সুরাহ ফুসসিলাত (সুরা ৪১ – বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়) বিচারের দিনের দিকে দেখে যখন লোকেদেরকে এমনকি তাদের নিজের ত্বককেও তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষীর জন্য সারিবদ্ধভাবে পদ যাত্রা করানো হবে I তাদেরকে বলা হবে:
তোমাদের এই (ভুল) ধারণাই- যা তোমরা তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে পোষণ করতে- তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হয়ে গেছ।
সুরাহ ফুসসিলাত ৪১:২৩
তাদের চূড়ান্ত রায় হবে
আমি তাদেরকে প্রাণের বন্ধু জুটিয়ে দিয়েছিলাম, যারা তাদেরকে তাদের সামনের আর পিছনের প্রত্যেকটি জিনিসকে চাকচিক্যময় করে দেখাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের উপরও তেমনি ‘আযাবের ফয়সালা কার্যকর হল, যা তাদের পূর্ববর্তী জ্বিন ও মানব দলের উপর কার্যকর হয়েছিল। বাস্তবিকই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল।
ফুসসিলাত ৪১:২৫
এটি একটি শক্তিশালী অনুস্মারক যে আমাদের মধ্যে অনেকেরই ‘সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে’ I এটি একটি সমস্যার সৃষ্টি করে যেমনভাবে আল-মু’মিনূম (সুরা ২৩– বিশ্বাসীগণ) ব্যাখ্যা করেছে
যাদের (সৎ কাজের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই ওরা যারা নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, জাহান্নামে তারা চিরস্থায়ী হবে।
সুরা আল-মু’মিনূম ২৩:১০২-১০৩
যাদের ভাল কাজের পাল্লা ভারী তারা পরিত্রাণের একটি আশা রাখে, কিন্তু তাদের জন্য যাদের পাল্লা হালকা – তারা কোনো আশা ছাড়াই ‘হারিয়ে যায়’ I এবং সুরা আল-মু’মিনূম বলে তারা বিনাশের মধ্যে হারিয়ে যায় I এইরূপে যারা যারা ধার্মিক এবং শুদ্ধ (মুক্তির প্রত্যাশায়) এবং যারা অশুচি সেই লোকেদের মধ্যে একটি বিভাজন হয় I ঈসা আল মসীহ নির্দিষ্টভাবে অশুচিকে সাহায্য করতে এসেছিলেন – সুরা ফুসসিলাত এবং সুরাহ-আল মু’মিনূমের হুঁশিয়ারি অনুসারে যারা হারিয়ে গেছে তারা নরকের জন্য নিরূপিত হয়েছে I
প্রায়শই, ধার্মিক লোকেরা তাদের থেকে আলাদা থাকবে যারা ধার্মিক নয় যাতে করে তারা অশুচি না হয় I নবী ঈসা আল মসীহর (আঃ) সময়ে শারিয়া আইনের শিক্ষকদের সম্পর্কে এটি সত্য ছিল I তারা অশুচি থেকে নিজদেরকে আলাদা করে রাখতেন যাতে করে তারা খাঁটি থাকতে পারেন I তবে ঈসা আল মসীহ (আঃ) শিখিয়েছিলেন যে আমাদের শুদ্ধতা এবং পরিচ্ছনতা আমাদের হৃদয়ের একটি সর্বপ্রথম বিষয় I এইরূপে তিনি তাদের সাথে হবেন যারা বিধিগতভাবে পরিচ্ছন্ন নয় I এখানে ইঞ্জিল পাপীদের সাথে তাঁর যোগসূত্র এবং শরিয়া আইন সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া উভয়কেই লিপিবদ্ধ করেছে I
1আর কর আদায়কারী ও পাপীরা, তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর চারপাশে সমবেত হয়েছিল। 2কিন্তু ফরিশী ও শাস্ত্রবিদরা ফিসফিস করে বলতে লাগল, “এই মানুষটি পাপীদের গ্রহণ করে, তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে।”
লূক 15
তাহলে ঈসা আল মসীহ (আঃ) কেন স্বাগত জানন এবং পাপীদের সঙ্গে ভোজন করেন? তিনি কি পাপ উপভোগ করেন? নবী তাঁর সমালোচকদের তিনটি দৃষ্টান্ত বা গল্প বলার দ্বারা জবাব দেন I
হারানো মেষের দৃষ্টান্ত
3যীশু তখন তাদের এই রূপকটি বললেন, 4“মনে করো, তোমাদের কারও একশোটি মেষ আছে। তার মধ্যে একটি হারিয়ে গেল। সে কি নিরানব্বইটি মেষকে মাঠে রেখে হারানো মেষটি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তার সন্ধান করবে না? 5সেটি খুঁজে পেলে সে সানন্দে তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। 6পরে বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে সে বলবে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ করো; আমি আমার হারানো মেষটি খুঁজে পেয়েছি।’ 7আমি তোমাদের বলছি, একইভাবে নিরানব্বইজন ধার্মিক ব্যক্তি, যাদের মন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই, তাদের চেয়ে একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে স্বর্গে অনেক বেশি আনন্দ হবে।
লূক 15
এই গল্পের মধ্যে নবী (আঃ) মেষের সংগে আমাদের তুলনা করেছেন যখন তিনি একজন মেষেদের পালক হন I যে কোনো মেষপালকের একটি হারানো মেষকে খুঁজতে যাওয়ার মতন, তিনি স্বয়ং হারানো লোকেদের খুঁজে পেতে বাইরে বেড়িয়েছেন I আপনি হয়ত কোনো পাপের মধ্যে ধৃত হয়েছেন – এমনকি গুপ্ত একটি যা আপনার পরিবারের কেউ জানে না I বা হয়ত আপনার জীবন, এর সমস্ত সমস্যাগুলোর সাথে এতটাই বিভ্রান্তিকর যে এটি আপনাকে হারানো অনুভব করতে ছেড়ে দিচ্ছে I এই গল্পটি আশা দেয় কারণ আপনি জানতে পারেন যে নবী (আঃ) আপনাকে খুঁজে পেতে এবং সাহায্য করতে চাইছেন I ক্ষতি আপনাকে ধ্বংস করার পূর্বেই তিনি আপনাকে উদ্ধার করতে চান I .
তারপরে তিনি দ্বিতীয় গল্পটি বললেন I
হারানো মুদ্রার দৃষ্টান্ত
8“আবার মনে করো, কোনো স্ত্রীলোকের দশটি রুপোর মুদ্রা আছে, কিন্তু তার একটি হারিয়ে গেল। সেটাকে না পাওয়া পর্যন্ত, সে কি প্রদীপ জ্বেলে, ঘর ঝাঁট দিয়ে, তন্নতন্ন করে খুঁজবে না? 9মুদ্রাটি খুঁজে পেলে, সে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের একসঙ্গে ডেকে বলবে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ করো, আমার হারিয়ে যাওয়া মুদ্রাটি আমি খুঁজে পেয়েছি।’ 10একইভাবে, আমি তোমাদের বলছি, একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”
লূক 15
এই গল্পের মধ্যে আমরা মূল্যবান তবে হারানো মুদ্রা এবং তিনি একজন যিনি হারানো মুদ্রার অন্বেষণ করছেন I বিড়ম্বনা যে যদিও মুদ্রাটি বাড়ির কোথাও হারিয়ে গেছে, এ স্বয়ং ‘জানে’ না যে এ হারিয়ে গেছে I এ হারানোকে অনুভব করে না I এ হ’ল মহিলাটি যে হারানোর বোধকে অনুভব করে এবং তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাড়িতে ঝাড়ু দেয় নিচে উপরে সর্বত্র সমস্তকিছু খোঁজে, ততক্ষণ সন্তুষ্ট হয় না যতক্ষণ না সে মূল্যবান মুদ্রাটিকে খুঁজে পায় I আপনি হয়ত ‘হারানো’ অনুভব করেন না I কিন্তু সত্য হ’ল যে আমাদের সকলের অনুতাপ করা প্রয়োজন, এবং যদি আপনি না করে থাকেন তবে আপনি হারিয়ে গেছেন, আপনি এটি অনুভব করেন কিম্বা না করেন I নবীর দৃষ্টিতে মূল্যবান কিন্তু হারানো এবং তিনি হারানোকে অনুভব করেন বলে অনুসন্ধান করেন এবং আপনার কাছে অনুতাপকে পরিষ্কার করতে কার্য করেন I
তাঁর তৃতীয় গল্পটি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল I
হারানো পুত্রের দৃষ্টান্ত
11যীশু আরও বললেন, “এক ব্যক্তির দুই ছেলে ছিল। 12ছোটো পুত্র তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, সম্পত্তির যে অংশ আমার, তা আমাকে দিয়ে দাও।’ তাই তিনি ছেলেদের মধ্যে তাঁর সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন।
13“অল্পদিন পরেই, ছোটো ছেলে তার সবকিছু নিয়ে এক দূরবর্তী দেশের উদ্দেশে যাত্রা করল। সেখানে সে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে, তার নিজস্ব সম্পত্তি অপচয় করল। 14তার সর্বস্ব শেষ হলে পর, সেই দেশের সর্বত্র ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল; তাতে সে অত্যন্ত অভাবের মধ্যে পড়ল। 15তখন সে গিয়ে সেই দেশের এক ব্যক্তির কাছে তার অধীনে কাজে নিযুক্ত হল। সে তাকে শূকর চরানোর কাজে মাঠে পাঠিয়ে দিল। 16সে এতটাই ক্ষুধার্ত হয়ে উঠল যে শূকরেরা যে শুঁটি খেত তা খেয়েই পেট ভরানো তার কাছে ভালো মনে হল, কিন্তু কেউ তাকে কিছুই খেতে দিত না।
17“কিন্তু যখন তার চেতনার উদয় হল, সে মনে মনে বলল, ‘আমার বাবার কত মজুরই তো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার পাচ্ছে, আর আমি এখানে অনাহারে মৃত্যুর মুখে পড়ে আছি! 18আমি বাড়ি ফিরে আমার বাবার কাছে যাব; তাঁকে বলব, “বাবা, আমি স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি, 19তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেওয়ার যোগ্যতা আর আমার নেই; আমাকে তোমার এক মজুরের মতো করে নাও।” ’ 20তাই সে উঠে তার বাবার কাছে ফিরে গেল।
“সে তখনও অনেক দূরে, তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন। ছেলের জন্য তাঁর অন্তর করুণায় ভরে উঠল। তিনি দৌড়ে তাঁর ছেলের কাছে গেলেন, তার গলা জড়িয়ে ধরলেন ও তাকে চুম্বন করলেন।
21“সেই ছেলে তাঁকে বলল, ‘বাবা, আমি স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেওয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নেই।’
22“কিন্তু তার বাবা তাঁর দাসদের বললেন, ‘শীঘ্র, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পোশাক এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর আঙুলে আংটি পরিয়ে দাও, পায়ে চটিজুতো দাও। 23আর ভোজের জন্য একটি হৃষ্টপুষ্ট বাছুর এনে মারো। এসো আমরা ভোজ ও আনন্দ উৎসবের আয়োজন করি। 24কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু এখন সে আবার বেঁচে উঠেছে। সে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।’ তাই তারা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠল।
25“এদিকে বড়ো ছেলেটি মাঠে ছিল। সে বাড়ির কাছে এসে নাচ-গানের শব্দ শুনতে পেল। 26তখন সে একজন দাসকে ডেকে কি হচ্ছে জানতে চাইল? 27সে উত্তর দিল, ‘আপনার ভাই ফিরে এসেছে এবং আপনার বাবা তাকে নিরাপদে, সুস্থ শরীরে ফিরে পেয়েছেন বলে একটি হৃষ্টপুষ্ট বাছুর মেরেছেন।’
28“বড়ো ছেলে খুব রেগে গেল ও ভিতরে প্রবেশ করতে রাজি হল না। তাই তার বাবা বাইরে গিয়ে তাকে অনুনয়-বিনয় করলেন। 29কিন্তু সে তার বাবাকে উত্তর দিল, ‘দেখুন, এত বছর ধরে আমি আপনার সেবা করছি, কখনও আপনার আদেশের অবাধ্য হইনি। তবুও আমার বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উৎসব করার জন্য আপনি আমাকে কখনও একটি ছাগলছানাও দেননি। 30কিন্তু আপনার এই ছেলে, যে বেশ্যাদের পিছনে আপনার সম্পত্তি উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন বাড়ি ফিরে এলে, আপনি তারই জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটি মারলেন!’
31“বাবা বললেন, ‘ছেলে আমার, তুমি সবসময়ই আমার সঙ্গে আছ। আর আমার যা কিছু আছে, সবই তো তোমার। 32কিন্তু তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল, এখন সে আবার বেঁচে উঠেছে; সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন খুঁজে পাওয়া গেছে। তাই আমাদের উচিত আনন্দ উৎসব করা ও খুশি হওয়া।’ ”
লূক 15
এই গল্পের মধ্যে আমরা হয় জৈষ্ঠ, ধার্মিক পুত্র, বা কনিষ্ঠ পত্র যে দুরে চলে যায় I যদিও জৈষ্ঠ পুত্র সমস্ত ধার্মিক বিধিগুলোকে পালন করেছে সে কখনও পিতার প্রেমময় হৃদয়কে বুঝতে পারে নি I কনিষ্ঠ পুত্রটি ভাবল বাড়ি ছেড়ে যাওয়ায় সে স্বাধীনতা লাভ করছে কিন্তু নিজেকে অনাহার এবং অপমানের দ্বারা পরিবেষ্টিত দেখল I তাপরে সে ‘তার জ্ঞানে ফিরে এল’ এবং উপলব্ধি করল সে তার পিতার কাছে ফিরে যেতে পারে I ফিরে যাওয়া প্রকাশ করে যে প্রথম স্থানে তার ছেড়ে যাওয়া অন্যায় ছিল, এবং এটিকে স্বীকার করতে নম্রতার প্রয়োজন হত I এটি আমাদের কাছে দেওয়া একটি চিত্র আমাদের বুঝতে সাহায্য করে ‘অনুতাপ’ বলতে আসলে কি বোঝায় যাকে এত সাহসিকতার সঙ্গে নবী ইয়াহিয়া (আঃ) শিক্ষা দিয়েছিলেন I
যখন সে তার অহংকার গলাধকরণ করল এবং তার পিতার কাছে ফিরে এল সে যে ভালবাসা আশা করতে পেরেছিল তার থেকে অনেক বেশি পাওয়া গেল I পাদুকা, বস্ত্র, আংটি, ভোজ, আশির্বাদ, স্বীকৃতি – এই সমস্ত ভালবাসার কথা বলে I এই গল্পটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে আল্লাহ আমাদের তত বেশি ভালবাসেন, আমাদেরকে চাইছেন তাঁর কাছে ফিরে যাই I এটির জন্য প্রয়োজন আমরা ‘অনুতাপ’ করি তবে আমরা যখন করব আমরা তাঁকে দেখব আমাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত I এটাই যা নবী ঈসা আল মসীহ (আঃ) চান আমরা শিখি I আপনি কি সমর্পণ করতে এবং এই প্রকারের প্রেমকে স্বীকার করতে পারবেন?