যাবুরের পরিচিতির মধ্যে, আমি উল্লেখ করেছি যে হযরত তথা রাজা দাউদ (আঃ) গীতসংহিতা বইয়ের অনুপ্রাণিত রচনা সমূহের সাথে যাবুর শুরু করেছিলেন, এবং পরবর্তী ভাববাদীদের দ্বারা পরে অন্যান্য বইগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছিল I একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নবি ছিলেন যিশাইয়, যাকে অন্যতম বড় নবি বলে গন্য করা হয় (যেহেতু তার বই অনেক দীর্ঘ) I তিনি ৭৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বাস করতেন I নীচের কালপঞ্জি দেখায় যাবুরের অন্যান্য ভাববাদীদের তুলনায় যিশাইয় কখন বাস করতেন I
যাবুরের অন্যান্য নবিদের সাথে হযরত ইশাইয়া (আঃ) ঐতিহাসিক কালপঞ্জি
যদিও ইশাইয়া এত দীর্ঘ সময় আগে (প্রায় ২৮০০ বছর আগে) বসবাস করতেন তিনি ভবিষ্যৎ ঘটনা সমূহ সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যেমন হযরত মুসা (আঃ) পূর্বে বলেছিলেন একজন ভাববাদীর করা উচিত I তার ভবিষ্যদ্বাণী এমন এক স্তম্ভিতকারী অলৌকিক ঘটনার সম্বন্ধে ভাববাণী বলে যে সুরাহ সূরা আত-তাহরীম (সূরা ৬৬ – নিষিদ্ধকরণ) আয়াত ১২ এটিকে পুনরায় সংক্ষিপ্তভাবে ব্যক্ত করে I
আর (দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ‘ইমরান-কন্যা মারইয়ামের যে তার লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম। সে তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহে (তাওরাত, যবূর ও ইঞ্জীলে) বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। সে ছিল অনুগত ও বিনতদের অন্তর্ভুক্ত।
একজন।সুরাহ আট-তাহরিম ৬৬:১২
সূরা আত-তাহরীম কি বর্ণনা করছে? ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যাখ্যা করতে আমরা যিশাইয়র দিকে ফিরি I
যাবুরের পরিচিতির মধ্যে যেমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সুলেমানের (আঃ) পরবর্তী রাজারা বেশিরভাগ মন্দ ছিল, এবং ইশাইয়ার সময় কালে রাজাদের সম্বন্ধে এটি সত্য ছিল I তাই তার বই আসন্ন বিচারের (যা প্রায় ১৫০ বছর পরে ঘটেছিল যখন যিরূশালেম বেবিলন্দের দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল – ইতিহাসের জন্য এখানে দেখুন) সাবধানবাণী সমূহে পরিপূর্ণ থাকে I যাইহোক, এছাড়াও তিনি আরও দূরগামী ভবিষ্যদ্বাণী করলেন এবং তার ভবিষ্যতের গভীরে দেখলেন যখন আল্লাহ এক বিশেষ চিহ্ন পাঠাবেন – এখনও পর্যন্ত মানবতার কাছে যাকে পাঠানো হয় নি I ইশাইয়া ইস্রায়েলের রাজার সঙ্গে কথা বলেন, যিনি দাউদ (আঃ) এর একজন বংশধর, যার জন্যই এই চিহ্নকে ‘দাউদের গৃহে’ (ডেভিড) সম্বোধন করা হয় I
13তখন যিশাইয় বললেন, “দাউদের কুলের লোকেরা, এখন তোমরা শোনো! মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়াই কি যথেষ্ট নয়? তোমরা কি আমার ঈশ্বরেরও ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে? 14সেই কারণে প্রভু স্বয়ং তোমাদের এক চিহ্ন দেবেন: এক কুমারী-কন্যা গর্ভবতী হবে ও এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেবে এবং তাঁর নাম ইম্মানুয়েল রাখবে। 15মন্দকে অগ্রাহ্য করার ও ভালোকে বেছে নেওয়ার পর্যাপ্ত জ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত, সেই বালকটি দুধ ও দই খাবে,
যিশাইয় ৭:১৩-১৫
এটি নিশ্চিতরূপে একটি বলিষ্ঠ ভবিষ্যদ্বাণী! কুমারী স্ত্রীর এক পুত্রের সম্বন্ধে কে কবে শুনেছে? এই ধরণের একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণীকে বোধ হয় অনেক বছর ধরে লোকেরা অবাক হয়ে ভেবেছিল যে হয়তো কোনো ভুল হয়ে থাকবে I নিশ্চিতরূপে, একজন মানুষ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে শুধুমাত্র একটি অনুমান করে ব্যক্ত করবে না – এবং পরবর্তী প্রজন্ম সমূহের প্রত্যেকের পড়ার জন্য লিখবে – এমন ধরণের একটি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব ভবিষ্যদ্বাণী I কিন্তু সেখানে এটি ছিল I এবং আজকের দিনে বিদ্যমান মৃত সাগরের হস্তলিপি থেকে আমরা জানি যে এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবিকরূপে অনেক আগেই লেখা হয়েছিল – ঈসার (আঃ) জন্মের শতাধিক বছর পূর্বে I
ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল ঈসা আল মসীহ একজন কুমারীর থেকে জন্মগ্রহণ করবে
আমরা আজকের দিনে, ঈসা আল মসীহর (আঃ) পরে বেঁচে থেকে, দেখতে পারি যে তার আগমন সম্বন্ধে এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী I ইব্রাহিম, মুসা এবং মুহাম্মদ সহ অন্য কোনো ভাববাদী একজন কুমারীর থেকে কখনও জন্মগ্রহন করেনি, এইভাবে এই পৃথিবীতে এসেছে I তাই আল্লাহ, তার জন্মের শতাধিক বছর পূর্বে, তার আগমন সম্বন্ধে আমাদের একটি চিহ্ন দিচ্ছিলেন এবং এছাড়াও একজন কুমারীর পুত্রের এই আগমনের সম্বন্ধে জানতে আমাদেরকে প্রস্তুত করছিলেন I আমরা দুটি জিনিসকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করি I
তার মায়ের দ্বারা ‘ইম্মানুয়েল’ ডাকা হয়
প্রথমত, একজন কুমারীর এই আসন্ন পুত্রকে তার মায়ের দ্বারা ‘ইম্মানুয়েল’ বলে ডাকা হবে I এই নামের আক্ষরিক অর্থ হ’ল ‘ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন’ I কিন্তু তার অর্থ কি? এর সম্ভবতঃ বিভিন্ন অর্থ ছিল, কিন্তু যেহেতু এই ভবিষ্যদ্বাণী মন্দ রাজাদের কাছে ঘোষণা করা হয়েছিল যাদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই বিচার করতে যাচ্ছিলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ছিল যে যখন এই পুত্র জন্মগ্রহণ করবে তখন এটি একটি চিহ্ন ছিল যে ঈশ্বর আর তাদের বিরুদ্ধে বিচারে নেই বরং ‘তাদের সঙ্গে’ আছেন I ঈসা যখন জন্ম গ্রহণ করলেন, এটি বাস্তবিক মনে হ’ল যেন আল্লাহর দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের ভুলে যাওয়া হয়েছে যেহেতু তাদের শত্রুরা তাদের শাসন করত I কুমারীর পুত্রের জন্ম একটি চিহ্ন ছিল যে ঈশ্বর তাদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে নয় I লুকের সুসমাচারের মধ্যে ইঞ্জিল নথিভুক্ত করে যে তার মা মরিয়ম (বা মেরী) একটি পবিত্র গান গেয়েছিলেন যখন স্বর্গদূত তাকে তার আসন্ন পুত্রের সম্বন্ধে বার্তা দিয়েছিলেন I এই গানটির মধ্যে নিম্নলিখিত রয়েছে:
46তখন মরিয়ম বললেন, “আমার প্রাণ প্রভুর মহিমাকীর্তন করে, 47আমার পরিত্রাতা ঈশ্বরে আমার আত্মা উল্লাস করে। 48কারণ তিনি তাঁর এই দীনদরিদ্র দাসীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন। এখন থেকে পুরুষ-পরম্পরা আমাকে ধন্য বলে অভিহিত করবে। 49কারণ যিনি পরাক্রমী, যিনি আমার জন্য কত মহৎ কাজ সাধন করেছেন— তাঁর নাম পবিত্র। 50যারা তাঁকে ভয় করে, তাদেরই জন্য পুরুষ-পরম্পরায় তাঁর করুণার হাত প্রসারিত। 51তাঁর বাহু সব পরাক্রম কাজ সাধন করেছে; যারা অন্তরের গভীরতম ভাবনায় গর্বিত, তিনি তাদের ছত্রভঙ্গ করেছেন। 52শাসকদের তিনি সিংহাসনচ্যূত করেছেন, কিন্তু বিনম্রদের উন্নত করেছেন। 53তিনি উত্তম দ্রব্যে ক্ষুধার্তদের তৃপ্ত করেছেন, কিন্তু ধনীদের রিক্ত হাতে বিদায় করেছেন। 54আপন করুণার কথা স্মরণ করে, তিনি তাঁর সেবক ইস্রায়েলকে সহায়তা দান করেছেন। 55যেমন আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে বলেছিলেন, অব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি চিরতরে করুণা প্রদান করেছেন।”
লুক ১:৪৬-৫৫
আপনি দেখতে পারেন মরিয়ম, যখন তাকে জ্ঞাত করা হ’ল যে তার এক পুত্র হবে যদিও সে একজন কুমারী ছিল, এটিকে বুঝতে পারল অর্থ করতে যে প্রভু ইব্রাহিমের প্রতি তার দয়া এবং তার বংশধরদের চিরকালের নিমিত্ত স্মরণ করছিলেন I বিচারের অর্থ এই ছিল না যে আল্লাহ পুনরায় কখনও ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে থাকতে যাচ্ছেন না I
কুমারীর পুত্র ‘ভুলকে খারিজ করে এবং সঠিককে চয়ন করে’
ইশাইয়ার এই ভবিষ্যদ্বাণীর অদ্ভূত অংশটি হ’ল যে এই পুত্র ‘দই ও মধু খাবে যখন সে ভুল খারিজ করতে এবং সঠিককে চয়ন করতে যথেষ্টভাবে জানবে’I ইশাইয়া যা বলছেন তার অর্থ হ’ল এই পুত্র, সচেতন সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করতে যথেষ্ট বড় হওয়ার সাথে সাথে, ‘ভুলকে খারিজ করবে এবং সঠিককে চয়ন করবে’ I আমার এক যুবক পুত্র আছে I আমি তাকে ভালবাসি, কিন্তু নিশ্চিতরূপে কোনো উপায় নেই যে তার নিজের ক্ষমতায় সে ভুল খারিজ করছে এবং সঠিককে চয়ন করছে I আমার স্ত্রী এবং আমাকে কাজ করতে হয়, শিক্ষা দিতে, মনে করাতে, মৃদু ভর্ত্সনা করতে, একটি উদাহরণ স্থাপন করতে, অনুশাসন করতো, সঠিক বন্ধুদের যোগার করতে, নিশ্চিত করতে সে উপযুক্ত প্রেরণাস্রোতদের দেখে, ইত্যাদি, তাকে শিক্ষা দিতে যে সে ভুলকে খারিজ করে এবং সঠিককে চয়ন করে – আর এমনকি আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা স্বত্তেও সেখানে কোনো নিশ্চয়তা নেই I মাতা-পিতা রূপে আমি যখন এটি করতে চেষ্টা করছি, এটি আমার শৈশবের পুরোনো স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসে যখন আমার মাতা-পিতা ‘ভুলকে খারিজ করতে এবং সঠিককে চয়ন করতে’ আমাকে শিক্ষা দিতে একই সংঘর্ষের মধ্যে ছিলেন I মাতা-পিতা যদি ওই সমস্ত প্রচেষ্টা এবং কার্য না করেন, কিন্তু কেবল প্রকৃতিকে এর নিজের রাস্তায় যেতে দেন – তবে সন্তান এমন একজনে পরিণত হয় যে ‘ভুল খারিজ করে না এবং সঠিককে চয়ন করে না’ I এটি যেন আমরা এক ‘নৈতিক মাধ্যাকর্ষণের’ বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি যেখানে আমাদের প্রচেষ্টা বন্ধ করার সাথে সাথেই এটি নিচের দিকে নেমে আসে I
এই জন্যই আমরা সকলে আমাদের গৃহ এবং কামরার দরজা বন্ধ করি; প্রত্যেক দেশে পুলিশের কেন প্রয়োজন হয়: কেন আমাদের কাছে ব্যাঙ্কের কোড এবং পাসওয়ার্ডগুলো থাকে; আর কেন সমস্ত দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবিরত নতুন আইন তৈরী করার প্রয়োজন হতে থাকে – কারণ আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত করার প্রয়োজন হয় যেহেতু আমরা ‘ভুলকে খারিজ এবং সঠিককে চয়ন’ করি না I
ভাববাদীরাও এমনকি সর্বদা ভুলকে খারিজ করে না এবং সঠিককে চয়ন করে
আর এটি সত্য এমনকি ভাববাদীরাও I তাওরাত নথিভুক্ত করে যে দুটি ঘটনায় ভাববাদী ইব্রাহিম তার স্ত্রী সম্বন্ধে এই বলে মিথ্যা কথা বলেছিল যে সে শুধুমাত্র তার বোন (আদিপুস্তক ১২:১০-১৩ এবং ২০:১-২) I এটি আরও নথিভুক্ত করে যে হযরত মুসা (আঃ) একজন মিসরীয়কে হত্যা করেছিল (যাত্রাপুস্তক ২:১২) এবং কোনো ঘটনাই নিখুঁতভাবে আল্লাহর আদেশকে অনুসরণ করে নি (গণনাপুস্তক ২০:৬-১২) I হযরত মুহাম্মদকে (আঃ) সূরা মুহাম্মদে (সূরা ৪৭- মহাম্মদ) ক্ষমা চাইতে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল – দেখায় যে তিনিও সর্বদা ভুলকে খারিজ এবং সঠিককে চয়ন করেন নি I
কাজেই জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার ভুলত্রুটির জন্য আর মু’মিন ও মু’মিনাদের জন্য, আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত।
সুরাহ মহম্মদ ৪৭:১৯
মুসলিমের থেকে নিম্নলিখিত হাদিস দেখায় কতটা আন্তরিকভাবে তিনি ক্ষমার জন্য পার্থনা করেছিলেন I
আবু সূরা আশ’আরি তার পিতার কর্তৃত্বের উপরে জানালেন যে আল্লাহর প্রেরিত (তার উপরে শান্তি বর্তুক) এই কথাগুলোর দ্বারা মিনতি করতেন: “হে আল্লাহ, আমার অপরাধ, আমার অজ্ঞানতা, আমার উদ্বিগ্নতার মধ্যে আমার আতিশয্য ক্ষমা করুন I আর (আমার কার্যকলাপ সম্বন্ধে) আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন I হে আল্লাহ, আমায় ক্ষমা অনুমোদন করুন (আমার দ্বারা সঙ্ঘটিত অপরাধগুলোকে) গুরুতরভাবে বা অন্য ভাবে (এবং আমি অনিচ্ছাকৃত ও ইচ্ছাকৃতভাবে যা করেছি) I এই সমস্ত (ব্যর্থতাগুলো) আমার মধ্যে রয়েছে I হে আল্লাহ, অপরাধের থেকে আমায় ক্ষমা অনুমোদন করুন যাকে আমি ব্যস্ততায় বা বিলম্বে করেছি, যাকে আমি গোপনে বা প্রকাশ্যে করেছি এবং (সেইগুলো সম্বন্ধে) আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন I আপনিই প্রথম এবং শেষ এবং সমস্ত জিনিসগুলোর উপরে আপনি সর্বশক্তিমান”
মুসলিম ৩৫:৬৫৬৩
এটি হযরত দাউদ আঃ এর প্রার্থনার অনুরূপ যখন তিনি তার পাপের ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করলেন:
1হে ঈশ্বর, তোমার অবিচল প্রেম অনুযায়ী আমার উপর দয়া করো; তোমার অপার করুণা অনুযায়ী আমার সমস্ত অপরাধ মার্জনা করো। 2আমার সমস্ত অন্যায় মুছে দাও আর আমার পাপ থেকে আমাকে শুচি করো। 3কারণ আমি আমার অপরাধসকল জানি, আর আমার পাপ সর্বদা আমার সামনে আছে। 4তোমার বিরুদ্ধে, তোমারই বিরুদ্ধে, আমি পাপ করেছি আর তোমার দৃষ্টিতে যা অন্যায় তাই করেছি; অতএব তুমি তোমার বাক্যে ধর্মময় আর যখন বিচার করো তখন ন্যায়পরায়ণ। 5নিশ্চয়ই অপরাধে আমার জন্ম হয়েছে, পাপে আমার মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। 6তবুও মাতৃগর্ভে তুমি বিশ্বস্ততা কামনা করেছিলে; সেই গোপন স্থানে তুমি আমাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছিলে। 7আমার পাপ থেকে আমাকে শুদ্ধ করো, আর আমি নির্মল হব; আমাকে পরিষ্কার করো, আর আমি বরফের থেকেও সাদা হব। 8আমাকে আনন্দ ও উল্লাসের বাক্য শোনাও; আমার হাড়গোড়, যা তুমি পিষে দিয়েছ, এখন আমোদ করুক। 9আমার পাপ থেকে তোমার মুখ লুকাও আর আমার সব অন্যায় মার্জনা করো।
গীতসংহিতা ৫২:১-৯
কুমারীর পবিত্র পুত্র
কিন্তু ইশাইয়া দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা এই পুত্র স্বাভাবিকভাবে এবং একদম কম বয়স থেকেই ভুলকে খারিজ করে এবং সঠিককে চয়ন করে I তার জন্য এটি সহজাত প্রবৃত্তি I সেটি সম্ভব হওয়ার জন্য তার কাছে অবশ্যই এক ভিন্ন বংশধারা থেকে থাকবে I বাকি সমস্ত ভাববাদীরা, তাদের পিতাদের মাধ্যমে, আদমকে অনুসরণ করে, আর সে ‘ভুলকে খারিজ এবং সঠিককে চয়ন করে নি’ যেমন আমরা দেখেছি I বংশগতিবিষয়ক বিজ্ঞান পিতার প্রকৃতিকে তার বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, তাই আদমের বিদ্রোহী প্রকৃতি আমাদের সকলের মধ্যে ছড়িয়ে গেল আর এমনকি ভাববাদীদের মধ্যেও I কিন্তু একজন কুমারী-জাত পুত্রের কাছে, সংজ্ঞা অনুযায়ী, তার বংশের মধ্যে তার এক পিতা রূপে আদম থাকবে না I এই পুত্রের পৈত্রিক বংশ ভিন্ন হবে, এবং তাই তিনি পবিত্র হবেন I এই জন্যই কোরান, যখন মরিয়মের প্রতি কুমারী-জাত পুত্রের সম্বন্ধে দেবদূতসংক্রান্ত বার্তার বর্ণনা করছে, তখন পুত্রটিকে বলে ‘পবিত্র’ I
সে বলল, ‘আমি তোমার প্রতিপালক কর্তৃক প্রেরিত হয়েছি তোমাকে একটি পুত-পবিত্র পুত্র দানের উদ্দেশ্যে।’ সে বলল, ‘কেমন করে আমার পুত্র হতে পারে, যখন কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি, আর আমি অসতীও নই।’ সে বলল, ‘এভাবেই হবে, তোমার প্রতিপালক বলেছেন- ‘ওটা আমার জন্য সহজ, আমি তাকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চাই আর আমার পক্ষ থেকে এক রহমত, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’ অতঃপর ছেলে তার গর্ভে আসল। তখন সে তা নিয়ে দূরবর্তী জায়গায় চলে গেল।
সূরা মরিয়ম ১৯:১৯-২২-22
ভাববাদী যিশাইয় (পিবিউএইচ) স্পষ্ট ছিলেন, এবং পরবর্তী বইগুলো সম্মত হয় – সেখানে একজন পুত্র আসছিলেন যিনি এক কুমারীর থেকে জন্মগ্রহণ করবেন, এইরূপে কোনো পার্থিব পিতা থাকবে না এবং পাপের এই প্রকৃতি থাকবে না এবং এইরূপে পবিত্র হবে I
স্বর্গের মধ্যে আদমের কাছে অতীতের কাহিনী
কিন্তু এটি শুধুমাত্র পরবর্তী বইগুলোই নয় যা কুমারীর এই আসন্ন পুত্রের সম্বন্ধে কথা বলে I এটিও শুরুর থেকে সেখানে ছিল I আমরা আদমের চিহ্নর মধ্যে দেখেছি যে আল্লাহ শয়তানকে দেওয়া এক প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিলেন I আমি এখানে এটিকে পুনরুক্তি করছি I
15তোমার ও নারীর মধ্যে আর তোমার ও তার সন্তানসন্ততির মধ্যে আমি শত্রুতা জন্মাব; সে তোমার মাথা গুঁড়িয়ে দেবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালিতে আঘাত হানবে।”
আদিপুস্তক ৩:১৫
আল্লাহ ব্যবস্থা করবেন যে ইবলিস/শয়তান এবং স্ত্রী উভয়ের এক ‘বংশধর’ হবে I সেখানে এই বংশধরদের মধ্যে এবং স্ত্রী ও শয়তানের মধ্যে ‘শত্রুতা’ বা ঘৃনা হবে I শয়তান ‘পাদমূল আঘাত করবে’ যখন স্ত্রীটির বংশধর শয়তানের ‘মস্তক চূর্ণ করবে’ I এই সম্পর্কগুলোকে এই চিত্রের মধ্যে দেখা যায় I
স্বর্গে আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে চরিত্র এবং তাদের সম্পর্ক সমূহ
দয়া করে লক্ষ্য করুন যে আল্লাহ কখনও পুরুষকে বংশধরের প্রতিশ্রুতি দেননি যেমন তিনি স্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন I এটি বেশ অসাধারণ বিশেষভাবে তাওরাত, যাবুর এবং ইঞ্জিলের (আল কিতাব/বাইবেল) মধ্য দিয়ে পিতাদের মাধ্যমে আসা পুত্রদের সম্বন্ধে জোর দেয় I আসলে, আধুনিক পাশ্চাত্যের দেশবাসীদের দ্বারা এই বইগুলোর একই সমালোচনা হ’ল যে তারা স্ত্রীদের মধ্য দিয়ে যাওয়া রক্তের ধারাকে অগ্রাহ্য করে I তাদের দৃষ্টিতে এটি ‘যৌনবৈষম্যবাদ’ যেহেতু এটি কেবলমাত্র পুরুষের পুত্রদের বিবেচনা করে I কিন্তু এই ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন – সেখানে একজন পুরুষের থেকে আসা একটি বংশধরের (একজন ‘সে’) কোনো প্রতিশ্রুতি নেই I এটি কেবলমাত্র বলে যে সেখানে এক বংশধর হবে যে স্ত্রীটির থেকে আসছে, একজন পুরুষের উল্লেখ ছাড়াই I
ইশাইয়ার ‘এক কুমারীর পুত্র’ হয় স্ত্রীটির বংশধর
এখন ইশাইয়ার একজন কুমারীর থেকে এক পুত্রের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপ্রেক্ষিত থেকে এটি স্পষ্ট যে উদ্যানের মধ্যে এমনকি বহু পূর্বে যা বোঝানো হয়েছিল তা ছিল যে একজন বংশধর (পুত্র) কেবলমাত্র একজন স্ত্রীর (এইরূপে কুমারী) থেকে আসবে I আমি আপনাকে আগ্রহ করি পেছনে ফিরে যেতে এবং এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে আদমের চিহ্নর মধ্যে এই আলোচনা পড়তে এবং আপনি দেখবেন যে এটি ‘খাপ খায়’ I ইতিহাসের শুরু থেকে আদমের সমস্ত পুত্রদের একই সমস্যা আছে ‘ভুলকে খারিজ এবং সঠিককে চয়ন’ না করতে যেমন আমাদের পূর্বপুরুষ আদম করেছিল I তাই আল্লাহ, ঠিক তখনই যখন জগতে পাপ এল, একটি প্রতিশ্রুতি করলেন যে পবিত্র কেউ এবং আদমের থেকে নয় আসবেন এবং শয়তানের মস্তক ‘চূর্ণ’ করবেন I
কিন্তু এই পবিত্র পুত্র এটি কিভাবে করতে যাচ্ছিলেন? এটি যদি আল্লাহর থেকে একটি বার্তা দেওয়ার সম্বন্ধে হত, তবে ইব্রাহিম এবং মুসার (আঃ) ন্যায় অন্যান্য নবীরা আগেই বিশ্বস্তভাবে বার্তাগুলো দিয়ে দিত I না, এই পবিত্র পুত্রের ভূমিকা ছিল ভিন্ন, কিন্তু এটিকে বুঝতে যাবুরের মধ্যে আরও অন্বেষণ করার আমাদের প্রয়োজন আছে I