Skip to content
Home » মসীহ অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতার উপরে শিক্ষা দেন

মসীহ অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতার উপরে শিক্ষা দেন

  • by

বিশুদ্ধ হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সূরা আন-নিসা (সূরা ৪ – স্ত্রীলোক) বলে

হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সলাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বল, তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থায়ও (সলাতের কাছে যেও না) গোসল না করা পর্যন্ত (মসজিদে) পথ অতিক্রম করা ব্যতীত; এবং যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক; অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান হতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সঙ্গম করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর, আর তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসহ কর; আল্লাহ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

সুরাহ আন-নিসা ৪:৪৩

সুরাহ আন-নিসার নির্দেশ হ’ল নামাজের আগে আমাদের মুখ ও হাতকে খাঁটি পৃথিবী দিয়ে পরিষ্কার করা I বাহ্যিক বিশুদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ I

সূরা-আশ-শামস (সূরা ৯১ – সূর্য) আমাদের বলে যে আমাদের আত্মা – আমাদের অভ্যন্তরীণ আত্মা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ I

শপথ প্রাণের আর তাঁর যিনি তা সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন, অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজ আত্মাকে পবিত্র করেছে। সেই ব্যর্থ হয়েছে যে নিজ আত্মাকে কলূষিত করেছে।

সূরা আশ-শামস ৯১:৭-১০

সুরাহ-আশ-শামস আমাদের বলে যে যদি আমাদের আত্মা, বা অন্তর্নিহিত নিজেকে শুদ্ধ করা হয় তখন আমরা সফল হয়ে থাকি, যেখানে আমাদের আত্মা যদি বিকৃত হয় তাহলে আমরা বার্থ হয়েছি I এছাড়াও ঈসা আল মসীহ (আঃ) অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরিচ্ছনতার সম্বন্ধে শিক্ষা দিলেন I

আমরা দেখলাম ঈসা আল মসীহর বাক্যের মধ্যে কর্তৃত্বের সাথে শিক্ষা দেওয়া, লোকেদের সুস্থ করা এমনকি প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কতটা শক্তি ছিল I তিনি আমাদের হৃদয়ের অবস্থা প্রকাশ করতেও শিখিয়েছিলেন – যাতে আমাদের অন্তর্নিহিত ব্যক্তির পাশাপাশি বাইরের দিকও পরীক্ষা করা যেতে পারে I আমরা বাহ্যিক পরিচ্ছনতার সঙ্গে পরিচিত সেইজনই আজানের পূর্বে উদু অনুষ্ঠিত করা হয় এবং কেন হালালের মাংসের অনুশীলন করা হয় হযরত মোহম্মদ (সাঃ) হাদিস অনুসারে বললেন যে

 “পরিচ্ছনতা বিশ্বাসের অর্ধেক …”

মুসলিম অনুচ্ছেদ ১ বই ০০২, নম্বর ০৪৩২

এছাড়াও হযরত ঈসা আল মসীহ (আঃ) আমাদের চেয়েছিলেন অন্য  অর্ধেকের সম্বন্ধে ভাবি – সেটি হ’ল আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা I এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যদিও মানুষরা অন্য লোকেদের বাহ্যিক পরিচ্ছনতা দেখতে পারে, আল্লাহর জন্য এটি আলাদা – তিনি অভ্যন্তরীণকেও দেখেন I যখন ইহূদদের অন্যতম রাজা যিনি বাহ্যিকভাবে সমস্ত ধার্মিক বাধ্যতাগুলো পালন করলেন, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত হৃদয় শুদ্ধ রাখলেন না তখন সেইসময়ের ভাববাদী এই বার্তাটি নিয়ে এলেন:

9কারণ সদাপ্রভুর চোখ তাদেরই শক্তিশালী করে তোলার জন্য গোটা পৃথিবী জুড়ে বিচরণ করে যাচ্ছে, যাদের অন্তর তাঁর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত। আপনি মূর্খের মতো কাজ করেছেন, আর এখন থেকে বারবার আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে।”

২ বংশাবলি ১৬:

এই বার্তাটির ঘোষণা হিসাবে, অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা আমাদের ‘হৃদয়ের’ সাথে সংযুক্ত – যে ‘আপনি’ ভাবে, অনুভব করে, সমর্পণ করে বা অমান্য করে, এবং জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে I যাবুরের ভাববাদী শিক্ষা দিলেন যে এটি আমাদের হৃদয়ের তৃষ্ণা ছিল যা আমাদের পাপের মূল ছিল I আমাদের হৃদয় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ঈসা আল মসীহ (আঃ) আমাদের বাহ্যিক পরিচ্ছনতার সাথে এর বৈপরীত্যের মাধ্যমে তার শিক্ষার মধ্যে এটির উপরে জোর  দিয়েছিলেন I অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতার বিষয়ে তিনি যে বিভিন্ন সময়ে শিখিয়েছিলেন ইঞ্জিল এখানে সেইভাবে লিপিবদ্ধ করেছে:

বাইরের পাশাপাশি ভেতরটাকেও পরিষ্কার কর 

(এখানে ‘ফারিসীদের’ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে I তারা সেই সময়ের ইহূদি শিক্ষক ছিলেন, আজকের ইমামদের অনুরূপ I ঈসা ঈশ্বরের প্রতি একটি ‘দশমাংশ’ দেওয়ার উল্লেখ করেন I এটি যিহূদিদের জন্য প্রয়োজনীয় যাকাত  ছিল I) 

37যীশুর কথা বলা শেষ হওয়ার পর একজন ফরিশী তাঁকে তার সঙ্গে খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি ভিতরে গিয়ে খেতে বসলেন। 38কিন্তু খাওয়ার আগে যীশুকে প্রথামতো হাত পা ধুতে না দেখে, সেই ফরিশী অবাক হয়ে গেল।

39তখন প্রভু তাকে বললেন, “তোমরা ফরিশীরা, থালাবাটির বাইরের অংশ পরিষ্কার করে থাকো, কিন্তু তোমাদের অন্তর লালসা ও দুষ্টতায় ভর্তি থাকে। 40মূর্খের দল! বাইরের দিক যিনি তৈরি করেছেন, তিনি কি ভিতরের দিকও তৈরি করেননি? 41কিন্তু পাত্রের ভিতরে যা আছে, তা দরিদ্রদের বিলিয়ে দাও, দেখবে, তোমাদের কাছে সবকিছুই শুচিশুদ্ধ হয়ে উঠবে।

42“ফরিশীরা, ধিক্ তোমাদের! কারণ তোমরা খেতের পুদিনা, তেজপাতা ও অন্যান্য শাকের এক-দশমাংশ ঈশ্বরকে দিয়ে থাকো, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রেম অবহেলা করে থাকো। এক-দশমাংশ দান করেও, আরও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলি তোমাদের পালন করা উচিত ছিল।

43“ফরিশীরা, ধিক্ তোমাদের! কারণ তোমরা সমাজভবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসতে এবং হাটেবাজারে লোকদের অভিবাদন পেতে ভালোবাসো।

44“ধিক্ তোমাদের! কারণ তোমরা চিহ্নহীন কবরের মতো, যার উপর দিয়ে মানুষ অজান্তে হেঁটে যায়।”

লুক ১১:৩৭-৪৪

ব্যবস্থা অনুসারে মর্ত দেহকে স্পর্শ করা একজন যিহূদিকে অশুচি করত I যখন ঈসা (পিবিইউএইচ) বললেন যে লোকেরা ‘চিহ্ন বিহীন কবরের’ উপর দিয়ে হেঁটে গেছে বলে তিনি বোঝাতে চাইলেন যে এমনকি ‘এটি জেনেও’ তারা সেগুলো ছাড়া অশুচি ছিল কারণ তারা অভ্যন্তরীণ শুদ্ধতাকে উপেক্ষা করছিল I এটিকে যদি আমরা উপেক্ষা করি আমরা অবিশ্বাসীদের মতন ততটাই অশুচি হতে পারি যাদের কোনো শুচিতার প্রতি শ্রদ্ধা নেই I

হৃদয় ধর্মীয়ভাবে শুদ্ধ ব্যক্তিকে অশুচি করে  

নিম্নলিখিত শিক্ষায়, ঈসা আল মসীহ হযরত যিশাইয় (আঃ) থেকে উদ্ধৃত করেন যিনি ৭৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বাস করতেন I (যিশাইয় সম্বন্ধে তথ্যের জন্য এখানে)

 

1তখন জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরিশী ও শাস্ত্রবিদ যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, 2“আপনার শিষ্যেরা কেন প্রাচীনদের পরম্পরাগত নিয়ম ভঙ্গ করে? তারা খাবার আগে কেন তাদের হাত ধোয় না?”

3যীশু উত্তর দিলেন, “আর তোমরা কেন তোমাদের পরম্পরাগত নিয়মের দোহাই দিয়ে ঈশ্বরের আদেশ ভঙ্গ করো? 4কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমার বাবা ও তোমার মাকে সম্মান কোরো,’ এবং ‘যে কেউ তার বাবা অথবা মাকে অভিশাপ দেয়, তার অবশ্যই প্রাণদণ্ড হবে।’ 5কিন্তু তোমরা বলো, কেউ যদি তার বাবা বা মাকে বলে, ‘আমার কাছ থেকে তোমরা যে সাহায্য পেতে তা ঈশ্বরের কাছে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছে,’ 6তাহলে সে তার বাবাকে বা মাকে আর তা দিয়ে সম্মান করবে না। এভাবে তোমরা পরম্পরাগত ঐতিহ্যের নামে ঈশ্বরের বাক্যকে অমান্য করে থাকো। 7ভণ্ডের দল! যিশাইয় তোমাদের সম্পর্কে সঠিক ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছেন:

8“ ‘এই লোকেরা তাদের ওষ্ঠাধরে আমাকে সম্মান করে,

কিন্তু তাদের হৃদয় থাকে আমার থেকে বহুদূরে।

9বৃথাই তারা আমার উপাসনা করে;

তাদের শিক্ষামালা বিভিন্ন মানুষের শেখানো নিয়মবিধি মাত্র।’ ”

10যীশু সকলকে কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা শোনো ও বোঝো। 11মানুষের মুখ দিয়ে যা প্রবেশ করে তা তাকে অশুচি করে না, কিন্তু যা তার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে তাই তাকে ‘অশুচি’ করে।”

12তখন শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন, ফরিশীরা একথা শুনে মনে আঘাত পেয়েছে?”

13তিনি উত্তর দিলেন, “যে চারাগাছ আমার স্বর্গস্থ পিতা রোপণ করেননি, তা উপড়ে ফেলা হবে। 14ওদের ছেড়ে দাও, ওরা অন্ধ পথপ্রদর্শক। কোনো অন্ধ ব্যক্তি যদি অপর ব্যক্তিকে পথ প্রদর্শন করে তবে উভয়েই গর্তে পড়বে।”

15পিতর বললেন, “এই রূপকটি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করুন।”

16যীশু তাদের প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কি এখনও এত অবুঝ রয়েছ? 17তোমরা কি দেখতে পাও না, যা কিছু মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে তা পাকস্থলীতে যায় ও তারপর শরীর থেকে বের হয়ে যায়? 18কিন্তু যেসব বিষয় মুখ থেকে বার হয়ে আসে, তা হৃদয় থেকে আসে এবং সেগুলিই কোনো মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19কারণ মানুষের হৃদয় থেকে উৎপন্ন হয় কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বিবাহ-বহির্ভূত যৌনাচার, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য, পরনিন্দা। 20এগুলিই কোনো মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খাবার খেলে সে ‘অশুচি’ হয় না।”

মথি ১৫:১-২০

এই সাক্ষাত্কারের মধ্যে, ঈসা আল মসীহ (আঃ) উল্লেখ করলেন যে আমরা আমাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাগুলো ঈশ্বরের বার্তার পরিবর্তে ‘মানবীয় পরম্পরা সমূহ’ থেকে দ্রুত গড়ে তুলি I ভাববাদীর সময়ে, ইহূদি নেতারা আল্লাহর সামনে তাদের পিতামাতাদের সাহায্য করার পরিবর্তে ধর্মীয় কারণে অর্থ প্রদানের দ্বারা বৃদ্ধ পিতামাতাদের প্রতি যত্ন নেওয়ার তাদের বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করেছিল I

আজ অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা সম্পর্কে আমরা একই সমস্যার সম্মুখীন হই I তবে আল্লাহ আমাদের হৃদয় থেকে নির্গত অপরিচ্ছনতা সম্পর্কে খুবই চিন্তিত I এই অপরিচ্ছনতা বিচারের দিনে আমাদের দণ্ডাজ্ঞায় প্রতিফল দেবে যদি না এটিকে  শুচিশুদ্ধ করা হয় I

বাইরে সুন্দর কিন্তু ভেতরে দুষ্টতায় পরিপূর্ণ

25“শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা থালাবাটির বাইরেটা পরিষ্কার করে থাকো কিন্তু ভিতরের দিকটা লোভ-লালসা ও আত্ম-অসংযমে পূর্ণ। 26অন্ধ ফরিশী! প্রথমে থালাবাটির ভিতরটা পরিষ্কার করো তারপরে বাইরের দিকটিও পরিষ্কার হবে।

27“শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীরা, ভণ্ডের দল, ধিক্ তোমাদের! তোমরা চুনকাম করা কবরের মতো! সেগুলি বাইরে থেকে দেখতে তো সুন্দর কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের হাড় ও সব ধরনের অশুচি বিষয়ে পরিপূর্ণ। 28একইভাবে, লোকেদের কাছে বাহ্যিকভাবে তোমরা নিজেদের ধার্মিক দেখাও কিন্তু অন্তরে তোমরা ভণ্ডামি ও দুষ্টতায় পূর্ণ।

মথি ২৩:২৫-২৮

আমরা যা সমস্ত কিছু দেখেছি ঈসা আল মসীহ (আঃ) সেই সম্বন্ধে বলছেন I ঈশ্বরের বিশ্বাসীদের মধ্যে বাহ্যিক পরিচ্ছনতা অনুসরণ করা একেবারেই সাধারণ হতে পারে, তবে অনেকে এখনও ভেতরে লোভ এবং প্রবৃত্তিতে পরিপূর্ণ – এমনকি তারাও যারা ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ I অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা প্রয়োজনীয় – তবে এটি অনেক বেশি কঠিন I আল্লাহ খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা বিচার করবেন I এই বিষয়টি নিজেই উত্থাপন করে: কিভাবে আমরা আমাদের হৃদয় পরিষ্কার করব যাতে করে আমরা বিচারের দিনে স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি? উত্তরের জন্য আমরা ইঞ্জিলে চলতে থাকি I

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *