সূরা আস-সাজদাহ (সূরা ৩২ – প্রণিপাত) তাদের সম্বন্ধে বর্ণনা করে যারা প্রণিপাত হয়ে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে এবং তারপরে তাদের পুরষ্কারের কথা বলে
কোন ব্যক্তিই (এখন) জানে না চোখ জুড়ানো কী (জিনিস) তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে।
সূরা সেজদাহ ৩২:১৭
সূরা আর-রহমান (সূরা ৫৫ – হিতকর) আয়াস ৩৩ – ৭৭ অবধি ৩১ বারের জন্য প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করে
অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
সুরা আর-রহমান ৫৫: 13-77
এই জাতীয় আনন্দ যদি ধার্মিকদের জন্য সঞ্চয় করা হয়, তবে আমরা ভাবব যে কোনো কেউ প্রভুর থেকে এই ধরণের অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে না I সেটি ভয়াবহ বোকামি মনে হচ্ছে I কিন্তু ভাববাদী ঈসা আল মসীহ (আঃ) আমাদের শিক্ষা দিতে একটি দৃষ্টান্ত শেখালেন যে আমরা প্রভুর থেকে এই ধরণের অনুগ্রহ অস্বীকার করার প্রকৃত বিপদের মধ্যে আছি যাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয়েছে I প্রথমে অল্প একটু পর্যালোচনা I
আমরা দেখলাম যে ঈসা আল মসীহর (আঃ) কর্তৃত্বের বাক্য এমন ছিল যে ব্যাধি সমূহ এবং এমনকি প্রকৃতি তার আদেশ মানলো I এছাড়াও তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের সম্বন্ধে শেখালেন I যাবুরের ভাববাদীদের অনেকে একটি আসন্ন ঈশ্বরের রাজ্যের সম্বন্ধে লিখেছিলেন I ঈসা এই ভিত্তিতে শিক্ষাটি তৈরী করেছিলেন যে রাজ্য ‘নিকটে’ ছিল I
তিনি প্রথমে পাহাড়ের উপরে উপদেশের শিক্ষা দিলেন, দেখালেন ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিকদের কিভাবে একে অপরের প্রতি প্রেম করার ছিল I আমরা আজ দুর্দশা, মৃত্যু, অবিচার এবং ভয়াবহতার কথা চিন্তা করি (শুধু খবর শুনুন) কারণ আমরা তার প্রেমের সম্বন্ধে শিক্ষা শুনি না I ঈশ্বরের রাজ্যে বাস করা যদি এই পৃথিবীতে নরকের জীবনের চেয়ে মাঝে মাঝে আলাদা হয় তাহলে আমাদের একে অপরের সাথে অন্য রকম আচরণের দরকার – ভালবাসার সাথে I
মহান ভোজের দৃষ্টান্ত
যেহেতু এত কম লোকেরা ঈসা আল মসীহর (আঃ) শিক্ষার মতন বাস করে আপনি হয়ত ভাবতে পারেন যে খুব কম লোকেদের ঈশ্বরের রাজ্যে আমন্ত্রিত করা হবে I কিন্তু এটি সেইরকম নয় I রাজ্যের প্রতি আমন্ত্রণ কতটা প্রশস্ত এবং কতদূর পৌঁছায় তা বোঝাতে ঈসা আল মসীহ এক মহা ভোজের (একটি পার্টি) দৃষ্টান্ত শিখিয়েছিলেন I তবে এটি আমাদের প্রত্যাশা মত যায় না I ইঞ্জিল বিবরণ দেয়:
15তাঁর সঙ্গে ভোজে খাচ্ছিলেন এমন এক ব্যক্তি একথা শুনে যীশুকে বলল, “ধন্য সেই মানুষ, যে ঈশ্বরের রাজ্যের ভোজে আহার করবে।”
16যীশু উত্তর দিলেন, “কোনো ব্যক্তি এক বিশাল ভোজের আয়োজন করে বহু অতিথিকে নিমন্ত্রণ করলেন। 17ভোজের সময় তিনি তাঁর দাসের মারফত নিমন্ত্রিতদের বলে পাঠালেন, ‘সব আয়োজনই এখন সম্পূর্ণ, তোমরা এসো।’
18“কিন্তু তারা সবাই একইভাবে অজুহাত দেখাতে লাগল। প্রথম ব্যক্তি বলল, ‘আমি সবেমাত্র একটি জমি কিনেছি, আমাকে গিয়ে সেটি দেখতেই হবে। আমাকে মার্জনা করো।’
19“আর একজন বলল, ‘আমি এইমাত্র পাঁচজোড়া বলদ কিনেছি। সেগুলি পরখ করে দেখার জন্য আমি পথে বেরিয়ে পড়েছি। আমাকে মার্জনা করো।’
20“আর এক ব্যক্তি বলল, ‘আমি সবেমাত্র বিবাহ করেছি, তাই আমি যেতে পারছি না।’
21“পরে সেই দাস ফিরে এসে তার প্রভুকে এসব কথা জানাল। তখন সেই বাড়ির কর্তা ক্রুদ্ধ হয়ে তার দাসকে আদেশ দিলেন, ‘নগরের পথে পথে ও অলিগলিতে শীঘ্র বেরিয়ে পড়ো এবং কাঙাল, পঙ্গু, অন্ধ ও খোঁড়া—সবাইকে নিয়ে এসো।’
22“সেই দাস বলল, ‘প্রভু, আপনার আদেশমতোই কাজ হয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক জায়গা খালি আছে।’
23“প্রভু তখন তার দাসকে বললেন, ‘বড়ো রাস্তায় ও গ্রামের অলিগলিতে যাও এবং যাদের পাও তাদের জোর করে নিয়ে এসো যেন আমার বাসভবন ভর্তি হয়ে ওঠে। 24আমি তোমাকে বলছি, যাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল তাদের কেউই আমার ভোজের স্বাদ পাবে না।’ ”
লুক ১৪:১৫-২৪
তবে একটি অপ্রত্যাশিত মোচড় আছে I অতিথিদের মধ্যে অনেক কম লোকেরাই আসতে চায়I পরিবর্তে তারা অজুহাত তৈরী করে যে তাদের দরকার নেই! আর চিন্তা করুন অজুহাতগুলো কতটা অযৌক্তিক I বলদ কেনার আগে প্রথমে তাদের চেষ্টা না করে কে কিনে ফেলবে? কোনো ক্ষেত্রটি আগে থেকে অনুসন্ধান না করে কে কিনে ফেলবে? না, এই অজুহাতগুলো অতিথিদের হৃদয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে থাকে – তারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য উৎসাহিত ছিল না বরং পরিবর্তে অন্যান্য আগ্রহগুলো ছিল I
ঠিক আমরা যখন ভাবি যে এত কম লোকের ভোজসভায় যোগদানের জন্য প্রভু হয়ত নিরাশ হবেন, তখন আর একটি মোচড় I এখন ‘অসম্ভব’ লোকেরা যাদেরকে আমরা সবাই আমাদের মনের মধ্যে খারিজ করি মহান উৎসবে আমন্ত্রণের অযোগ্য বলে, যারা “রাস্তায় এবং গলিতে” এবং দূরবর্তী “পথে এবং পল্লীর গলিতে”, যারা “দরিদ্র, পঙ্গু, অন্ধ এবং খোঁড়া” – যাদের থেকে আমরা প্রায়শই দুরে থাকি – তারা ভোজ সভায় আমন্ত্রণ পায় I এই ভোজ সভার প্রতি আমন্ত্রণ আরও দুরে যায়, এবং আপনার ও আমার সম্ভাব্য চিন্তার চেয়ে অধিক লোকেদের প্রসারিত করে I ভোজসভার প্রভু লোকেদের সেখানে চান এবং এমনকি তাদের আমন্ত্রণ দেবেন যাদেরকে আমরা নিজেরা আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ দেব না I
আর এই লোকেরা আসে! তাদের ভালোবাসাকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদের কাছে ক্ষেত্র বা বলদের মতন প্রতিযোগিতামূলক আগ্রহ নেই তাই তারা ভোজসভায় আসে I স্বর্গরাজ্য পরিপূর্ণ হয় এবং প্রভুর ইচ্ছা সম্পন্ন হয়!
