Skip to content
Home » কোরআন: কোনোও পার্থক্য নেই! হাদিস কি বলে?

কোরআন: কোনোও পার্থক্য নেই! হাদিস কি বলে?

  • by

 “কোরআন হ’ল মূল ধর্মগ্রন্থ – একই ভাষা, অক্ষর, এবং আবৃত্তি I মানবীয় ব্যাখ্যা বা বিকৃত অনুবাদের কোনো স্থান নেই …আপনি যদি পৃথিবীর চারপাশের যে কোনো বাড়ির থেকে কোরআনের কোনো একটি প্রতিলিপি ওঠান আমার সন্দেহ আপনি তাদের মধ্যে এমনকি একটি পার্থক্যও দেখতে পাবেন I” 

এক বন্ধু আমাকে এই নোটটি পাঠিয়েছিল I তিনি পবিত্র কোরআনের পাঠটিকে ইঞ্জিল/বাইবেলের সাথে তুলনা করছিলেন I ইঞ্জিলে ২৪,০০০ প্রাচীন পান্ডুলিপি রয়েছে এবং তাদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে, যেখানে কেবলমাত্র অল্প কয়েকটি শব্দের পার্থক্য রয়েছে I যদিও ২৪,০০০ পান্ডুলিপি জুড়ে সমস্ত বিষয় এবং ধারণাগুলো সমান, তাঁর মৃত্যুর মধ্যে ঈসা আল মসীহর আমাদের জন্য মুক্তিপণ প্রদান এবং পুনরুত্থানের বিষয় সহ, প্রায়শই দাবি করা হয়, যেমন উপরে করা হয়েছে, কোরআনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই I এটিকে বাইবেলের উপরে কোরআনের আধিপত্যের এক ইঙ্গিত এবং এর অলৌকিক সুরক্ষার স্বাক্ষ্য রূপে দেখা হয় I তবে কোরআনের গঠন এবং সংকলন সম্পর্কে হাদীস আমাদের কি বলে?             

নবী থেকে খলিফা কোরআনের গঠন

বর্ণিত: উমর বিন আল-খাত্তাব:

আমি হিশাম বিন হাকিম বিন হিজামকে আমার থেকে এক ভিন্ন ভাবে সুরা-আল-ফুরকান আবৃত্তি করতে শুনলাম I আল্লাহ’র দূত আমাকে এটি শিখিয়েছিলেন (এক ভিন্ন উপায়ে) I তাই আমি তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত ছিলাম (প্রার্থনার সময়ে) তবে আমি অপেক্ষা করলাম যতক্ষণ না এ শেষ করে, তারপরে আমি তার বস্ত্র দিয়ে তাকে গলার চারপাশে বাঁধলাম এবং এর দ্বারা তাকে কব্জা করলাম এবং তাকে আল্লাহর দুতের কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, “আমি তাকে সুরা-আল-ফুরকান এমনভাবে আবৃত্তি করতে শুনেছি যা আপনার আমাকে এটি শেখানোর থেকে আলাদা I” নবী আমাকে আদেশ দিলেন তাকে ছেড়ে দিতে এবং হিশামকে এটি আবৃত্তি করতে বললেন I যখন সে এটি আবৃত্তি করল, আল্লহর প্রেরিত বললেন,”এটি এইভাবেই প্রকাশিত হয়েছিল I” তিনি তখন আমাকে এটি আবৃত্তি করতে বললেন I যখন আমি এটি আবৃত্তি করলাম, তিনি বললেন, “এটি এইভাবেই প্রকাশিত হয়েছিল I কোরআন সাতটি বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশিত হয়েছে I অতএব যে উপায়ে এটি আবৃত্তি করলে তোমার পক্ষে সহজ হয় সেই উপায়ে কর I”     

শাহি আল-বুখারি ২৪:১৯ :বই ৪৪, হাদীস ৯

বর্ণিত ইবনে মাসুদ:

আমি এক ব্যক্তিকে এক নির্দিষ্ট উপায়ে একটি (কোরআন সম্বন্ধীয়) আয়াত আবৃত্তি করতে শুনলাম, এবং আমি নবীকে সেই একই আয়াতকে এক ভিন্ন উপায়ে আবৃত্তি করতে শুনেছিলাম I অতএব আমি তাকে নবীর কাছে নিয়ে গেলাম এবং সেই সম্বন্ধে বললাম তবে আমি তার মুখে অস্বীকৃতির ভাব লক্ষ্য করলাম, এবং তারপরে তিনি বললেন, “তোমরা উভয়ই সঠিক, তাই তোমরা পৃথক হবে না, কারণ জাতিরা তোমাদের মধ্যে মতভেদ হওয়ার আগেই, তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল I”    

শাহি আল-বুখারি ৩৪৭৬: বই ৬০, হাদীস ১৪৩

এই দুটো পরিষ্কারভাবে আমাদের বলে যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় কোরআনের আবৃত্তির বিভিন্ন সংস্করণ ছিল যাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর দ্বারা ব্যবহৃত এবং অনুমোদিত করা হয়েছিল I সুতরাং তার মৃত্যুর পরে কি ঘটল?  

আবু বকর এবং কোরআন

বর্ণিত জাইদ বিন থাবিত:

আবু বকর আস-সিদ্দিক আমাকে ডেকে পাঠান যখন ইয়ামামার লোকদের হত্যা করা হয়েছিল (অর্থাৎ মুসায়লিমার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এমন অনেক নবীর সঙ্গীরা), (আমি তার কাছে গেলাম) এবং ‘উমর বিন আল-খাত্তাবকে তার সাথে বসতে দেখলাম I আবু বকর তখন বললেন (আমাকে), “উমর আমার কাছে এসে বলল: ইয়ামামার লড়াইয়ের দিনে কোরআনের কোরার (অর্থাৎ যারা মন থেকে কোরআনকে জানত) মধ্যে হতাহতের সংখ্যা ভারী ছিল, আর আমি ভীত যে অন্যান্য যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলোতে কোরার মধ্যে আরও অনেক হতাহত ঘটতে পারে, যেখানে কোরআনের এক বৃহৎ অংশ হারিয়ে যেতে পারে I অতএব আমার পরামর্শ, তুমি (আবু বকর) আদেশ দাও যে কোরআন সংগ্রহ করা হোক “কিভাবে আপনি এমন কিছু করতে পারেন যা আল্লাহর প্রেরিত করেন নি?” আমি উমরকে বললাম, উমর বলল, “আল্লাহর কসম, ওটি একটি  ভাল প্রকল্প I” উমর আমাকে তার প্রস্তাব স্বীকার করতে তাগিদ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না আল্লাহ এর জন্য আমার বুক খুলে দেন আর আমি ধারণাটির মধ্যে ভালকে উপলব্ধি করতে শুরু করলাম যেটিকে উমর হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিল I” তখন আবুবকর বললেন (আমাকে), ‘আপমি একজন জ্ঞানী যুবক ব্যক্তি আর আপনার সম্বন্ধে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই, এবং আপনি আল্লাহর দুতের (ﷺ) পক্ষে স্বর্গীয় প্রেরণার কথা লিখতে থাকেন I সুতরাং আপনার কোরআনের (খন্ডিত লিপিগুলো) অন্বেষণ করে একটি বইয়ের মধ্যে সংকলিত করে রাখা উচিত I” আল্লাহ কসম, তারা যদি আমাকে পর্বতগুলোর মধ্যে একটিকে সরাতে বলত, আমাকে কোরআন সংগ্রহ করার এই আদেশের তুলনায় এটি আমার পক্ষে বেশি ভারী হত না I তখন আমি আবু বকরকে বললাম, “আপনি কি করে এমন কিছু করবেন যা আল্লাহর দূত (ﷺ) করেন নি?” আবু বকর উত্তর দিলেন, “আল্লাহ কসম, এটি একটি ভাল প্রকল্প I” আবু বকর আমাকে তার প্রস্তাব স্বীকার করতে তাগিদ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না আল্লাহ এর জন্য আমার বুক খুলে দেন যার জন্য তিনি আবু বকর এবং উমরের বুক খুলে দিয়েছেন I অতএব আমি কোরআন খুঁজতে এবং এটিকে সংগ্রহ করতে আরম্ভ করলাম (যা লেখা ছিল) তালপাতার বৃন্ত, পাতলা সাদা পাথর থেকে এবং সেই লোকেদের থেকেও যারা এটিকে মনে মনে জানত যতক্ষণ না আমি আবি খুযাইমা আল-আনসারির সাথে সুরা-আত-তৌবার (অনুশোচনা) শেষ আয়াতটি খুঁজে পেলাম এবং তাকে ছাড়া আমি আর কারোর কাছে এটিকে খুঁজে পাই নি I আয়াতটি হ’ল: সত্যই তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন প্রেরিত (মুহাম্মদ) এসেছেন I এটি তাকে দুঃখ দেয় আপনার যদি কোনো আঘাত বা অসুবিধা হয় ..(সুরাত-বারার’ (আত-তৌবা) শেষ পর্যন্ত (৯.১২৮-১২৯) I তখন তার মৃত্যু পর্যন্ত কোরআনের সম্পূর্ণ পান্ডুলিপি (প্রতিলিপি) আবু বকরের কাছে রইল, তারপরে উমরের কাছে তার জীবনের শেষ পর্যন্ত, এবং তার পরে উমরের কন্যা, হাফসার কাছে I    

শাহি আল-বুখারী ৪৯৮৬ : বই ৬৬, হাদীস ৮

এটা তখনকার সময় যখন আবু বকর খলিফা ছিল, সরাসরিভাবে মুহাম্মদ (আঃ) এর উত্তরাধিকারী I এটি আমাদের বলে যে মুহাম্মদ (সাঃ) কোরআনকে কখনও আদর্শ পাঠ্যে সংগ্রহ করেন নি বা কোনো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এই জাতীয় কোনো জিনিস করা উচিত I যারা কোরআন মনে রেখেছিল তাদের মধ্যে লড়াইয়ের ভারী হতাহতের সাথে, আবু বকর এবং উমর (সে দ্বিতীয় খলিফা হয়েছিল) জাইদকে বিভিন্ন সুত্র থেকে একটি কোরআনকে সংগ্রহ করা শুরু করতে প্ররোচিত করল I জাইদ প্রথমে অনিচ্ছুক ছিল কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) কখনও পাঠ্যটির মানদণ্ডের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেননি I নিম্নলিখিত হাদীস অনুসারে তিনি তার অমুগামীদের কোরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার সঙ্গীদের অনেকের উপরে ভরসা করেছিলেন I     

বর্ণিত মাসরিক:

আবদুল্লা বিন অমর আবদুল্লা বিন মাসুদকে উল্লেখ করলেন এবং বললেন, “আমি সেই মানুষটিকে সর্বদা ভালবাসবো, কারণ আমি নবীকে (ﷺ) বলতে শুনেছি, “চারজনের থেকে কোরআন ‘নাও (শেখ): আবদুল্লা বিন মাসুদ, সেলিম, মু’য়াধ এবং উবাই বিন কা’ব’”   

শাহি আল-বুখারি ৪৯৯৯:  বই ৬৬,হাদীস ২১    

যাইহোক, নবীর (সাঃ) মৃত্যুর পরে সঙ্গীদের মধ্যে এই বিভিন্ন আবৃত্তি সমূহের কারণে মতভেদ জন্মালো I নিচে সূরা ৯২:১-৩ (আল-লায়ল) এর উপরে হাদীস এক মতভেদের সম্বন্ধে বলে I  

বর্ণিত ইব্রাহিম:

 ‘আবদুল্লার (বিন মাসুদ) সঙ্গীরা আবু দারদার কাছে এলেন’, (এবং তার বাড়িতে তাদের পৌঁছনোর পূর্বে), তিনি তাদের সন্ধান করলেন এবং খুঁজে  পেলেন I তারপরে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, “তোমাদের মধ্যে কে আবদুল্লা যেমন এটিকে আবৃত্তি করে সেইরকম আবৃত্তি (কোরআন) করতে পার?” তারা উত্তর দিল, “আমরা সবাই I” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের মধ্যে কে এটিকে মনে মনে জানে?” তারা আলকামার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল I তখন তিনি আলকামাকে জিজ্ঞাসা করলেন I “তোমরা আবদুল্লা বিন মাসুদকে সুরা আল লায়ল (রাত্রি) আবৃত্তি করতে কিভাবে শুনলে?” আলকামা আবৃত্তি করলেন, ‘পুরুষ এবং স্ত্রীর কসম I’ আবু আদ-দারদা বললেন, “আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে নবীকে আমি এটিকে অনুরূপভাবে আবৃত্তি করতে শুনেছি, কিন্তু এই লোকেরা চায় আমি এটিকে আবৃত্তি করি:- ‘এবং তার কসম যিনি পুরুষ এবং স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন,’ কিন্তু আল্লাহ কসম, আমি তাদের অনুসরণ করব না I”          

ইউ-এস-সি-এম=এস-এ ওয়েব (ইংলিশ) রেফারেন্স খণ্ড.৬.বই ৬০, হাদীস ৪৬৮

আজকের কোরআনে সুরা আল-লায়ল ৯২:৩ এর দ্বিতীয় পাঠ রয়েছে I মজার বিষয় হ’ল আবদুল্লা, যিনি কোরআনের আবৃত্তির উপরে পূর্ববর্তী হাদীসের চারজনের একজন তাকে মুহাম্মদ(সাঃ) এর দ্বারা কোরআন সম্বন্ধীয় আবৃত্তির উপরে এক কর্ত্তৃত্ব রূপে বিশেষ ভাবে পৃথক করা হয়েছিল, এবং আবু আদ-দারদা এই আয়াতের জন্য এক ভিন্ন আবৃত্তি ব্যবহার করেছিলেন এবং অন্যদের অনুসরণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না I  

নিম্নলিখিত হাদীস দেখায় যে ইসলাম সাম্রাজ্যের সমগ্র অঞ্চল বিভিন্ন আবৃত্তি সমূহ অনুসরণ করছিল, এমন পর্যন্ত যে একজন যাচাই করতে পারতো কোথা থেকে কেউ এসেছিল কোন আবৃত্তি সে ব্যবহার করেছিল I নিচের ঘটনায়, কুফার ইরাকীরা আবদুল্লা বিন মাসুদের সুরা ৯২:১-৩ এর আবৃত্তি অনুসরণ করছিল I   

আলকামা জানিয়েছেন:

আমি আবু দারদার’, সঙ্গে দেখা করেছিলাম আর তিনি আমাকে বললেন: কোন দেশে আপনি থাকেন? আমি বললাম: আমি ইরাকের লোকেদের একজন I তিনি আবার বললেন: কোন শহরের? আমি জবাব দিলাম: কুফা শহর I তিনি আবার বললেন: তুমি কি আবদুল্লা মাসুদের আবৃত্তি অনুসারে আবৃত্তি কর? আমি বললাম: হ্যাঁ I তিনি বললেন: এই আয়াতটিকে (রাত যখন এটিকে আচ্ছাদন করে) আবৃত্তি কর I তাই আমি এটিকে (রাত যখন এটিকে আচ্ছাদন করে এবং দিন যখন আলোকিত হয়, এবং পুরুষ ও স্ত্রী সৃষ্টি করে) আবৃত্তি করলাম: তিনি হাঁসলেন এবং বললেন: আমি আল্লাহর দূতকে (ﷺ) এইভাবে আবৃত্তি করতে শুনেছি I      

শাহি মুসলিম ৮২৪ সি: বই ৬, হাদীস ৩৪৬

বর্ণিত ইবন আব্বাস:

‘উমর বললেন, উবাই (কোরআনের) আবৃত্তির মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন তথাপি তার আবৃত্তির কয়েকটিকে আমরা ছেড়ে দিই I’ উবাই বলেন, ‘আমি এটিকে আল্লাহর দুতের (ﷺ) মুখ থেকে নিয়েছি এবং যাই হোক না কেন কোনো কিছুর জন্য আমি ছাড়ব না I” কিন্তু আল্লাহ বললেন “আমাদের প্রকাশনগুলোর কোনটিকে আমরা বাতিল বা বিস্মৃত হওয়ার কারণ করি না তবে আমরা আরও ভাল বা অনুরূপ কিছুকে প্রতিস্থাপন করি I”    

শাহি আল-বুখারি ৫০০৫ : বই ৬৬, হাদীস ২৭ ২:১০৬

যদি উবাইকে কোরআনের আবৃত্তিতে ‘সর্বোত্তম’ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে  (তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যাকে পূর্বে মুহাম্মদ- সাঃ দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছিল), সম্প্রদায়ের অন্যরা তার আবৃত্তির কিছু বাদ দিয়েছিল I কোনটি বাতিল করতে হবে এবং কোনটি নয় সে বিষয়ে মতভেদ ছিল I বৈকল্পিক পাঠ এবং বাতিলকরণের বিষয়ে মতভেদ উত্তেজনা সৃষ্টি করছিল I আমরা নিচে হাদীসে দেখি কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা হ’ল I    

খলিফা উসমান এবং কোরআন

বর্ণিত আনাস বিন মালিক:

আর্মিনিয়া এবং আজারবাইজানকে জয় করার জন্য শাম এবং ইরাকের লোকেরা যখন যুদ্ধ চালাচ্ছিল সেই সময়ে হুধাইফা বিন আল-ইয়ামান উসমানের কাছে এলেন I হুধাইফা কোরআনের আবৃত্তির ক্ষেত্রে তাদের (শাম এবং ইরাকের লোকেরা) মতভেদ সম্পর্কে ভীত ছিলেন I তাই তিনি উসমানকে বললেন, “হে বিশ্বাসীদের প্রধান! বইটি (কোরআন) সম্পর্কে তাদের মতভেদ হওয়ার আগেই এই জাতিকে রক্ষা করুন, যেমন যিহূদি এবং খ্রীষ্টানরা পূর্বে করেছিল I” তাই উসমান হাফসাকে এই বলে একটি বার্তা পাঠালেন, “কোরআনের পান্ডুলিপিগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও যাতে আমরা নিখুঁত অনুলিপিগুলোতে কোরআন সম্বন্ধীয় সামগ্রীগুলো সংকলন করতে পারি এবং পান্ডুলিপিগুলো তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারি I” হাফসা উসমানকে এগুলো পাঠিয়ে দিল I উসমান তখন জিদ বিন থাবিত, আবদুল্লা বিন আজ্জুবায়র. সৈয়দ বিন আল-আস এবং আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিশামকে পুঁথিগুলোকে নিখুঁত অনুলিপিতে পুনরায় লেখার জন্য আদেশ দিলেন I উসমান তিনজন কুরাইশি লোকদের বললেন, “কোনো কারণে যদি কোরআনের যে কোনো বিষয়ের উপরে জাইদ বিন থাবিতের সাথে তোমাদের মতভেদ হয়, তবে এটিকে কুরাইশদের উপভাষায় লিখবে, কোরআন তাদের জিহ্বায় অবতীর্ণ হয়েছিল I” তারা তাই করল, এবং যখন তারা অনেক অনুলিপিগুলো লিখে নিল, উসমান মূল পুঁথিগুলোকে হাফসার কাছে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন I উসমান তাদের করা অনুলিপিগুলোর থেকে একটি করে প্রতিলিপি প্রত্যেক মুসলিম প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন, এবং আদেশ দিলেন যে অন্যান্য সমস্ত কোরআন সম্বন্ধীয় সামগ্রীগুলোকে তা খন্ড খন্ড পান্ডুলিপিগুলোতে বা পুরো অনুলিপিগুলোতে লেখা হোক না কেন, পুড়িয়ে দেওয়া হোক I            

শাহি আল-বুখারি ৪৯৮৭ : বই ৬৬, হাদীস ৯

এই কারণেই আজ কোনো বৈকল্পিক পঠন নেই I এটি কারণ নয় যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কেবল একটি আবৃত্তি (তিনি করেন নি, তিনি সাতটি ব্যবহার করেছিলেন) গ্রহণ করেছিলেন বা ব্যবহার করেছিলেন, নাতো এই কারণে যে তিনি কোনো অনুমোদিত কোরআন সংকলিত করেছিলেন I তিনি করেননি I প্রকৃতপক্ষে, আপনি যদি অনলাইন সুন্নতে ‘বিভিন্ন আবৃত্তিগুলো’ অন্বেষণ করেন তবে সেখানে ৬১ হাদীস রয়েছে যা কোরআনের বিভিন্ন আবৃত্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করে I আজকের কোরআন বৈষম্যহীন কারণ উসমান (তৃতীয় খলিফা) পাঠ্য গুলোর মধ্যে একটিকে গ্রহণ করেছিলেন, এটিকে সম্পাদন করেছিলেন, এবং অন্য সমস্ত আবৃত্তিগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন I নিম্নোক্ত হাদীসগুলো আজকের কোরআনে এই সম্পাদনাটি কিভাবে থেকে যায় দেখায় I   

বর্ণিত ইবন আব্বাস:

উমর বললেন, “আমি ভীত যে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরে, লোকেরা বলতে পারে, “আমরা পবিত্র পুস্তকে রাজমের আয়াতগুলো (পাথর মেরে হত্যা) দেখতে পাই না,” এবং ফলস্বরূপ তারা আল্লাহ প্রকাশিত একটি বাধ্যবাধকতা রেখে বিপথগামী হতে পারে I লো! আমি নিশ্চিত করি যে অবৈধ যৌন মিলন করে তাকে রাজমের শাস্তি দেওয়া হবে, যদি সে ইতিমধ্যেই বিবাহ করে থাকে এবং স্বাক্ষ্য বা গর্ভাবস্থা বা স্বীকারোক্তির দ্বারা অপরাধটি প্রমাণিত হয় I সুফিয়ান যোগ করলেন, “আমি এই বর্ণনাটি এই ভাবে মুখস্ত করেছি I” উমর যোগ করলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর দূত (ﷺ) রাজমের শাস্তি বহন করেছিলেন, আর আমরাও তারপরে তাই করেছি I”       

শাহি আল-বুখারি ৬৮২৯: বই ৮৬, হাদীস ৫৬

বর্ণিত ইবন আব্বাস:

…আল্লাহ মোহম্মদকে সত্যের সাথে পাঠিয়েছিলেন এবং তার কাছে পবিত্র পুস্তকটি প্রকাশিত করেছিলেন, এবং আল্লাহ যা প্রকাশ করেছিলেন, তার মধ্যে  রাজমের আয়াতটি ছিল (বিবাহিত ব্যক্তিকে (পুরুষ এবং স্ত্রী) পাথর মারা) যে অবৈধ যৌন মিলন করে, এবং আমরা এই আয়াতটিকে আবৃত্তি করেছি এবং বুঝতে পেরেছি এবং এটিকে মুখস্ত করেছি I আল্লাহর দূত (ﷺ) পাথর মারার শাস্তিটি বহন করেছিলেন এবং তারপরে আমরাও তাই করেছি….    

বুখারি বই ৮৬, হাদীস ৫৭

আজকের দিনে কোরআনের মধ্যে ব্যাভিচারের জন্য পাথর মারা (রাজম) সম্বন্ধে কোনো আয়াত নেই I এটি এইভাবেই সম্পাদিত হয়েছিল I 

বর্ণিত ইবন আজ-জুবের: আমি উসমানকে বললাম, “সুরা-আল-বাকরার মধ্যে থাকা এই আয়াতটি: “আপনারা যারা মারা যান এবং পেছনে বিধবাকে পেছনে ফেলে রেখে যান…তাদের ফিরিয়ে না দিয়ে,” আর একটি আয়াত দ্বারা বাতিল করা হয়েছে I তাহলে কেন আপনি এটিকে  লিখবেন (কোরআনের মধ্যে)?” উসমান বললেন, “ছেড়ে দিন এটিকে (যেখানে এটি আছে)….কারণ এর কিছুই আমি বদলাব না (অর্থাৎ কোরআন) এর আসল অবস্থান থেকে I” 

উএসসি-এমএসএ ওয়েব (ইংরেজি)রেফারেন্স: খণ্ড ৬ বই ৬০ হাদীস ৬০   
আরবি রেফারেন্স : বই ৬৫, হাদীস ৪৫৩৬ বই ৬৫, হাদীস ৪৫৩৬

এখানে উসমান এবং আজ-জুবেরের মধ্যে আমরা একটি মতভেদ দেখি যে কোনো আয়াত বাতিল করার অর্থ এটি কোরআনে রাখা উচিত ছিল বা রাখা উচিত ছিল না I উসমানের কাছে তার উপায় ছিল আর তাই এই আয়াতটি আজকে কোরানের মধ্যে রয়েছে I তবে এটি নিয়ে বিতর্ক ছিল I   

উসমান এবং সুরা ৯ (আত তৌবা) এর
শিরোনাম

বর্ণিত উসমান ইবন আফফান:

ইয়াজিদ আল-ফারিশি বললেন: আমি ইবন আব্বাসকে বলতে শুনেছিলাম: আমি উসমান ইবন আফফানকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনাকে কি উৎসাহিত করল (সূরা) আল-বারাকে রাখতে যেটি মিন (সূরা) এর মধ্যে রয়েছে (একশত আয়াত রয়েছে) এবং (সূরা) আল আনফালকে যেটি মাথানি (সূরা) তে আস-সাবু আত-তিওয়ালের (প্রথম দীর্ঘ সূরা বা কোরআনের অধ্যায়গুলো) শ্রেনীর মধ্যে রয়েছে, এবং তাদের মধ্যে আপনি দয়াশীল, করুণাময় আল্লাহর নামে লেখেন নি?”   

উসমান উত্তর দিলেন: নবীর (ﷺ) নিকট যখন কোরআনের আয়াতগুলো  প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি কাউকে সেগুলো তার জন্য লিখতে ডেকেছিলেন এবং তাকে বললেন: এই আয়াতটি এমন সূরার মধ্যে রাখুন যাতে এই প্রকারের উল্লেখ রয়েছে; এবং যখন একটি বা দুটি আয়াত প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি অনুরূপভাবে বলতেন (সেগুলো সম্পর্কে) I (সূরা) আল-আনফাল প্রথম সূরা যেটি মদিনাতে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং (সূরা) আল-বারাহ কোরআনের মধ্যে শেষে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং এর বিষয়বস্তুগুলো আল-আনফালের সেগুলোর মতন অনুরূপ ছিল I আমি, তাই, ভাবলাম যে এটি আল-আনফালের একটি অংশ ছিল I তাই আস-সাবু আত-তিওআলের (সাতটি দীর্ঘ সুরা সমূহ) বিভাগে আমি তাদের  রাখলাম এবং তাদের মধ্যে “দয়াশীল, করুণাময় আল্লাহর নামে” আমি  লিখলাম না I       

দায়ুদ ৭৮৬:বই 2, হাদীস 396


সুরা ৯ (আত তৌবা বা আল-বারাহ) কোরআনের মধ্যে কেবলমাত্র সুরা যা ‘দয়াশীল, করুণাময় আল্লাহর নামে” শুরু হয় না’ I হাদীস ব্যাখ্যা করে কেন I উসমান ভাবলেন যে সুরা ৯ সুরা ৮ এর অংশ যেহেতু বিষয়বস্তু একই ছিল I প্রশ্নোত্তর থেকে আমরা দেখতে পারি যে এটি প্রাথমিক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্কিত ছিল I পরবর্তী হাদীসে উসমানের কোরআনের প্রতি একজন সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া দেখান হয়েছে I

আবদুল্লা (বি.মাসুদ) জানিয়েছিলেন যে তিনি (তার সঙ্গীদের কোরআনের তাদের প্রতিলিপিগুলো লুকিয়ে রাখতে বললেন) এবং আরও বললেন:

যে কেউ কিছু গোপন রাখে, সে বিচারের দিনে যা লুকিয়ে রেখেছিল তাকে তা আনতে হবে, এবং তারপরে বললেন: কার আবৃত্তির ধরণের উপরে আপনি আমাকে আবৃত্তি করতে আদেশ করেন? আমি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দুত  (ﷺ) এবং আল্লাহর দুতের (ﷺ) সঙ্গীদের সামনে কোরআনের সত্তর অধ্যায়ের বেশি আবৃত্তি করলাম এটিকে জেনে যে আলাহর পুস্তকের সম্বন্ধে আমার আরও ভাল ধারণা রয়েছে (তাদের চেয়ে), এবং আমি যদি জানতাম যে কারোর আমার চেয়ে ভাল ধারণা আছে, আমি তার কাছে যেতাম I সফিক বললেন: আমি মোহম্মদের (ﷺ) সঙ্গীদের সান্নিধ্যে বসেছিলাম তবে আমি কাউকে তা বাতিল করতে (অর্থাৎ, তার আবৃত্তি) বা এর মধ্যে কোনো ত্রুটি খুঁজে পেতে শুনি নি I

শাহি মুসলিম ২৪৬২: বই ৪৪, হাদীস ১৬২

     বেশ কয়েকটি জিনিস লক্ষনীয়:

১. আবদুল্লা বি. মাসুদ তার অনুগামীদের কোনো কারণের জন্য তাদের কোরআনকে লুকিয়ে রাখতে বললেন I

২. মনে হয় তাকে কেউ আলাদা আবৃত্তি করার নির্দেশ দিয়েছিল I উসমানের তার কোরআনের সংস্করণটি আদর্শস্বরূপ করার সময়টিকে উল্লেখ হিসাবে সব চেয়ে ভাল বোঝা যায় I

৩. কোরআনের আবৃত্তি করার তার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে ইবন মাসুদের আপত্তি ছিল যে: আমার (মাসুদ) বইটির সম্বন্ধে আরও ভাল ধারণা আছে I

৪. সফিক বললেন যে মাসুদের সঙ্গে মোহম্মদের সঙ্গীদের মতবিরোধ হয় নি I   

বর্তমানে কোরআনের পাঠ্য সংস্করণ

উসমানের সংস্করণ অনুসরণ করার পরেও, যাইহোক, বৈকল্পিক পাঠগুলো এখনও বিদ্যমান I প্রকৃতপক্ষে, এই মনে হয় যে নবীর (আঃ) পরে চতুর্থ শতাব্দিতে বিভিন্ন পঠনের প্রতি একটি অনুমোদিত মঞ্জুরি ছিল I তাই যদিও বর্তমানে আরবদের প্রধান পাঠ্য হাফস (বা হফস), সেখানে ওয়ারশও রয়েছে, বেশিরভাগ উত্তর আফ্রিকা, আল-দুরিতে ব্যবহৃত হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পশ্চিম আফ্রিকা এবং এখনও অন্যত্র ব্যবহৃত হয় I এই পাঠগুলোর মধ্যে পার্থক্যটি বানান এবং কিছুটা শব্দের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে, সাধারণত অর্থের উপরে কোনো প্রভাব ফেলে না, তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে যার সাথে কেবল তাৎক্ষনিক  প্রসঙ্গের ক্ষেত্রে অর্থের উপরে প্রভাব রয়েছে কিন্তু বৃহত্তর চিন্তার মধ্যে নয় I        

তাই কোরআনের কোন সংস্করণটি ব্যবহার করা উচিত তার একটি বিকল্প রয়েছে I

আমরা জেনেছি যে বর্তমানে কোরানের মধ্যে বৈকল্পিক আরবী পাঠ্য আছে, এবং এটি নবী মোহম্মদের (সাঃ) পরে সম্পাদনা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল I বর্তমানে কোরআনের পাঠ্যের মধ্যে এই ধরণের ক্ষুদ্র পার্থক্য হওয়ার কারণ হ’ল অন্যান্য সমস্ত সংস্করণগুলোকে সেই সময়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল I কোরআনের কোনো বিকল্প পাঠ্য পাদটীকা নেই, এই জন্য না যে তার কাছে কোন বিকল্প পাঠ্য ছিল না, বরং এই কারণে যে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল I উসমান সম্ভবত কোরানের একটি ভাল আবৃত্তি উৎপন্ন করেছিলেন, তবে এই কেবল একমাত্র একটি ছিল না, এবং এটিকে বিতর্ক ছাড়া প্রস্তুত করা হয় নি I সুতরাং কোরআন হ’ল “মূল ধর্মগ্রন্থ – এটি ভাষা, অক্ষর এবং আবৃত্তি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে গৃহীত ধারণা I মানবীয় ব্যাখ্যার কোনো স্থান নেই” ভুল I যদিও বাইবেল এবং কোরআন উভয়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঠ্য আছে, এছাড়াও তাদের উভয়ের শক্তিশালী পান্ডুলিপির প্রমাণ আছে যা ইঙ্গিত দেয় যে বর্তমানে যে লেখাটি আছে তা আসলটির কাছাকাছি I উভয় আমাদের আসলটির বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনা দিতে পারে I অনেকে কোরআন সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে অযৌক্তিক শ্রদ্ধার সাথে এবং বাইবেল সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে অযৌক্তিক অবজ্ঞার দ্বারা বইগুলোর বার্তা বুঝতে চাওয়ার থেকে বিভ্রান্ত হন I বইগুলো বোঝার দিকে মনোনিবেশ করা আমাদের পক্ষে আরও ভাল I সেই কারণেই তাদের প্রথম স্থান দেওয়া হয়েছিল I শুরু করার জন্য একটি ভাল জায়গা হল আদম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *