সুরাহ আল-কাহফ (সূরা ১৮ – গুহা) ঘোষণা করে যে যাদের কাছে ‘ধার্মিক কাজ’ আছে তারা স্বর্গ প্রবেশ করবে:
যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের বাগান।
সুরাহ আল-কাহফ ১৮:১০৭
প্রকৃতপক্ষে, সূরা আল জাসিয়া(সুরা ৪৫ – ঘুপসি) পুনরুক্তি করে যে যাদের কাছে ‘ধার্মিক কাজ’ আছে তাদের স্বর্গের করুণার মধ্যে প্রবেশ পাবে I
যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে তাঁর রহমাতের মধ্যে দাখিল করবেন। ওটাই সুস্পষ্ট সাফল্য।
সূরা আল জাসিয়া ৪৫:৩০
এক দিন আকাশে (স্বর্গে) প্রবেশ করতে আপনি কি আশা করেন? স্বর্গে প্রবেশ করতে আপনার এবং আমার জন্য কি দরকার? ঈসা আল মসীহকে একবার হযরত মুসা (আঃ) শরিয়া আইনের ব্যাখ্যায় শিক্ষিত একজন ইহূদি ‘বিষেশজ্ঞর’ দ্বারা এই প্রশ্নটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল I ঈসা আল মসীহ তাকে এক অপ্রত্যাশিত উত্তর দিলেন I নিচে ইঞ্জিলের মধ্যে কথোপকথনটিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে I ঈসার দৃষ্টান্তকে উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে সেই দিনে ইহূদিদের দ্বারা ‘শমরিয়দেরকে’ অবজ্ঞা করা হত পরিবর্তে, শমরিয়রা ইহূদিদের ঘৃণা করত I শমরিয় এবং যিহূদিদের মধ্যে তখনকার দিনের ঘৃণা আজকের দিনের ইস্রায়েলীয়দের এবং পলেস্তিনীয়দের মধ্যে, বা সুন্নি এবং শিয়াদের মধ্যে অনুরূপ হতে পারে I
অনন্ত জীবন এবং উত্তম প্রতিবেশীর দৃষ্টান্ত
25একদিন এক শাস্ত্রবিদ যীশুকে পরীক্ষা করার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, “গুরুমহাশয়, অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?”
26তিনি উত্তর দিলেন, “বিধানশাস্ত্রে কী লেখা আছে? তুমি কি পাঠ করছ?”
27সে উত্তরে বলল, “ ‘তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে’; এবং, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করবে।’”
28যীশু উত্তরে বললেন, “তুমি যথার্থ উত্তর দিয়েছ। তাই করো এবং এতেই তুমি জীবন লাভ করবে।”
29কিন্তু সে নিজের সততা প্রতিপন্ন করতে যীশুকে প্রশ্ন করল, “বেশ, আমার প্রতিবেশী কে?”
30প্রত্যুত্তরে যীশু বললেন, “এক ইহুদি ব্যক্তি জেরুশালেম থেকে যিরীহোতে নেমে যাচ্ছিল। পথে সে দস্যুদের কবলে পড়ল। তারা তার পোশাক খুলে নিয়ে এবং তাকে মেরে আধমরা করে ফেলে রেখে চলে গেল। 31ঘটনাক্রমে একজন যাজক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। লোকটিকে দেখে সে রাস্তার অন্য প্রান্ত দিয়ে চলে গেল। 32সেভাবে একজন লেবীয়ও সেখানে এসে তাকে দেখে অন্য দিক দিয়ে চলে গেল। 33কিন্তু একজন শমরীয় পথ চলতে চলতে, সেই ব্যক্তি যেখানে ছিল, সেখানে এসে পৌঁছাল; তাকে দেখে সে তার প্রতি করুণাবিষ্ট হল। 34সে তার কাছে গিয়ে ক্ষতস্থানে তেল ও দ্রাক্ষারস লাগিয়ে বেঁধে দিল। তারপর সেই ব্যক্তিকে তার নিজের গাধায় চাপিয়ে একটি পান্থশালায় নিয়ে এসে তার সেবাযত্ন করল। 35পরদিন পান্থশালার মালিককে সে দুটি রুপোর মুদ্রা দিল। সে বলল, ‘ওই ব্যক্তির সেবাযত্ন কোরো। এর অতিরিক্ত কিছু ব্যয় হলে, ফেরার পথে আমি পরিশোধ করে দেব।’
36“এই তিনজনের মধ্যে কে দস্যুদের হাতে পড়া ওই লোকটির কাছে প্রতিবেশী হয়ে উঠল? তোমার কী মনে হয়?”
37সেই শাস্ত্রবিদ উত্তর দিল, “লোকটির প্রতি যে করুণা দেখিয়েছিল, সেই।”
যীশু তাকে বললেন, “যাও, ফিরে গিয়ে তুমিও সেরকম করো।”
লুক ১০:২৫-৩৭
যখন ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ উত্তর দিলেন ‘তোমার ঈশ্বরকে প্রেম করবে’ এবং ‘প্রতিবেশীকে নিজের মতন প্রেম করবে’ তখন তিনি মুসা (আঃ) এর শরিয়া আইন থেকে উদ্ধৃত করছিলেন I ঈসা ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি নির্ভুল উত্তর দিয়েছেন তবে তিনি এই প্রশ্নটি উত্থাপন করলেন যে তার উত্তম প্রতিবেশী কে I তাই ঈসা আল মসীহ (আঃ) এই দৃষ্টান্তটি বললেন I
দৃষ্টান্তটির মধ্যে আমরা আশা করি যে ধার্মিক লোকেরা (যাজক এবং লেবীয়) লোকটিকে সাহায্য করবে যাকে প্রহার করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাকে উপেক্ষা করে এবং অসহায় অবস্থায় তাকে ছেড়ে দেয় I তাদের ধর্ম তাদেরকে উত্তম প্রতিবেশীতে পরিণত করে নি I পরিবর্তে, যে ব্যক্তিকে আমরা একদমই আশা করি নি, যাকে আমরা তার শত্রু বলে মনে করি – সে একজন যে প্রহৃত লোকটিকে সাহায্য করে I
ঈসা আল মসীহ আজ্ঞা দেন “যাও এবং অনুরূপ কর” I আমি আপনার সম্বন্ধে জানি না, কিন্তু এই দৃষ্টান্তটির প্রতি আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল আমি অবশ্যই এটিকে ভুল বুঝে থাকব, এবং তারপরে এটিকে উপেক্ষা করতে কেবল আমি প্রলুব্ধ হলাম I
তবে চারিদিকে যে সমস্ত লড়াই, হত্যা, বেদনা এবং দুর্দশা ঘটছে সে সম্পর্কে চিন্তা করুন কারণ প্রচুর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই অজ্ঞাটিকে উপেক্ষা করে I আমরা যদি এই শমরিয়র মতন বাস করতাম তবে আমাদের শহরগুলো লড়াইয়ে ভরে যাওয়ার বদলে শান্তিপূর্ণ হত I এবং এছাড়া আমাদেরও কাছে স্বর্গে প্রবেশ করার একটি নিশ্চয়তা থাকত I এটি যেমন দাঁড়িয়ে আছে, খুব কম লোকেরই স্বর্গে প্রবেশের নিশ্চয়তা রয়েছে – এমনকি যদিও তারা খুব ধার্মিকভাবে জীবন যাপন করে যেমন ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ করেছিলেন যিনি ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে কথা বলছিলেন I
আপনার কাছে কি অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা আছে?
তবে এই ধরণের প্রতিবেশী হওয়া এমন কি অসম্ভব? কিভাবে আমরা এটিকে করতে পারি? আমরা যদি সৎ হই আমাদের স্বীকার করতে হবে যে তার আজ্ঞা অনুসারে একজন প্রতিবেশী হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ I
আর এখানে আমরা আশার একটি ঝলক দেখতে পারি যখন দেখি যে আমরা এটি করতে পারি না আমরা হই ‘আত্মায় দীন’ – যেটিকে ঈসা আল মসীহ (আঃ) আবারও শিক্ষা দিয়েছিলেন যা ‘ঈশ্বরের রাজ্যে’ প্রবেশ করার জন্য দরকার ছিল I
এই দৃষ্টান্তটিকে কেবলমাত্র উপেক্ষা করার বদলে, বা অজুহাত করে সরিয়ে রেখে, আমাদের এটিকে নিজেরা পরীক্ষা করা এবং স্বীকার করা উচিত – এটি অত্যন্ত কঠিন I তখন, আমাদের অসহায়তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারি I পাহাড়ের উপদেশের মধ্যে যেমনভাবে ঈসা আল মসীহ (আঃ) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন I
7“চাও, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ করো, তোমরা পাবে; কড়া নাড়ো, তোমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হবে। 8কারণ যে চায়, সে গ্রহণ করে; যে খোঁজ করে, সে সন্ধান পায়; আর যে কড়া নাড়ে, তার জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হয়।
9“তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তার ছেলে রুটি চাইলে, তাকে পাথর দেবে? 10অথবা, মাছ চাইলে তাকে সাপ দেবে? 11তোমরা মন্দ প্রকৃতির হয়েও যদি নিজেদের সন্তানদের ভালো ভালো উপহার দিতে জানো, তাহলে যারা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায়, তাদের তিনি আরও কত না উৎকৃষ্ট সব উপহার নিশ্চিতরূপে দান করবেন?
মথি ৭:৭-১১
অতএব আমাদের কাছে মসীহর অনুমতি আছে সাহায্য চাওয়ার – আর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে I হয়ত আল্লাহর কাছে এর মতন করে এমনকিছু প্রার্থনা করা:
স্বর্গস্থ পিতা I আপনি ভাববাদীদের পাঠিয়েছেন আমাদের সোজাভাবে শিক্ষা দিতে I ঈসা আল মসীহ (পিবিইউএইচ) শিখিয়েছেন যে আমার প্রেম করা এবং এমনকি তাদেরকেও সাহায্য করা দরকার যারা নিজেদেরকে আমার শত্রু বলে বিবেচনা করে, এবং এটিকে করা ছাড়া আমি অনন্ত জীবন পেতে পারি না I তবে আমি দেখি যে আমার পক্ষে এটি করা অসম্ভব I দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকে পরিবর্তন করুন যাতে করে আমি এই পথটিকে অনুসরণ করতে পারি এবং অনন্ত জীবন পেতে পারি I আমার প্রতি করুনাময় হোন যে একজন পাপী I
মসীহর উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি ঈশ্বর
(নির্দিষ্ট শব্দগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় – এটি হ’ল যে আমরা আমাদের প্রয়োজন স্বীকার করি এবং দয়ার জন্য যাচনা করি)
এছাড়া ইঞ্জিল লিপিবদ্ধ করে যখন একজন শমরিয়র সঙ্গে ঈসা আল মসীহর দেখা হয় I একজন ভাববাদী কিভাবে একজন ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন যাকে তার লোকেদের (ইহূদিরা) দ্বারা এক ঘৃণিত শত্রু বলে বিবেচনা করা হত I শমরিয়টির সঙ্গে কি ঘটেছিল, এবং আমাদের যে ধরণের প্রতিবেশী হওয়ার দরকার তা হতে সাহায্য করতে আমরা কি শিখতে পারি, পরবর্তীতে আমরা দেখব I