ভাববাদী ঈসা আল মসীহ (আঃ) আমাদেরকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এই দৃষ্টান্তটি বললেন: “আমি কি ঈশ্বরের রাজের আমন্ত্রণ স্বীকার করব আমি যদি একটি পাই?” অথবা একটি প্রতিযোগিতামূলক আগ্রহ বা ভালবাসা আপনাকে কোনো অজুহাত তৈরী করতে বা আমন্ত্রণটি প্রত্যাখ্যান করত বাধ্য করবে? সত্য হল যে আপনাকে এই রাজ্যের ভোজ সভায় আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে, তবে বাস্তবতাটি হল আমাদের বেশিরভাগ ব্যক্তি নিমন্ত্রণকে এক কারণে বা অন্য কারণে প্রত্যাখ্যান করবে I আমরা কখনও সরাসরিভাবে ‘না’ বলব না তাই আমরা আমাদের প্রত্যাখ্যান গোপন করার জন্য অজুহাত তৈরি করব I গভীরভাবে আমাদের ভেতরে আরও অনান্য ‘প্রেম’ রয়েছে যা আমাদের প্রত্যাখ্যানের মূল I এই দৃষ্টান্তে প্রত্যাখ্যানের মূলটি ছিল অন্য জিনিসের প্রতি ভালবাসা I যারা প্রথমে আমন্ত্রিত হয়েছিল তারা ঈশ্বরের রাজ্যের চেয়ে এই পৃথিবীর জিনিসগুলোকে (‘ক্ষেত্র’, ‘বলদ’ এবং ‘বিবাহ’ দ্বারা উপস্থাপিত) বেশি পচ্ছন্দ করেছিল I
অযৌক্তিক ধর্মীয় ইমামের দৃষ্টান্ত
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বর্গ রাজ্যের চেয়ে এই জগতের জিনিসগুলোকে বেশি ভালবাসে আর তাই আমরা এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করব I আমাদের মধ্যে অন্যরা আমাদের নিজেদের ধার্মিক যোগ্যতার উপরে ভালবাসে বা ভরসা করে I এছাড়াও ভাববাদী ঈসা আল মসীহ (পিবিইউএইচ) একজন ইমামের অনুরূপ এক ধার্মিক নেতাকে একটি উদাহরণস্বরূপ ব্যবহার করে আর একটি কাহিনীতে এই সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন:
9নিজেদের ধার্মিকতার প্রতি যাদের আস্থা ছিল ও অন্যদের যারা হীনদৃষ্টিতে দেখত, যীশু এই রূপক কাহিনিটি তাদের বললেন: 10“দুই ব্যক্তি প্রার্থনার জন্য মন্দিরে গেল; একজন ফরিশী ও অন্যজন কর আদায়কারী। 11ফরিশী দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে প্রার্থনা করল, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমি কোনো দস্যু, দুর্বৃত্ত, ব্যভিচারী, এমনকি, ওই কর আদায়কারী, বা অন্য লোকের মতো নই। 12আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস করি এবং যা আয় করি, তার এক-দশমাংশ দান করি।’
13“কিন্তু কর আদায়কারী দূরে দাঁড়িয়ে রইল। এমনকি, সে স্বর্গের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারল না। সে তার বুক চাপড়ে বলতে লাগল, ‘হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি কৃপা করো।’
14“আমি তোমাদের বলছি, এই ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক গণ্য হয়ে ঘরে ফিরে গেল, কিন্তু অন্যজন নয়। কারণ যে কেউ নিজেকে উন্নত করে, তাকে নত করা হবে, আর যে কেউ নিজেকে নত করে তাকে উন্নত করা হবে।”
লুক ১৮:৯-১৪
এখানে একজন ফারিসীকে (একজন ইমামের মতন একজন ধার্মিক শিক্ষক) তার ধার্মিক প্রচেষ্টা এবং যোগ্যতায় নিখুঁত বলে মনে হয় I এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ছিল তার রোজা এবং যাকাত I কিন্তু এই ইমাম তার নিজের ধার্মিকতার উপরে তার আত্মবিশ্বাস স্থাপন করেছিল I এটি সেইরকম ছিল না যা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এত দীর্ঘ সময় পূর্বে দেখিয়েছিলেন যখন তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিনম্র ভরসার দ্বারা ধার্মিকতা পেলেন I আসলে কর সংগ্রহকারী (সেই সময়ের একজন অনৈতিক পেশা) বিনীতভাবে করুণার জন্য যাচনা করলেন এবং বিশ্বাস করলেন যে তাকে করুণা দেওয়া হয়েছে তিনি বাড়ি চলে গেলেন ‘ন্যায়সঙ্গত’ হয়ে – ঈশ্বরের সাথে সঠিক হয়ে –
যখন ফারিসীটি (ইমাম), যাকে আমরা ‘ঈশ্বরের সাথে সঠিক’ মনে করি তখনও তার বিরদ্ধে পাপ গণনা করা হয়েছে I অতএব ভাববাদী ঈসা আল মসীহ (আঃ) আপনাকে এবং আমাকে বলছেন আমরা কি সত্যই ঈশ্বরের রাজ্যের ইচ্ছা করি, বা এটি অন্যান্য অনেক আগ্রহ সমূহের মধ্যে ঠিক আর একটি আগ্রহ হয় I এছাড়াও তিনি আমাদের বলছেন কিসের উপরে আমরা ভরসা করছি – আমাদের যোগ্যতা বা ঈশ্বরের করুণার উপরে I
এই প্রশ্নগুলো আমাদের সৎভাবে জিজ্ঞাসা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ অন্যথায় আমরা তার পরবর্তী শিক্ষাকে জানতে পারব না – যা আমাদের প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছনতা I