মহান হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে পূর্ববর্তী চিহ্নর মধ্যে একটি পুত্রের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল I আর আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি রাখলেন I আসলে তাওরাত ইব্রাহিম (আঃ) এর বিবরণ দিতে থাকে বর্ণনা করতে যে সে কিভাবে দুইটি পুত্র পেল I তাওরাত বলে কিভাবে সে হাজেরার মাধ্যমে তার পুরো ইসমাঈলকে পেল এবং তারপর পরবর্তী কালে আদিপুস্তক ২১ বলে কিভাবে সে সারার মাধ্যমে প্রায় ১৪ বছর পরে তার পুত্র ইসাককে পেল I দুর্ভাগ্যক্রমে তার পরিবারে দুই স্ত্রী হাজেরা এবং সারার মধ্যে এটি একটি বিরাট শত্রুতায় পরিণত করল, এবং শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিমকে হাজেরা এবং তার পুত্রকে দুরে পাঠিয়ে দিতে হল I আপনি এখানে পড়তে পারেন এটি কিভাবে ঘটল এবং কিভাবে আল্লাহ হাগর এবং ইসমাঈলকে অন্য ভাবে আশির্বাদিত করলেন I
হযরত ইব্রাহিমের বলিদান: ঈদ আল-আদ্হার ভিত্তি
অতএব তার পরিবারে কেবলমাত্র একটি পুত্র অবশিষ্ট থাকতে ইব্রাহিমের সঙ্গে (আঃ) তার মহানতম পরীক্ষার সাক্ষাতকার হল কিন্তু এটি এমন একটি যা আমাদের জন্য সরাসরিভাবে এক মহান উপলব্ধিকে উন্মুক্ত করে দেয় I আপনি তাওরাত এবং কোরআন থেকে তার পুত্রের বলিদানের পরীক্ষা সম্বন্ধে এখানে পড়তে পারেন I বইগুলোর এই কাহিনী থেকে বোঝা যায় কেন ঈদ আল-আদ্হা উদযাপন করা হয় I কিন্তু এটি কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয় I এর থেকে আরও অধিক I
আমরা বইগুলোর বিবরণ থেকে দেখতে পারি যে এটি ইব্রাহিমের (পিবিইউএইচ), জন্য একটি পরীক্ষা নয়, বরং এটি ঠিক তার থেকেও বেশি I যেহেতু ইব্রাহিম একজন ভাববাদী তাই এই পরীক্ষাও আমাদের জন্য একটি চিহ্ন, যাতে আমাদের জন্য ঈশ্বরের যত্নের সম্বন্ধে আরও অধিক জানতে পারি I কিভাবে এটি একটি চিহ্ন হল? দয়া করে নামটিকে নোট করুন যা ইব্রাহিম স্থানটিকে দিয়েছিল যেখানে তার পুত্রকে বলিদান দেওয়ার কথা ছিল I তৌরাতের এই অংশকে এখানে দেখানো হয়েছে যাতে করে আপনি এটিকে সরাসরিভাবে পড়তে পারেন I
১৩ তখন অব্রাহাম চোখ তুলে চাইলেন, আর দেখ, তাঁর পিছন দিকে একটি ভেড়া, তার শিং ঝোপে বাঁধা; পরে অব্রাহাম গিয়ে সেই মেষটি নিয়ে নিজের পুত্রের পরিবর্তে হোমের জন্য বলিদান করলেন।
আদিপুস্তক ২২:১৩-১৪
১৪ আর অব্রাহাম সেই জায়গার নাম যিহোবাa-যিরি [সদাপ্রভু যোগাবেন] রাখলেন। এই জন্য আজও লোকে বলে, “সদাপ্রভুর পর্বতে যোগান হবে।”
নামটিকে লক্ষ্য করুন যা ইব্রাহিম (‘তাওরাতের মধ্যে আব্রাহাম’)সেই স্থানটিকে দিয়েছিল I সে এটির নামকরণ করল ‘সদাপ্রভু যোগান দেবেন’ I ওই নামটি কি অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের মধ্যে আছে? এটি স্পষ্টরূপে ভবিষ্যৎ কালের মধ্যে রয়েছে I এবং এমনকি উক্তিটির আরও স্পষ্ট হওয়ার জন্য যা অনুসরণ করে (যাকে মুসা – আঃ – সন্নিবিষ্ট করল যখন সে তাওরাতের মধ্যে এই বিবরণটিকে প্রায় ৫০০ বছর পরে সংকলন করল) এটি পুনরুক্তি করে “…এটিকে যোগান দেওয়া হবে”I পুনরায় এটি ভবিষ্যৎ কালের মধ্যে এবং ভবিষ্যতের দিকে দেখছে I অধিকাংশ লোক ভাবে যে ইব্রাহিম ভেড়াটির সম্বন্ধে উল্লেখ করছে (একটি পুরুষ ভেড়া) যেটাকে ঝাড়ের মধ্যে ধরা হয়েছিল এবং বলি দেওয়া ও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল I কিন্তু যখন ইব্রাহিম স্থানটির নামকরণ করে তখন ইতিমধ্যেই ভেড়াটি মৃত, উৎসর্গীকৃত এবং অগ্নিদগ্ধ হয়েছে I যদি ইব্রাহিম ভেড়াটির কথা ভাবতো – যে ইতিমধ্যেই মৃত, উৎসর্গীকৃত এবং অগ্নিদগ্ধ – সে এর নাম দিয়ে থাকত ‘সদাপ্রভু যোগান দিয়েছেন’ , অর্থাৎ অতীত কালের মধ্যেI এবং মুসা (আঃ) যদি সে ভেড়াটির সম্বন্ধে এইরকম ভাবত যে সে ইব্রাহিমের স্থান নিয়েছে, তবে মন্তব্য করে থাকত ‘এবং আজ অবধি এটি বলা হত’ “সদাপ্রভুর পর্বতে এটিকে যোগান দেওয়া হয়েছিল” I কিন্তু উভয়ে ইব্রাহিম এবং মুসা স্পষ্টভাবে এটিকে ভবিষ্যত কালের মধ্যে এক নাম দিয়েছেন I এবং তাই ইতিমধ্যেই মৃত ও উৎসর্গীকৃত ভেড়ার সম্বন্ধে ভাবছে না I
সুতরাং তারা তখন কি ভাবছিল? যদি আমরা একটি সুত্রর খোঁজ করি আমরা দেখি যে সেই স্থানটি যেখানে আল্লাহ ইব্রাহিমকে এই চিহ্নর প্রারম্ভে যেতে বললেন ছিল:
তখন তিনি বললেন, “তুমি নিজের ছেলেকে, তোমার একমাত্র ছেলেকে, যাকে তুমি ভালবাস, সেই ইসহাককে নিয়ে মোরিয়া দেশে যাও এবং সেখানকার যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলব, তার উপরে তাকে হোম বলির জন্য বলিদান কর।”
আদিপুস্তক ২২:২
এটি ‘মোরিয়াতে’ ঘটল I এবং কোথায় সেটি? যদিও ইব্রাহিমের সময়ে (২০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এটি একটি প্রান্তর ছিল, এক হাজার বছর পরে (১০০০ খ্রীষ্টাব্দ), বিখ্যাত রাজা দাউদ (ডেভিড) সেখানে যিরূশালেম নগরটির স্থাপনা করলেন, এবং তার পুত্র সুলেমান (শলোমন) সেখানে মন্দির নির্মাণ করলো I আমরা যাবুরের মধ্যে এই সম্বন্ধে পড়ি যে:
পরে শলোমন যিরূশালেমে মোরিয়া পর্বতে সদাপ্রভুর গৃহ তৈরী করতে শুরু করলেন; সদাপ্রভু সেখানে তাঁর বাবা দায়ূদকে দর্শন দিয়েছেন এবং দায়ূদ সেই জায়গা নির্বাচন করেছিলেন; তা যিবূষীয় অর্ণানের খামার
২ বংশাবলি ৩:১
অন্য কথায়, ইব্রাহিমের সময় (এবং পরে মুসা) ‘মোরিয়া পর্বত’ প্রান্তরের মধ্যে একটি বিচ্ছিন্ন পর্বত শীর্ষ ছিল কিন্তু ১০০০ বছর পরে দাউদ এবং সুলেমানের সহায়তায় এটি ইস্রায়েলীদের কেন্দ্র এবং রাজধানী নগরে পরিণত হল যেখানে তারা সদাপ্রভুর মন্দির নির্মাণ করলেন I এবং এই বিশেষ দিন অবধি এটি ইহূদি লোকেদের জন্য একটি পবিত্র স্থান I
মোরিয়া পর্বতকে সদাপ্রভু মনোনীত করেছিলেন, ইব্রাহিম আঃ নয় I যেমন সূরা আল-জিন (সূরা ৭২ – জিনটি) ব্যাখ্যা করে:
“এবং উপাসনা স্থানসমূহ ঈশ্বরের পক্ষে (সুতরাং) সুতরাং তোমরা ঈশ্বরের সাথে কাউকে ডাকো না;
সূরা আল- জিন ৭২:১৮
আরাধনার স্থান সদাপ্রভুর দ্বারা মনোনীত হয়েছিল I আমরা দেখতে পাই কেন এই স্থানটিকে মনোনীত করা হয়েছিল I
ঈশা আল মসিহ এবং মোরিয়া পর্বতের উপরে বলিদান
আর এখানে ঈসা আল মসিহ (আঃ) এবং ইঞ্জিলের প্রতি আমরা একটি সরাসরি সংযোগকে দেখি I আমরা এই সংযোগকে দেখি যখন আমরা ঈসার উপাধিগুলোর একটির সম্বন্ধে জানি I ঈসাকে তার প্রতি অনেক উপাধি দেওয়া হয়েছিল I হয়ত সর্বাধিক সুপরিচিত ‘মসীহ্’ উপাধি (যা আবারও ‘খ্রীষ্ট’) I কিন্তু তাঁকে আরও একটি উপাধি দেওয়া হয়েছিল যেটি এতটা সুপরিচিত নয়, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন I আমরা এটিকে ইঞ্জিলের মধ্যে দেখি যখন যোহনের সুসমাচারের মধ্যে আমরা দেখি যে ভাববাদী ইয়াহিয়া (ইঞ্জিলের মধ্যে বাপ্তিস্মদাতা যোহন) বলে:
পরের দিন জন (যাহা ইয়াহিয়া) যীশুকে (অর্থাত্ ঈসা) তাঁর দিকে আসতে দেখলেন এবং বললেন, “দেখ ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি পৃথিবীর পাপকে সরিয়ে নিয়ে যান। এটিই আমি বোঝাতে চেয়েছি যখন আমি বলেছিলাম যে ‘আমার পরে একজন আসেন তিনি আমার আগে ছুঁড়েছিলেন কারণ তিনি আমার আগে ছিলেন’ “
যোহন ১:২৯-৩০
একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঈশা (আঃ) এর কম পরিচিত একটি উপাধি, যাকে যাহার দ্বারা দেওয়া হয়েছিল ‘ঈশ্বরের মেষশাবক’ I এখন ঈশার জীবনের শেষকে বিবেচনা করুন I কোথায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল? এটি যিরূশালেমমের মধ্যে ছিল (যেটিকে আমরা যেমন দেখলাম সেই একই ‘মোরিয়া পর্বত’) I তাঁর গ্রেফতারের সময় এটিকে অত্যন্ত স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করা হয় যে:
পরে যখন তিনি জানতে পারলেন, ইনি হেরোদের রাজ্যের লোক, তখন তাঁকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ সেই দিন তিনি যিরুশালেমে ছিলেন।
লুক ২৩:৭
অন্য কথায়, গ্রেফতার, বিচার এবং ঈশার প্রাণদণ্ড যিরূশালেমমে ঘটেছিল (= মোরিয়া পর্বত) I
ইব্রাহিমে ফেরা যাক I কেন সে সেই স্থানটির নামকরণ ভবিষ্যত কালে স্থাপন করল ‘সদাপভু
যোগান দেবেন’? তিনি একজন নবি ছিলেন এবং জানতেন যে সেখানে কিছু ‘যোগান’ দেওয়া হবে I এবং নাটকের দৃশ্যে, ইব্রাহিমের পুত্রকে শেষ মুহুর্তে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা হয় কারণ তার পরিবর্তে একটি মেষশাবক মারা গেল I দুহাজার বছর পরে, ঈশাকে ‘ঈশ্বরের মেষশাবক’ বলা হল এবং একই স্থানে গ্রেফতার করা হল ও প্রাণদণ্ড দেওয়া হল!
বলিদান: মৃত্যু থেকে ইব্রাহিমকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে
এটি কি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? আমি লক্ষ্য করি কিভাবে ইব্রাহিমের এই চিহ্নটি শেষ হয়I কোরানের ১০৭ আয়াত ইব্রাহিমের (আঃ) সম্পর্কে এটি বলে যে
আর আমরা তাকে মুক্ত করলাম একটি আবশ্যক বলিদানের দ্বারা
সুরা ৩৭:১০৭ সাফ্ফত
‘মুক্ত’ হওয়া বলতে কি বোঝায়? মুক্তিপণ দেওয়া হল কোনো কারোর জন্য পণ দেওয়া যাকে বন্দীকে মুক্তি দিতে একজন বন্দী রূপে ধরা হয় I ইব্রাহিম (আঃ) এর জন্য ‘মুক্তিপণ’ হওয়ার অর্থ যে তিনি কোনো কিছুর জন্য একজন বন্দী ছিলেন (হ্যাঁ এমনকি যদিও একজন মহান নবি) I তিনি কিসের বন্দী ছিলেন? তার পুত্রের সাথে দৃশ্যটি আমাদের বলে I তিনি মৃত্যুর একজন বন্দী ছিলেন I এমনকি যদিও তিনি একজন নবি ছিলেন, মৃত্যু তাকে বন্দী করেছিল I আমরা আদমের চিহ্ন থেকে দেখেছি যে আল্লাহ আদম এবং তার সন্তানদের সৃষ্টি করলেন (প্রত্যেককে – ভাববাদী সহ) মরণশীল – তারা এখন মৃত্যুর বন্দী ছিল I কিন্তু উৎসর্গীকৃত মেষশাবকের এই দৃশ্যে ইব্রাহিমক (আঃ) কে এর থেকে মুক্ত করা হল I যদি আপনি চিহ্নগুলোর (আদম, কাবিলও হাবিল, নোহ, ইব্রাহিম) অনুক্রমকে এই পর্যন্ত পর্যালোচনা করেন আপনি দেখবেন পশুবলিকে ভাববাদীদের দ্বারা প্রায়শই ব্যবহার করা হত I তারা এই বিষয়ে কিছু জানত যা হয়তো আমাদের রেহাই দিতে পারে I আর আমরা দেখতে পারি যেহেতু এই কার্যটি আবারও ভবিষ্যতের ঈশা “ঈশ্বরের মেষশাবকের’ দিকে নির্দেশ করে যে এটি কোনো না কোনো রূপে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ I
বলিদান: আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ
আর মোরিয়া পর্বতের উপরে মেষশাবকের বলিদান আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ I বিনিময়ের শেষে আল্লাহ ইব্রাহিম্র কাছে ঘোষণা করলেন যে
আর তোমার বংশে পৃথিবীর সব জাতি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে পালন করেছ।
আদিপুস্তক 22:18
‘পৃথিবীর উপরে জাতিগণের’ মধ্যে আপনি যদি যে কোনো একটির মধ্যে থাকেন (এবং আপনি করেন!) এটি আপনাকে চিন্তিত করাবে কারণ প্রতিশ্রুতি হলো যে আপনি তখন স্বয়ং আল্লাহর থেকে একটি ‘আশীর্বাদ’ পেতে পারেন! সেটি কি উপযুক্ত নয়? ঈশার সঙ্গে ইব্রাহিমের কাহিনীর এই সংযোগ কিভাবে আমাদের কাছে একটি আশীর্বাদে পরিণত করে? এবং কেন? আমরা লক্ষ্য করি যে ইব্রাহিম (আঃ) কে ‘পণ দ্বারা মুক্ত’ করা হয়েছিল এবং এটি আবারও আমাদের জন্য একটি নির্দেশক হতে পারে, কিন্তু তা ছাড়া যে উত্তরটি অনায়াসে এখানে প্রতীয়মান নয় তাই আমরা মুসার চিহ্নগুলোর (তার কাছে দুটি আছে) সাথে চলতে থাকব এবং সেগুলো আমাদের জন্য এই প্রশ্নগুলোকে প্রাঞ্জল করবে I
কিন্তু আপাতত আমি কেবলমাত্র উল্লেখ করতে চাই যে ‘বংশ’ শব্দটি এখানে একবচনের মধ্যে আছে I এটি ‘বংশ সমূহ’ নয় যেমন অনেক বংশধর বা লোকেরা I ইব্রাহিমের একটি ‘বংশের’ মাধ্যমে একটি আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি একবচনের মধ্যে ছিল – একবচন যেমন ‘তিনি’, অনেক লোকের মাধ্যমে নয় অথবা লোকেদের এক গোষ্ঠীর মাধ্যমে নয় যেমন ‘তাদের’ I মুসার নিস্তারপর্বর চিহ্ন আরও বুঝতে আমাদের এখন সাহায্য করবে I