হযরত মুসা(আঃ) এবং হযরত হারুণ (আঃ) ৪০ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিয়েছেন I তারা আজ্ঞাগুলো লিখেছেন ও বলি সমূহের প্রবর্তন করেছেন, এবং তাওরাতের মধ্যে অনেক চিহ্নগুলো I শীঘ্রই এই দুই ভাববাদীর মরার সময় আসে I তাওরাতের সমাপ্তিটিকে বিবেচনা করার পূর্বে আমাদের তাওরাতের নমুনাগুলোকে পর্যালোচনা করা যাক I
তাওরাতের মধ্যে নমুনাগুলোর পর্যালোচনা
তাহলে তাওরাতের মধ্যে চিহ্নগুলোর নমুনা কি?
তাওরাতের মধ্যে বলিদান
গুরুত্বটি লক্ষ্য করুন এবং কত ঘন ঘন বলি দেওয়া হয়েছে I আমাদের দেখা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্বন্ধে ভাবুন:
- হাবিল একটি সঠিক বলি উৎসর্গ করল: কাবিল একটি শাকসবজির বলি উৎসর্গ করল I কাবিলের বলি স্বীকৃত হল না যেহেতু মৃত্যুর দরকার ছিল I
- বন্যার পর নোহ (আঃ) একটি বলি উৎসর্গ করল I
- ইব্রাহিম (আঃ) প্রতিশ্রুত দেশে পৌঁছনোর পরে একটি বলি উৎসর্গ করলেন
- ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্রের সঙ্গে পরীক্ষার পরে একটি বলি রূপে পুরুষ মেষকে উৎসর্গ করলেন I তখন, ঠিক পরে তিনি ঘোষণা করলেন যে সেই একই স্থানের উপরে এটিকে ভবিষ্যতে ‘দেওয়া হবে’ I
- সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা নিস্তারপর্বের উপর বলি উৎসর্গ করল I এটি তাদেরকে মৃত্যুর থেকে রক্ষা করল আর যিহূদিরা এখনও একই দিনে প্রতি বছর নিস্তারপর্ব উদযাপন করে
- হারূণ (আঃ) নিজের জন্য একটি বলি উৎসর্গ করার পর, ইস্রায়েলীয়দের জন্য প্রতি বছর দুটি ছাগলের বলি উৎসর্গ করল I
- একটি বকনা বাছুরকে বলি দেওয়া হল যাতে এর ছাইগুলো একটি মৃত দেহের অশুচিতাকে শুচিশুদ্ধ করবে I
এই সমস্ত বলিগুলোকে শুদ্ধ প্রানীসমূহ দিয়ে উৎসর্গ করা হত – হয় মেষ, ছাগল বা ষাঁড় I বকনা বাছুর ছাড়া তারা সবাই পুরুষ ছিল I
এই বলিগুলো যারা উৎসর্গ করত তা সেই লোকেদের জন্য প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ হত I এর অর্থ যে সেগুলো একটি আচ্ছাদন ছিল যাতে বলিদানকারী লোকেদের অপরাধ ও লজ্জাকে আচ্ছাদন করা যেত I এটি আদমের সাথে শুরু হ’ল যে আল্লাহর থেকে চামড়ার স্বরূপে করুণা পেল I উলঙ্গতা ঢাকতে গেলে এই চামড়ার জন্য একটি প্রাণীর মৃত্যুর প্রয়োজন ছিল I একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়: কেন বলিদানগুলো আর কখনও দেওয়া বা উৎসর্গ করা হয় না? আমরা উত্তরটি পরে দেখব I
তাওরাতের মধ্যে ধার্মিকতা
‘ধার্মিকতা’ শব্দটির নিরন্তরভাবে পুনরাবির্ভাব হতে থাকল I আমরা এটিকে প্রথমে আদমের সাথে দেখলাম যখন আল্লাহ তাকে বলল যে ‘ধার্মিকতার পোশাক সর্বশ্রেষ্ঠ’ I আমরা দেখলাম যে ইব্রাহিমের উদ্দেশ্যে ধার্মিকতা ‘জমা করা’ হ’ল যখন তিনি একটি পুত্রের আগমনের প্রতিশ্রুতির উপরে বিশ্বাস করতে পচ্ছন্দ করলেন I ইস্রায়েলীয়রা ধার্মিকতা পেতে পারত যদি তারা আজ্ঞাগুলো পালন করত – কিন্তু তাদের সেগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পালন করতে হত – সর্ব সময়ে I
তাওরাতের মধ্যে বিচার
এছাড়াও আমরা দেখলাম যে আজ্ঞা সমূহ পালন করার ব্যর্থতা আল্লাহর বিচারের পরিণাম ঘটাল I এটি আদমের সাথে আরম্ভ হল, যাকে বিচার পেতে কেবল একবার মাত্র অবজ্ঞা করতে হয়েছিল I বিচার সর্বদা মৃত্যুর পরিণাম ঘটায় I মৃত্যু হয় ব্যক্তির বিচারিত হওয়ার উপরে বা প্রানীদের বলি হওয়ার উপর ছিল I নিম্নলিখিতগুলো সম্পর্কে ভাবুন:
- আদমের সাথে, চামড়ার জন্য বলির প্রাণী মারা গেল I
- হাবিলের সাথে – তার স্বীকৃত বলির প্রাণী মারা গেল I
- নোহ এর সাথে লোকেরা বন্যায় মারা গেল আর এমনকি নোহ, বন্যার পরে, এক বলি উৎসর্গ করায়, একটি প্রানীকে মরতে হল I
- লোটের সাথে, সদোম ও গোমরার লোকেরা বিচারের মধ্যে মারা গেল – পাশাপাশি তার স্ত্রীও I
- ইব্রাহিমের পুত্রের বলির সাথে পুত্রটি মারা যেত কিন্তু পরিবর্তে পুরুষ মেষটি মারা গেল I
- নিস্তারপর্বের সাথে হয় প্রথমজাত পুত্র (ফেরাউন এবং অন্যান্য অবিশ্বাসীদের জন্য) মারা গেল বা মেষশাবক মারা গেল যার রক্ত দরজার উপর লাগানো হ’ল I
- ব্যবস্থার আজ্ঞা সমূহের সাথে, হয় দোষী ব্যক্তি মারা গেল বা একটি ছাগল প্রায়শ্চিত্তর দিনে মারা গেল I
এর অর্থ কি? চলতে থাকার সাথে সাথে আমরা দেখব I কিন্তু এখন মুসা এবং হারুণ (আঃ) তাওরাতকে সমাপ্ত করতে যাচ্ছিল I কিন্তু তারা আল্লাহর থেকে সরাসরি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তার সাথে এইরকম করে, যেগুলোর উভয় ভবিষ্যতের দিকে দেখল এবং যা আমাদের জন্য আজকের দিনে গুরুত্বপূর্ণ – আসন্ন ভাববাদী ও অভিশাপ এবং আশীর্বাদ সমূহ I আমরা এখানে নবিকে দেখি।
আসন্ন নবি
আল্লাহ যখন সীনয় পর্বতের উপরে প্রস্তর ফলক দিলেন তিনি ক্ষমতার এক ভয়ংকর প্রদর্শনের সাথে এইরকম করলেন I ফলক দেওয়ার ঠিক পূর্বে তাওরাত দৃশ্যটির বর্ণনা করে
১৬ পরে তৃতীয় দিন প্রভাত হইলে মেঘগর্জন ও বিদ্যুৎ এবং পর্বতের উপরে নিবির মেঘ হইল, আর অতিশয় উচ্চরবে তূরীধ্বনি হইতে লাগিল; তাহাতে শিবিরস্থ সমস্ত লোক কাঁপিতে লাগিল। ১৭ পরে মোশি ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার জন্য লোকদিগকে শিবির হইতে বাহির করিলেন, আর তাহারা পর্বতের তলে দণ্ডায়মান হইল; ১৮ তখন সমস্ত সীনয় পর্বত ধূমময় ছিল; কেননা সদাপ্রভু অগ্নিসহ তাহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর ভাটির ধূমের ন্যায় তাহা হইতে ধূম উঠিতে লাগিল, এবং সমস্ত পর্বত অতিশয় কাঁপিতে লাগিল।
যাত্রাপুস্তক ১৯: ১৬-১৮
লোকেরা ভয়ে পরিপূর্ণ হ’ল I তাওরাত সেগুলোকে এইভাবে বর্ণনা করে
১৮ তখন সমস্ত লোক মেঘগর্জন, বিদ্যুৎ, তূরীধ্বনি ও ধূমময় পর্বত দেখিয়া ত্রাসযুক্ত হইল, এবং দূরে দাঁড়াইয়া রহিল। ১৯ আর তাহারা মোশিকে কহিল, তুমিই আমাদের সহিত কথা বল, আমরা শুনিব; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সহিত কথা না বলুন, পাছে আমরা মারা পড়ি।
যাত্রাপুস্তক ২০:১৮-১৯
এটি মুসা (আঃ) এর দ্বারা সম্প্রদায়কে ৪০ বছরের নেতৃত্ব দেওয়ার শুরুতে ঘটল I শেষে, আল্লাহ লোকেদের অতীতের ভয় স্মরণ করিয়ে, এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে হযরত মুসা (আঃ) অতীতের পরিস্থিতি সম্বন্ধে কথা বললেন I মুসা (আঃ) তাওরাতের মধ্যে নথিভুক্ত করেন:
১৫ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে। ১৬ কেননা হোরেবে সমাজের দিবসে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে এই প্রার্থনাই ত করিয়াছিলে, যথা, আমি যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রব পুনর্বার শুনিতে ও এই মহাগ্নি আর দেখিতে না পাই, পাছে আমি মারা পড়ি। ১৭ তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে। ১৮ আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন। ১৯ আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব। ২০ কিন্তু আমি যে বাক্য বলিতে আজ্ঞা করি নাই, আমার নামে যে কোন ভাববাদী দুঃসাহসপূর্বক তাহা বলে, কিম্বা অন্য দেবতাদের নামে যে কেহ কথা বলে, সেই ভাববাদীকে মরিতে হইবে। ২১ আর তুমি যদি মনে মনে বল, সদাপ্রভু যে বাক্য বলেন নাই, তাহা আমরা কি প্রকারে জানিব? ২২ [তবে শুন,] কোন ভাববাদী সদাপ্রভুর নামে কথা কহিলে যদি সেই বাক্য পরে সিদ্ধ না হয়, ও তাহার ফল উপস্থিত না হয়, তবে সেই বাক্য সদাপ্রভু বলেন নাই; ঐ ভাববাদী দুঃসাহসপূর্বক তাহা বলিয়াছে, তুমি তাহা হইতে উদ্বিগ্ন হইও না।
দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫-২২
আল্লাহ চেয়েছিলেন লোকেদের কাছে এক স্বাস্থ্যকর সম্মান থাকুক যাতে যখন তিনি ফলকের উপরে আজ্ঞা সমূহের কথা বললেন তিনি এমনভাবে করলেন যা লোকেদের মধ্যে প্রবল ভয়ের সঞ্চার করল I কিন্তু এখন তিনি ভবিষ্যতের দিকে দেখেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে সময় আসবে যখন ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে মুসা (আঃ) এর মতন একজন ভাববাদীকে উত্থাপন করা হবে I পরে দুটি পথনির্দেশক সুত্র দেওয়া হল:
1. আল্লাহ স্বয়ং লোকেদের দায়ী করবে যদি তারা আসন্ন ভাববাদীর দিকে মনোযোগ না দেয়
2. আল্লাহ একজন ভাববাদীর মাধ্যমে কথা বলেছেন কি না তা নির্ণয়ের উপায় হ’ল যে বার্তাটির ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হওয়া উচিত এবং এটি অবশ্যই সত্য হওয়া উচিত I
প্রথম পথ নির্দেশক সুত্রটি বোঝায় নি যে মুসা (আঃ) পরে কেবলমাত্র আর একজন ভাববাদী হবে, কিন্তু এমন একজন হবে যাকে বিশেষভাবে আমাদের অবশ্যই শোনা উচিত কারণ তার কাছে তার বার্তার সাথে এক অন্যন্য ভূমিকা থাকার ছিল – সেগুলো ‘আমার কথা’ হবে I যেহেতু কেবল আল্লাহ স্বয়ং ভবিষ্যৎকে জানেন – নিশ্চিতভাবে কোনো মানুষ নয় – দ্বিতীয় পথ নির্দেশক সূত্রটি লোকেদের কাছে জানার একটি উপায় ছিল যে একটি বার্তা আল্লাহর থেকে সত্যই এসেছে কি না I পরবর্তী পর্যায়ে আমরা দেখি মুসা (আঃ) এই দ্বিতীয় পথ নির্দেশক সূত্রটি কিভাবে ইস্রায়েলীয়দের আশীর্বাদ এবং অভিশাপ সমূহের মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের ভবিষ্যৎকে দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে ব্যবহার করলেন – যা তাওরাতকে সমাপ্ত করে I কিন্তু এই আসন্ন ভাববাদীর কি অবস্থা? কে ছিলেন তিনি? কতিপয় পন্ডিত প্রস্তাব দিয়েছে যে এটি ভাববাদী মোহম্মদ (আঃ) কে উল্লেখ করেছেন I
কিন্তু লক্ষ্য করুন যে ভাববাণীটি ব্যক্ত করে যে এই ভাববাদী ‘সাথী ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে’ হবে – এইরূপে একজন ইহূদি I তাই এটি তাকে উল্লেখ করতে পারে না I অন্য পন্ডিতগণ আশ্চর্য হয়েছেন এটি কি ভাববাদী ঈসা আল মসীহকে (আঃ) উল্লেখ করতে পারে I তিনি ইহূদি ছিলেন আর তিনি আবারও মহান কর্তৃত্বের সাথে শিক্ষা দিয়েছিলেন – যেন আল্লাহর বাক্য সমূহ ‘তার মুখের মধ্যে ছিল’ I ইসা আল মসীহর (আঃ) আগমন ইব্রাহিমের বলিদানের মধ্যে দূরদর্শিত হয়েছিল, নিস্তারপর্বের মধ্যে, এবং এছাড়া এই ভাববাণীর মধ্যে যে ঈশ্বরের বাক্য সমূহ ‘ভাববাদী’র মুখের মধ্যে ছিল।