কি হবে? আমাদের জন্য সতর্কবাণী রূপে এখানে এটিকে নথিভুক্ত করা হয়েছে যাতে আমরাও একগুঁয়েভাবে অনুতাপ করতে অস্বীকার না করি I আমাদের পাপের জন্য অজুহাত তৈরী করার পরিবর্তে, ভান করি যে আমরা পাপ করি না, বা তাদেরকে লুকিয়ে রেখে দাউদের (আঃ) উদাহরণকে আমাদের অনুসরণ করা উচিত যখন তিনি পাপের সম্মুখীন হলেন তিনি যাবুরের নিম্নলিখিত স্বীকারোক্তির মধ্যে প্রার্থনা করলেন:

1হে ঈশ্বর, তোমার অবিচল প্রেম অনুযায়ী

আমার উপর দয়া করো;

তোমার অপার করুণা অনুযায়ী

আমার সমস্ত অপরাধ মার্জনা করো।

2আমার সমস্ত অন্যায় মুছে দাও

আর আমার পাপ থেকে আমাকে শুচি করো।

3কারণ আমি আমার অপরাধসকল জানি,

আর আমার পাপ সর্বদা আমার সামনে আছে।

4তোমার বিরুদ্ধে, তোমারই বিরুদ্ধে, আমি পাপ করেছি

আর তোমার দৃষ্টিতে যা অন্যায় তাই করেছি;

অতএব তুমি তোমার বাক্যে ধর্মময়

আর যখন বিচার করো তখন ন্যায়পরায়ণ।

5নিশ্চয়ই অপরাধে আমার জন্ম হয়েছে,

পাপে আমার মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন।

6তবুও মাতৃগর্ভে তুমি বিশ্বস্ততা কামনা করেছিলে;

সেই গোপন স্থানে তুমি আমাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছিলে।

7আমার পাপ থেকে আমাকে শুদ্ধ করো, আর আমি নির্মল হব;

আমাকে পরিষ্কার করো, আর আমি বরফের থেকেও সাদা হব।

8আমাকে আনন্দ ও উল্লাসের বাক্য শোনাও;

আমার হাড়গোড়, যা তুমি পিষে দিয়েছ, এখন আমোদ করুক।

9আমার পাপ থেকে তোমার মুখ লুকাও

আর আমার সব অন্যায় মার্জনা করো।

10হে ঈশ্বর, আমার মধ্যে এক বিশুদ্ধ হৃদয় সৃষ্টি করো,

আর এক অবিচল আত্মা আমার মধ্যে সঞ্জীবিত করো।

11আমাকে তোমার সান্নিধ্য থেকে দূর কোরো না

আর তোমার পবিত্র আত্মাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়ো না।

12তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আবার আমাকে ফিরিয়ে দাও

আর আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে এক ইচ্ছুক আত্মা দাও।

গীতসংহিতা ৫১:১-১২

অনুতাপের ফল

দোষ স্বীকার এবং অনুতাপের সাথে ভিন্নভাবে জীবনযাপন করার এক আশা উপস্থিত হ’ল I লোকেরা হযরত যাহয়া (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করল কিভাবে তাদের অনুতাপের ফলকে প্রদর্শন করা উচিত এবং এইভাবেই ইঞ্জিল আলোচনাকে নথিভুক্ত করে: 

10লোকেরা প্রশ্ন করল, “আমরা তাহলে কী করব?”

11যোহন উত্তর দিলেন, “যার দুটি পোশাক আছে সে, যার একটিও নেই, তার সঙ্গে ভাগ করে নিক; আর যার কাছে কিছু খাদ্যসামগ্রী আছে, সেও তাই করুক।”

12কর আদায়কারীরাও এল বাপ্তিষ্ম নিতে। তারা বলল, “গুরুমহাশয়, আমরা কী করব?”

13তিনি তাদের বললেন, “তোমরা ন্যায্য পরিমাণের অতিরিক্ত কর আদায় কোরো না।”

14তখন কয়েকজন সৈন্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর আমরা কী করব?”

তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা বলপ্রয়োগ করে লোকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় কোরো না, মিথ্যা অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত কোরো না; যা বেতন পাও, তাতে সন্তুষ্ট থেকো।”

লুক ৩:১০-১৪

যাহয়া কি মসীহ ছিলেন?

তার বার্তার শক্তির কারণে, অনেক লোকেরা আশ্চর্য হল যে সেই মসীহ কি  না I এইভাবেই ইঞ্জিল এই আলোচনাকে নথিভুক্ত করে I

15সকলে অধীর প্রতীক্ষায় ছিল এবং সবারই মনে প্রশ্ন জাগছিল, যোহনই হয়তো সেই খ্রীষ্ট। 16যোহন তাদের সবাইকে উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের জলে বাপ্তিষ্ম দিই; কিন্তু আমার চেয়েও পরাক্রমী একজন আসছেন। তাঁর চটিজুতোর বাঁধন খোলারও যোগ্যতা আমার নেই। তিনি তোমাদের পবিত্র আত্মায় ও আগুনে বাপ্তিষ্ম দেবেন। 17শস্য ঝাড়াই করার কুলো তাঁর হাতেই আছে, তিনি তা দিয়ে খামার পরিষ্কার করবেন ও তাঁর গম গোলাঘরে সংগ্রহ করবেন এবং তুষ অনির্বাণ আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।” 18যোহন লোকসমূহকে আরও অনেক শিক্ষা দিয়ে সতর্ক করলেন এবং তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করলেন।

লুক ৩:১৫-১৮

উপসংহার

হযরত যাহয়া (আঃ) লোকেদের প্রস্তুত করতে এসেছিলেন যাতে করে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য প্রস্তুত হবে I তবে তিনি তাদেরকে অধিক ব্যবস্থা দেওয়ার দ্বারা প্রস্তুত করেননি, বরং তাদের পাপের থেকে অনুতাপ করতে এবং তাদের পাপ স্বীকার করতে আহ্বানের দ্বারা প্রস্তুত করেছিলেন I প্রকৃতপক্ষে অধিকতর নির্দেশাবলী অনুসরণ করার চেয়ে এটি আরও কঠিন যেহেতু এটি আমাদের লজ্জা এবং অপরাধবোধকে প্রকাশ করে I এবং তখনকার দিনের ধার্মিক নেতাগণ ছিলেন যারা অনুতাপ করতে এবং তাদের পাপ স্বীকার করতে নিজেদেরকে আগে নিয়ে আসতে পারেননি I কিন্তু তাদের নিজস্ব পচ্ছন্দ অনুযায়ী তারা মসীহকে গ্রহণ করতে এবং স্বর্গ রাজ্যকে বুঝতে অপ্রস্তুত রয়ে গেল যখন তিনি তার বার্তা নিয়ে এলেন I হযরত যাহয়ার (আঃ) এই সতর্কবাণী আজকের দিনেও আমাদের কাছে একদম প্রাসঙ্গিক i তিনি দাবি করেন যে আমরা আমাদের পাপের থেকে অনুতাপ করি এবং তাদেরকে স্বীকার করি i আমরা করব কি?  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *