নবী মুসার (আঃ) তাওরাত ঈসা আল মসীহর সম্বন্ধে পুর্বজ্ঞান প্রকাশিত করেছিলেন চিহ্ন সমূহের মাধ্যমে যেগুলোকে নবীর আগমনের প্রতি নমুনাকৃত করা হয়েছিল I মুসার অনুগমনকারী নবীরা ফিরিস্তির দ্বারা ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে দেখিয়েছিলেন I ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত দায়ূদ (আঃ), মসীহর আগমন সম্বন্ধে গীতসংহিতা ২ এর মধ্যে প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রথমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন I তারপরে গীতসংহিতা ২২ এর মধ্যে তিনি একজনের সম্বন্ধে একটি বার্তা পেলেন যার হাত ও পাকে অত্যাচারে ‘বিদ্ধ’ করা হয়েছে এবং তারপরে ‘মৃত্যুর ধুলিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে’, তবে পরবর্তীকালে অর্জিত এক মহান বিজয় ‘পৃথিবীর সমস্ত পরিবারকে’ প্রভাবিত করবে I এটি কি ঈসা আল মসীহর আসন্ন ক্রুশারোপন এবং পুনরুত্থান সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণী ছিল? সুরা সাবা (সুরা ৩৪) এবং সুরা আন- নমল (সুরা ২৭) এর বক্তব্যের মধ্যে একবার দেখব কিভাবে আল্লাহ যাবুরের (অর্থাৎ গীতসংহিতা ২২) মধ্যে দায়ূদকে অনুপ্রাণিত করলেন I
গীতসংহিতা ২২ এর ভবিষ্যদ্বাণী
আপনি এখানে পুরো গীতসংহিতা ২২টি পড়তে পারেন I নিচে একটি টেবিল রয়েছে যেখানে গীতসংহিতা ২২ এর পাশাপাশি ঈসা আল মসীহর শিষ্যদের (সঙ্গী) দ্বারা প্রত্যক্ষ্য করা ক্রুশারোপন এবং পুনরুত্থানের বিবরণ রয়েছে I পাঠ্যগুলো রঙ মেলানো তাই সাদৃশ্যগুলো সহজেই দেখা যায় I
১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে লিখিত – গীত সংহিতা ২২ | |
(মথি ২৭:৩১-৪৮) .. তারপর তারা তাঁকে (যীশুকে) ক্রুশে দিতে নিয়ে চলল) … ৩৯ যে সকল লোক সেই পথ দিয়ে যাতায়াত করছিল তারা মাথা নাড়তে নাড়তে তার দিকে অপমান করল ৪০ এবং বলল, “… নিজেকে রক্ষা কর! ক্রুশ থেকে নেমে এস, যদি তুমি ঈশ্বরের পুত্র হও!” ৪১ সেই একই রূপে প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা এবং প্রাচীনরা তাঁর প্রতি বিদ্রূপ করল I ৪২ “সে অন্যদের রক্ষা করত,”তারা বলল, “কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না! ও তো ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, আর আমরা ওর উপর বিশ্বাস করব I ৪৩ ও ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস রাখে I এখন তিনি ওকে উদ্ধার করুন যদি তিনি ওকে চান,… ৪৫ প্রায় নয় ঘটিকার সময় যীশু চীৎকার করে উঠলেন…”আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ?”…৪৮ তাদের মধ্যে একজন তৎক্ষনাত দৌড়িয়ে গেল আর একটি স্পঞ্জ নিয়ে এল I সে তাতে সিরকা ভরল, এটিকে একটি নলের উপরে রাখল, এবং যীশুকে পান করতে দিল I মার্ক ১৫:১৬-২০ ১৬ সেনারা যীশুকে নিয়ে গেল… তারা তাঁকে বেগুনি কাপড় পরাল, তারপরে একটি কাঁটার মুকুট গেঁথে তার উপরে পরাল I ১৮ আর তারা তাঁকে বলতে আরম্ভ করল, “নমস্কার, যিহূদিরাজ!” 19 বার বার তারা একটি নল দ্বারা তাঁর মাথার উপরে আঘাত করল এবং তাঁর উপরে থুতু দিল I তাদের হাঁটু পেতে, তারা তাঁকে প্রণাম করল I ২০ আর যখন তারা তাঁকে বিদ্রূপ করল, তারা তাঁর থেকে বেগুনি কাপড় খুলে নিল এবং তাঁর নিজের কাপড় তাঁর উপরে পরিয়ে দিল I পরে ক্রুশে দেবার জন্য তারা তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল…৩৭ এক উচ্চ রবের সাথে, যীশু শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলেন I (যোহন ১৯:৩৪) তারা তাঁর পা ভাঙল না …, বিদ্ধ করল যীশুর কুক্ষিদেশে একটি বরশা দিয়ে, তাহাতে অমনি রক্ত ও জলের প্রবাহ নিয়ে এল.…তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করল… (যোহন ২০ঃ২৫) [থোমা] আমি যদি তাঁর হাতে প্রেরেক চিহ্ন না দেখি, …”…যোহন ১৯ঃ২৩-২৪ যখন সেনারা যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করল, তারা নিল তাঁর বস্ত্র সকল, তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে, সেগুলোকে চার ভাগে ভাগ করল, বাকি ছিল আঙরাখাটি…এটিকে চিরব না”, তারা বলল,”এস আমরা গুলিবাঁট করে দেখি কে এটি পায়”… | ১ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ? আমার রক্ষার থেকে কেন এত দুরে থাক, আমার যন্ত্রণার আর্তনাদ থেকে কেন এত দুরে থাক? ২ হে আমার ঈশ্বর, আমি দিবসে আহ্বান করি, কিন্তু তুমি উত্তর দাও না, রাত্রিতেও, কিন্তু, আমার কোনো বিশ্রাম পাই না …৭ যারা আমাকে দেখে সকলে আমাকে ঠাট্টা করে; তারা তাদের মাথা নেড়ে, অপমান করে I ৮ “ও সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করে,”তারা বলে , “সদাপ্রভু ওকে রক্ষা করুন,কেননা তিনি উহাতে প্রীত” ৯ তথাপি তুমি জঠর থেকে আমাকে উদ্ধার করলে; এমনকি আমার মাতার স্তন পানের সময়ে তুমি আমার বিশ্বাস জন্মালে I ১০ গর্ভ থেকে আমি তোমার উপরে নিক্ষিপ্ত; আমার মাতৃজঠর থেকে তুমিই আমার ঈশ্বর I ১১ আমার থেকে দুরে থেক না, কেননা সঙ্কট আসন্ন, আর সাহায্যকারী কেউ নেই I ১২ অনেক বৃষ আমাকে বেষ্টন করেছে; বলবান বলদেরা আমাকে ঘিরেছে I ১৩ গর্জনকারী সিংহ যেন তাদের শিকারীকে ছিড়ে ফেলতে আমার বিরুদ্ধে তাদের মুখ খুলে হা করেছে I ১৪ আমি জলের ন্যায় সেচিত হয়েছি, এবং আমার সমুদয় অস্থি সন্ধিচ্যুত হয়েছে I আমার হৃদয় মোমের ন্যায় হয়েছে; এটি আমার মধ্যে গলিত হয়েছে I ১৫ আমার মুখ খোলার ন্যায় শুষ্ক হয়েছে, এবং আমার জিহ্বা তালুতে লেগে আটকে গেছে; তুমি আমাকে মৃত্যুর ধুলিতে রেখেছ I ১৬ কুকুরেরা আমাকে ঘিরেছে,দুরাচারীদের এক মন্ডলী আমাকে বেষ্টন করেছে; তারা আমার হস্তপদ বিদ্ধ করেছে I ১৭ আমার অস্থি সকল প্রদর্শনীতে রয়েছে; লোকেরা আমার প্রতি দৃষ্টি করে চেয়ে থাকে I ১৮ তারা নিজেদের মধ্যে আমার বস্ত্র বিভাগ করে এবং আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করে I |
![](https://bangla.straightpath.live/wp-content/uploads/sites/5/2021/01/psalm-22-table-colored-in-bengali.jpg)
ক্রুশবিদ্ধ সম্পর্কে সুসমাচারের বিবরণের তুলনায় গীত সংহিতা ২২
যারা ক্রুশারোপনকে প্রতক্ষ্য করেছিল সেই প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইঞ্জিল লেখা হয়েছে I গীতসংহিতা ২২ একজন যে এটিকে অনুভব করেছে তার দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে I গীতসংহিতা ২২ এবং ঈসা আল মসীহর ক্রুশারোপনের মধ্যে এই সাদৃশ্যকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এটিকি কাকতলীয় যে বিবরণগুলো এত হুবহু মেলে যে জামাকাপড় দুটি ভাগ করা হবে (সেলাই করা পোশাকগুলোর সেলাই বরাবর বিভক্ত ছিল এবং সেনাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল) আর গুলিবাঁট করা হয়েছে (সেলাইবিহীন পোশাক ছিঁড়ে ফেললে নষ্ট হয়ে যাবে তাই তারা এটির জন্য জুয়া খেলল) I ক্রুশারোপনের আবিষ্কারের পূর্বে গীতসংহিতা ২২ লেখা হয়েছিল কিন্তু এটি এর নির্দিষ্ট বিবরণ দেয় (হস্তপদ বিদ্ধ করা, অস্থি-সন্ধি থেকে অস্থি বেরিয়ে আসা, – প্রসারিত হয়ে শিকারীর মতন ঝুলতে থাকে) I এর অতিরিক্ত যোহনের সুসমাচার লিপিবদ্ধ করে যে যখন যীশুর কুক্ষিদেশে বর্শার খোঁচা দেওয়া হল তখন রক্ত ও জল বইতে লাগল I সংকেত দেয় যে এক তরল পদার্থ তাঁর হৃদয় যন্ত্রের চারিদিকে তৈরী হয় I ঈসা আল মসীহ এইরূপে হৃদপিণ্ডের উপর আঘাতে মারা যান I এটি গীতসংহিতা ২২ এর “আমার হৃদয় মোমে পরিণত হয়েছে’ উক্তির সঙ্গে মেলে I গীতসংহিতা ২২ এর মধ্যে অনুবাদিত হিব্রু শব্দ ‘বিদ্ধ’ যার আক্ষরিক অর্থ ‘একটি সিংহের ন্যায়’ I অন্য কথায়, হাত এবং পাকে বিদ্ধ করার সময়ে তাদেরকে একটি সিংহ যেমন করে সেইরকমভাবে থেঁতলান ও বিকৃত করা হয়েছিল I
অবিশ্বাসীরা উত্তর দেয় যে ইঞ্জিলের প্রত্যক্ষ্যদর্শীর নথির সঙ্গে গীতসংহিতা ২২ এর সাদৃশ্য এই কারণে হতে পারে ঈসার শিষ্যরা ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে ‘খাপ খায়’ এইরকম ঘটনাগুলো তৈরী করেছিল I ওটা কি সাদৃশ্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে?
গীতসংহিতা ২২ এবং ঈসা আল মসীহর উত্তরাধিকার
তবে উপরোক্ত টেবিলের গীতসংহিতা ২২ আয়াত ১৮ এর সঙ্গে শেষ হয় না – এটি চলতে থাকে I এখানে লক্ষ্য করুন শেষে এটি কতটা জয়যুক্ত – ম্র্ত্যুর পরে!
26যারা দরিদ্র তারা ভোজন করবে ও তৃপ্ত হবে; যারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে তারা তাঁর জয়গান করবে, তাদের হৃদয় চিরস্থায়ী আনন্দে উল্লসিত হবে। 27পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ সদাপ্রভুকে স্মরণ করবে ও তাঁর দিকে ফিরবে, এবং জাতিদের সব পরিবার তাঁর সামনে নতজানু হবে, 28কারণ আধিপত্য সদাপ্রভুরই আর তিনি জাতিদের উপর শাসন করেন। 29পৃথিবীর ধনীরা সবাই ভোজন করবে ও তাঁর আরাধনা করবে; যাদের জীবন ধুলোতে শেষ হবে তারা সবাই তাঁর সামনে নতজানু হবে— তারা যারা নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। 30বংশধরেরা তাঁর সেবা করবে; আগামী প্রজন্মকে বলা হবে সদাপ্রভুর কথা। 31তারা তাঁর ধার্মিকতা প্রচার করবে, যারা অজাত তাদের উদ্দেশে ঘোষণা করা হবে: তিনি এই কাজ করেছেন!
গীত 22এটি এই ব্যক্তির মৃত্যুর বিশদ সম্পর্কে কথা বলছে না I ওটিকে গীসংহিতার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছিলI নবী দায়ূদ (আঃ) এখন আরও ভবিষ্যতের দিকে দেখছেন এবং এই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রভাবকে ‘উত্তরপুরুষ’ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের’ উপরে সম্বোধন করছেন (আয়াত ৩০) I অর্থাৎ ঈসা আল মসীহর পরে আমরা 2000 বছর বেঁচে আছি I দায়ূদ আমাদের বলছেন যে ‘উত্তরপুরুষ’ এই ‘হস্তপদ বিদ্ধ’ মানুষটিকে অনুসরণ করে, যে এই ধরণের এক ভয়ংকর মৃত্যু বরণ করেন তাঁকে ‘সেবা’ করবে এবং ‘তাঁর সম্বন্ধে বলা হবে’ I আয়াত ২৭ সীমাটির সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে – এরা ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্তে’ এবং ‘জাতিগণের সকল পরিবারের’ মধ্যে যাবে এবং তাদেরকে ‘সদাপ্রভুর দিকে ফেরাবে’ I আয়াত ২৯ এ নির্দেশ করে কিভাবে ‘যারা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না’ (আমরা সবাই) একদিন তাঁর সামনে নতজানু হবে I এই মানুষটির ধার্মিকতাকে লোকেদের কাছে ঘোষণা করা হবে যারা তাঁর মৃত্যুর সময়ে তখনও জীবিত (‘এখনও অজাত’) ছিল না I
ইঞ্জিলটিকে গীতসংহিতা ২২ এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরী করা হয়েছিল কিনা এর সাথে এই শেষের কোনো সম্পর্ক নেই কেননা এটি এখন আরও অধিক পরবর্তী ঘটনাগুলোর সম্বন্ধে আলোচনা করছে – যেগুলো আমাদের সময়ের I প্রথম শতাব্দীর ইঞ্জিল লেখকেরা ঈসা আল মসীহর মৃত্যুর প্রভাব আমাদের সময়ের মধ্যে তৈরী করতে পারেন নি I অবিশ্বাসীদের যৌক্তিকতা ঈসা আল মসীহর দীর্ঘমেয়াদী, বিশ্বব্যাপী উত্তরাধিকারের ব্যাখ্যা দেয় না যা গীতসংহিতা ২২ সঠিকভাবে ৩০০০ বছর পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল I
কোরআন – আল্লাহর দ্বারা প্রদত্ত দায়ূদের পূর্বজ্ঞান
গীতসংহিতা 22 এর শেষে এই জয়যুক্ত প্রশংসা একদম তাই যা কোরআনের সুরা সাবা (সূরা ৩৪ – সেবা) এবং আন-নমল (সূরা ২৭- পিপড়া) বোঝায় যখন এটি দায়ূদের অনুপ্রাণিত গীতসংহিতার সম্বন্ধে বলে যে:
আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর আর পাখীদেরকেও (এ আদেশ করেছিলাম)। আমি লোহাকে তার জন্য নরম করেছিলাম।
সুরা সাবা ৩৪:১০
আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তারা উভয়ে বলেছিল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দাদের উপর আমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন।’
সুরা আন-নমল 27:15
যেমন এটি বলে. আল্লাহ দায়ূদকে জ্ঞান ও অনুগ্রহ দিয়েছিলেন ভবিষ্যতকে দেখতে এবং ওই জ্ঞানের সাহায্যে তিনি গীতসংহিতার মধ্যে লিপিবদ্ধ প্রশংসার গীত গেয়েছিলেন I
এখন সুরা আল-ওয়াক্বিয়া (সুরা ৫৬ –অপরিহার্য) এর মধ্যে উত্থিত প্রশ্নটির সম্বন্ধে এখন বিবেচনা করুন I
তাহলে কেন (তোমরা বাধা দাও না) যখন প্রাণ এসে যায় কণ্ঠনালীতে? আর তোমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখ, আর আমি তোমাদের চেয়ে তার (অর্থাৎ প্রাণের) নিকটবর্তী, কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। তোমরা যদি (আমার) কর্তৃত্বের অধীন না হও তাহলে তোমরা তাকে (অর্থাৎ তোমাদের প্রাণকে মৃত্যুর সময়) ফিরিয়ে নাও না কেন যদি তোমরা (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হয়েই থাক?
সুরা আল-ওয়াক্বিয়া ৫৬:৮৩-৮৭
মৃত্যুর থেকে প্রাণকে কে ডাকতে পারে? সূরাটি মানুষের কাজকে আল্লাহর কাজ থেকে আলাদা করার চ্যালেঞ্জ দেয় I তবুও সুরা আল-ওয়াকিয়া ঠিক তাই যা গীতসংহিতা ২২ বর্ণনা করে – এবং এটি ঈসা আল মসীহর (আঃ) কার্যকে পূর্বাভাষ বা ভবিষ্যদ্বাণী করার দ্বারা এইরকম করে I
গীতসংহিতা ২২ এর তুলনায় ঈসা আল মসীহর ক্রুশারোপনের ফলাফল সম্বন্ধে কেউ এর থেকে ভাল ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না I পৃথিবীর ইতিহাসে আর কে আছে যে তাঁর মৃত্যুর পাশাপাশি তাঁর জীবনের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণকে যা তাঁর জন্মের ১০০০ বছর পূর্বে অদূর ভবিষ্যতে ঘটবে বলে দাবি করতে পারে? যেহেতু সুদুর ভবিষ্যত সম্পর্কে এত বিস্তৃতভাবে বলা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় সেইহেতু ঈসা আল মসীহর কোরবানী “ঈশ্বরের ইচ্ছাকৃত পরিকল্পনা এবং পুর্বজ্ঞানের” দ্বারা ছিল I
অন্যান্য নবীরা ঈসা আল মসীহর কোরবানীর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে
ঠিক যেমন তাওরাত ঈসা আল মসীহর শেষ দিনগুলোর ঘটনাবলী সম্পর্কে একটি দর্পণের চিত্রের সাহায্যে আরম্ভ করেছিল এবং পরে আরও বিস্তারের সাথে চিত্রটিকে স্পষ্ট করেছিল, তেমনি দাউদের অনুসরণকারী নবীরা ঈসা আল মসীহের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন I নিচের টেবিলটি আমাদের দেখা তাদের কয়েকটিকে সংক্ষিপ্তসার করেছে I
নবীরা বলে | কিভাবে এটি আসন্ন মসীহর পরিকল্পনাকে প্রকাশ করল |
কুমারী জন্মের চিহ্ন | ‘একটি পুত্র এক কুমারীর থেকে জন্মগ্রহণ করবে’ যাকে যিশাইয় ৭০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং তিনি পাপ রহিত এক সিদ্ধ জীবন অতিবাহিত করবেন I কেবলমাত্র এক সিদ্ধ জীবনকে অন্য কারোর জন্য কোরবানীতে উৎসর্গ করা যেতে পারে I ওই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতায় ঈসা আল মসীহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই পবিত্র জীবন যাপন করেছিলেন I |
আসন্ন ‘শাখা’ ঈসার নাম এবং আমাদের পাপের অপসারণের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল | নবী যিশাইয়, যিরমিয় এবং সখরিয় একজনের আগমন সম্বন্ধে এক ধারাবাহিক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন যাকে ঈসার জন্মের ৫০০ বছর পূর্বে – সঠিকভাবে ঈসা নাম দিয়েছিলেন I সখরিয় ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে একদিন লোকেদের পাপ অপসারিত হবে I ঈসা নিজেকে বলি হিসাবে উৎসর্গ করেছিলেন আর তাই ‘একদিনে’ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পূর্ণতার মধ্য দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হল I |
নবী দানিয়েল এবং মসীহর আগমনের সময় | নবী দানিয়েল মসীহর আগমনের জন্য ঠিক ৪৮০-বছরের একটি সময় সূচীর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ভবিষ্যদ্বাণীর সূচী অনুসারে ঈসা সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছিলেন I |
নবী দানিয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মসীহকে ‘বিচ্ছিন্ন করা’ হবে | মসীহর আগমনের পরে, নবী দানিয়েল লিখেছিলেন যে তাঁকে ‘বিচ্ছিন্ন করা হবে আর কিছুই থাকবে না’ I এটি ঈসা আল মসীহর আসন্ন মৃত্যুর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যেমন তাঁকে জীবন থেকে ‘বিচ্ছিন্ন করা’ হয়েছিল I |
নবী যিশাইয় আসন্ন দাসের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের সমন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন | নবী ইশাইয়া বিশদভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে কীভাবে মাসীহকে ‘জীবন্তদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন’ করা হবে, যার মধ্যে অত্যাচার, প্রত্যাখ্যাত হওয়া, আমাদের পাপের জন্য ‘বিদ্ধ’ করা হবে, মেষশাবকের মতো বধ করা হবে, তার জীবন পাপের জন্য একটি নৈবেদ্য হবে , কিন্তু পরে সে আবার ‘জীবন’ দেখতে পাবে এবং বিজয়ী হবে। এই সমস্ত বিস্তৃত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পূর্ণ হয়েছিল যখন ঈসা আল মসীহ ক্রুশারোপিত হলেন এবং মৃত্যু থেকে উঠলেন I এ জাতীয় বিবরণগুলোকে ৭০০ বছর পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারা এক মহান চিহ্ন ছিল যে এটি আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল I |
নবী ইউনুস এবং ঈসা আল মসীহর মৃত্যু | নবী ইউনুস বিশাল মাছের ভেতরে থাকার সময়ে কবরের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন I এই একটি চিত্র ছিল যাকে ঈসা আল মসীহ ব্যাখা করতেন যে সেই একই ভাবে তিনিও মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করবেন I |
নবী সখরিয় এবং মৃত্যুর বন্দিদের মুক্তিদান | ঈসা আল মসীহ সখরিয়র একটি ভবিষ্যদ্বাণীকে উল্লেখ করেন যে তিনি ‘মৃত্যুর বন্দিদের’ (যারা ইতিমধ্যেই মারা গেছে) মুক্ত করবেন I মৃত্যুতে প্রবেশ করা এবং সেখানে যারা আটকে আছে তাদেরকে মুক্ত করার তাঁর মিশন সম্বন্ধে নবীদের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল I |
এই অনেক ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সাথে, নবীরা যারা কয়েকশত বছরের ব্যবধানে নিজেরা আলাদা হয়েছিল, বিভিন্ন দেশ সমূহে বাস করছিল, বিভিন্ন পৃষ্ঠভূমি ছিল, তবুও সকলে তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে ঈসা আল মসীহর মহান বিজয়ের কিছু অংশের উপরে ভবিষ্যদ্বাণী করতে মনোনিবেশ করেছিল – এটিই স্বাক্ষ্য যে এটি আল্লাহর পরিকল্পনা অনুসারে ছিল I এই কারণে, ঈসা আল মসীহর শিষ্যদের নেতা পিতর, শ্রোতাদের বললেন:
18কিন্তু ঈশ্বর তা এভাবেই পূর্ণ করেছেন, যা তিনি তাঁর সব ভাববাদীর দ্বারা অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন, বলেছিলেন যে তাঁর মশীহ কষ্টভোগ করবেন।
প্রেরিত 3
ঠিক তার অব্যবহিত পরে পিতর এটি বললেন, তিনি তখন ঘোষণা করলেন:
19সুতরাং, এখন তোমরা মন পরিবর্তন করো ও ঈশ্বরের প্রতি ফিরে এসো, যেন তোমাদের সব পাপ মুছে ফেলা হয় ও প্রভুর কাছ থেকে পুনরুজ্জীবনের সময় উপস্থিত হয়।
প্রেরিত 3
আমাদের জন্য আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি আছে যে আমরা আমাদের পাপ সমূহকে ‘মুছে ফেলতে পারি’ I আমরা এখানে দেখব এর অর্থ কি I