Skip to content
Home » হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) – এবং দেখায় – প্রকৃত শহীদ

হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) – এবং দেখায় – প্রকৃত শহীদ

  • by

সূরা মুনাফিকুন (সূরা ৬৩ – ভণ্ডরা) এমন কিছু বর্ণনা করে যারা হযরত মোহম্মদ সাঃ কে অনুগ্রহপূর্বক সাক্ষী দিয়েছিল কিন্তু পরে তাদেরকে নিরর্থক মিথ্যাবাদী বলে দেখা গিয়েছিল I  

মুনাফিকরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে- ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল।’ আল্লাহ জানেন, অবশ্যই তুমি তাঁর রসূল আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যেবাদী। তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আর এ উপায়ে তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। তারা যা করে তা কতই না মন্দ!

সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১-২

ভণ্ডদের বিপরীত, সূরা আল-যুমার  (সুরা ৩৯ – সেনা) সৎ ‘সাক্ষীদের’ বর্ণনা করে I 

পৃথিবী তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে ঝলমল করে উঠবে, আর ‘আমালনামা সামনে আনা হবে। নবীগণ ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে। সকলের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করা হবে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না।

সূরা আল-যুমার ৩৯:৬৯

ভাববাদী ঈসা আল মসীহ আঃ এর সময়ে, একজন প্রকৃত স্বাক্ষীকে এক ‘শহীদ’ বলে ডাকা হত I একজন শহীদ এমন একজন ছিলেন যিনি ঘটনার সত্যকে প্রতক্ষ্য করেছিলেন I ঈসা আল মসীহ তার শিষ্যদের ‘শহীদ’ বলে ডাকতেন I  

8কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে এলে তোমরা শক্তি লাভ করবে, আর তোমরা জেরুশালেমে ও সমস্ত যিহূদিয়ায় ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত আমার সাক্ষী হবে।”

প্রেরিত 1

‘শহীদ’ শব্দটিকে কেবল তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত যারা সৎ প্রত্যক্ষদর্শী ছিল I 

তবে ‘শহীদ’ শব্দটি আজকাল প্রচুর ব্যবহৃত হয় I আমি এটিকে শুনি যখন চলমান যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটিতে কেউ নিহত হয়, বা যোদ্ধারা একে অপরকে হত্যা করার সময়ে গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কিছু বিরোধে কেউ মারা যায় I তাকে সাধারণতঃ একজন ‘শহীদ’ বলে তার পক্ষের (এবং হয়ত একজন কাফির অপর পক্ষের) দ্বারা উল্লেখ করা হয় I     

তবে এটি কি সঠিক? ইঞ্জিল লিপিবদ্ধ করে ঈসা আল মসীহর সময়ে কিভাবে ইয়াহিয়া (পিবিইউএইচ) শহীদ হয়েছিলেন এবং তিনি একটি মহান উদাহরণ দিলেন কিভাবে এটিকে বুঝতে হয় I এখানে এই ঘটনাগুলোকে ইঞ্জিল যেভাবে লিপিবদ্ধ করেছে:

1সেই সময়ে শাসনকর্তা হেরোদ যীশুর সম্মন্ধে শুনে 2তাঁর পরিচারকদের বললেন, “ইনি সেই বাপ্তিষ্মদাতা যোহন, যিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন! সেই কারণে এইসব অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর মধ্যে রয়েছে।”

3কারণ হেরোদ, তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য যোহনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন ও তাঁকে কারাগারে বন্দি করেছিলেন। 4কারণ যোহন তাঁকে ক্রমাগত বলতেন, “আপনার পক্ষে হেরোদিয়াকে রাখা ন্যায়সংগত নয়।” 5হেরোদ যোহনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় পেতেন কারণ তারা তাকে ভাববাদী বলে মনে করত।

6হেরোদের জন্মদিনে হেরোদিয়ার মেয়ে সকলের জন্য নৃত্য করে হেরোদকে এমন সন্তুষ্ট করল যে, 7তিনি শপথ করে বললেন সেই মেয়ে যা চাইবে, তাই তিনি তাকে দেবেন। 8তার মায়ের প্ররোচনায়, সে তখন বলল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা আমাকে থালায় করে এনে দিন।” 9এতে রাজা হেরোদ মর্মাহত হলেন, কিন্তু তাঁর নিজের শপথের জন্য ও যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভোজসভায় বসেছিলেন তাঁদের জন্য তিনি তাঁর অনুরোধ রক্ষার আদেশ দিলেন। 10তিনি কারাগারে লোক পাঠিয়ে যোহনের মাথা কাটালেন। 11তাঁর মাথা একটি থালায় করে এনে সেই মেয়েকে দেওয়া হল। সে তার মায়ের কাছে তা নিয়ে গেল। 12পরে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর শরীর নিয়ে গেল ও কবর দিল। তারপর তারা গিয়ে যীশুকে সেই সংবাদ দিল।

মথি 14

প্রথমে আমরা দেখি কেন ইয়াহিয়াকে (আঃ) গ্রেফতার করা হয়েছিল I স্থানীয় রাজা (হেরোদ) তার ভাইয়ের স্ত্রীকে গহণ করেছিলেন এবং তাকে তার নিজের স্ত্রী বানিয়েছিলেন – মুসা (আঃ) এর শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে I হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) প্রকাশ্যে বললেন যে এটি অন্যায় ছিল তবে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজা ভাববাদীর কথা শোনার পরিবর্তে তাকে গ্রেফতার করলেন I স্ত্রীটি যে এই নতুন বিবাহের থেকে উপকৃত হয়েছিল, যেহেতু সে এখন শক্তিশালী রাজার স্ত্রী হ’ল, ভাববাদীকে চুপ করাতে চাইল তাই সে একটি ভোজ সভায় তার স্বামী রাজা এবং অতিথিদের সামনে তার উঠতি কন্যাকে দিয়ে এক কামুক নৃত্য পরিবেশন করাতে ষড়যন্ত্র করলো I তিনি কন্যার অনুষ্ঠান দেখে এত মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে তিনি তাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যা সে চাইবে তাই তাকে   দেবেন I তার মা তাকে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর মস্তক চাইতে বললেন I অতএব তার সত্য বলার কারণে ভাববাদী ইয়াহিয়াকে কারারুদ্ধ করা হল, মস্তক ছিন্ন করা হ’ল শুধুমাত্র এই কারণে একটি মেয়ের কামুক নৃত্য রাজাকে তার অতিথিদের সামনে ফাঁদে আটকাল I  

এছাড়া আমরা দেখি যে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) কারোর সাথে লড়াই করছিলেন না, নাতো রাজাকে বধ করতে চেষ্টা করছিলেন I তিনি শুধুমাত্র সত্য কথা বলছিলেন I একজন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজাকে সাবধান করতে ভীত ছিলেন না এমকি যদিও তার কাছে এই রাজার শক্তির বিরুদ্ধে কোনো পার্থিব শক্তি ছিল না I হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে প্রকাশিত শরিয়া আইনের প্রতি তার প্রেমের কারণে তিনি সত্য বললেন I আজকের দিনে আমাদের জন্যে এটি একটি উত্তম উদাহরণ যা দেখায় কিভাবে আমরা (সত্য বলার দ্বারা) লড়াই করি এবং কিসের জন্য লড়াই করি (নবিদের সত্য) I হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) রাজাক বধ করতে, বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিতে বা কোনো যুদ্ধ শুরু করতে চেষ্টা করেন নি I    

ইয়াহিয়ার শহীদত্বর পরিণাম  

তার এপ্রোচ সর্বাধিক প্রভাবী ছিল I রাজা তার খুনে এতটা বিবেক-জর্জরিত ছিলেন যে তিনি ভাবলেন যে ভাববাদী ঈসা আল মসীহর (আঃ) শক্তিশালী শিক্ষা এবং অলৌকিক কার্য ইয়াহিয়ার (আঃ) জীবনে ফিরে আসা ছিল I 

হযরত ইয়াহিয়াকে হেরোদের বিশ্বাসঘাতক হত্যা ব্যর্থ গেল i তার পরিকল্পনা সুরাহ অ-ফিলের (সূরা ১০৫ – হাথী) একটি উত্তম উদাহরণ I 

তুমি কি দেখনি (কা‘বা ঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতীওয়ালাদের সঙ্গে তোমার প্রতিপালক কীরূপ ব্যবহার করেছিলেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি?তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। যারা তাদের উপর পাথরের কাঁকর নিক্ষেপ করেছিল।

সূরা আল-ফিল ১০৫:১-৪

ঈসা আল-মসীহ (আঃ) এটি হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) সম্পর্কে বললেন

7যখন যোহনের শিষ্যেরা চলে যাচ্ছিল, তখন যীশু সকলের কাছে যোহনের সম্পর্কে বলতে লাগলেন, “তোমরা মরুপ্রান্তরে কী দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দুলছে এমন কোনো নলখাগড়া? 8তা যদি না হয়, তাহলে তোমরা কী দেখতে গিয়েছিলে? মোলায়েম পোশাক পরা কোনো মানুষকে? তা নয়, যারা মোলায়েম পোশাকে পরিচ্ছন্ন তারা তো রাজপ্রাসাদে থাকে। 9তাহলে তোমরা কী দেখতে গিয়েছিলে? কোনো ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলি, ভাববাদীর চেয়েও মহত্তর একজনকে। 10ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্পর্কে লেখা আছে:

“ ‘আমি আমার বার্তাবাহককে তোমার আগে পাঠাব,

যে তোমার আগে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে।’

11আমি তোমাদের সত্যি বলছি: নারীর গর্ভে জন্মেছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে, বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের চেয়ে মহান আর কেউই নেই; তবুও স্বর্গরাজ্যে যে নগণ্যতম সেও যোহনের চেয়ে মহান। 12বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত, স্বর্গরাজ্য সবলে অগ্রসর হচ্ছে ও পরাক্রমী ব্যক্তিরা তা অধিকার করছে। 13কারণ সমস্ত ভাববাদী ও বিধান যোহনের সময় পর্যন্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে। 14আর তোমরা যদি স্বীকার করতে আগ্রহী হও তাহলে জেনে নাও, ইনিই সেই এলিয় যার আগমনের কথা ছিল। 15যার কান আছে, সে শুনুক।

মথি 11

এখানে মসীহ সুনিশ্চিত করেন যে ইয়াহিয়া (আঃ) একজন মহান নবি ছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী কৃত আসন্ন ‘প্রতুত্কারী’ ছিলেন I স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ আজ টিকে আছে অথচ রাজা হেরোদের কাছে – তখনকার এত শক্তিশালী – কিছুই নেই কারণ তিনি নবীগণদের কাছে সমর্পণ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন I

হযরত ইয়াহিয়ার (আঃ) সময়ে হিংস্র লোকেরা ছিল যারা অন্যদের মস্তক ছিন্ন করত ঠিক সেই ভাবে হিংস্র লোকেরা আছে যারা আজকের দিনে এইরকম করে I এই হিংস্র লোকেরা এমনকি স্বর্গ রাজ্যে ‘অভিযান’ করছে I তবে তারা এতে প্রবেশ করবে না I স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করার অর্থ হ’ল ইয়াহিয়ার (আঃ) পথকে গ্রহণ করা – সত্যবাদী সাক্ষী হওয়া I আমরা যদি তার উদাহরণ অনুসরণ করি এবং যারা হিংস্র তাদের উদাহরণ সমূহ নয় তবে আমরা জ্ঞানী হই I 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *